“এক্সকেভেটর দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে ফেলেছে।”
Published : 12 Mar 2025, 01:39 PM
ঢাকার সাভারের কয়েকটি স্থানে ফসলি জমির মাটি, ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ‘মাটি খেকোরা’ পালিয়ে যায়। পরে মাটি কাটার একটি ভেকু মেশিন জব্দ ও তিনটি ভেকু মেশিন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের মধুমতি মডেল টাউনের শেষ প্রান্তে বড়চক এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) মো. আবুবকর সরকার।
অভিযানের খবর জানতে পেরে মাটি খেকোদের পাশাপাশি মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ডাম্প ট্রাকের চালকরাও সরে পড়ে। তবে মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত ভেকু মেশিনগুলো অভিযানস্থলে পাওয়া যায়। ‘ভূমিদস্যু’ চক্রটি অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি ৩০ থেকে ৩৫ ফুট গভীর করে কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছিল বলে জানা গেছে।
ইউএনও আবুবকর সরকার বলেন, “ফসলি জমি রক্ষা ও ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ এবং অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা চারটি মাটি কাটার ভেকু মেশিন পেয়েছি। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ‘মাটি খেকোরা’ পালিয়ে যায়।
“তবে আমরা তিনটি ভেকু মেশিন গুঁড়িয়ে দিয়েছি আর একটি জব্দ করেছি।”
এর আগে শনিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, ভাকুর্তা ইউনিয়নের মধুমতি মডেল টাউনের শেষ প্রান্তে বকচর এলাকায় চলছে মাটি কাটার ধুম। এক্সকেভেটর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। দিনের পর দিন মাটি কেটে নেওয়ায় গভীর খাদে পরিণত হয়েছে এলাকার ফসলি জমি।
স্থানীয়দের দাবি, গত এক মাস ধরে এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বড় বড় ডাম্প ট্রাকে করে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। দৈনিক শত শত ট্রাক মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। গত এক মাসে প্রায় ২০ কোটি টাকার মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, অবৈধভাবে মাটি কাটার জন্য স্থানীয় পুলিশ ও কিছু সাংবাদিকদের ‘ম্যানেজ’ করে রাখা হয়েছে। যার কারণে সাংবাদিকরাও সংবাদ প্রচার করে না।
ভাকুর্তা ইউনিয়নের বড়চক এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলছিলেন, “আমি তিন বিঘা জমিতে ধনেপাতা চাষ করেছিলাম। কিন্তু এক্সকেভেটর দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে ফেলেছে। ফলে পাশের আমাদের জমি হুমকির মুখে পড়েছে; ফাটল ধরেছে ক্ষেতে।
“এ অবস্থায় যেকোনো সময় ক্ষেতে বড় একটি অংশ ধসে পড়তে পারে। এই সমস্যা আশপাশের অনেকের জমিতেই হয়েছে।”
ওই এলাকার আরেক কৃষক মো. অন্তর বলেন, “এক সময় জমিগুলোতে তিন ধরনের ফসল ফলানো হতো। গভীর ভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমির মাটি এতটাই গভীর করে কেটে নিয়ে যায়, দেখলে কৃষি জমিকে যে কেউ পুকুর বলতে হবে।
“প্রতিটি জমি থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে গেছে। এই মাটি বিক্রির চক্রটি ‘প্রভাবশালী’ হওয়ায় ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।”
হযরত আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দিন-রাত মাটির বড় বড় ট্রাক চলার কারণে ধুলাবালিতে এলাকায় থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। আশেপাশের জমির ফসল ধুলায় ঢেকে গেছে। ফলে গাজর, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ধনেপাতা ও ফুলকপির ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে আশপাশের ফসলি ক্ষেত।”
“কত সাংবাদিক আসলো-গেল, সাক্ষাৎকার নিল। কিন্তু পরে প্রশাসন ও মাটি বিক্রেতাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে চলে যায়। আমাদের কষ্টের কথা আর প্রচার হয় না।”
ফসলি জমির মাটি বিক্রি চক্রের সদস্য আবু সাইদের সঙ্গে কথা বলেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “সবাইতো এভাবেই ব্যবসা করে। অনুমতি নিয়ে কে মাটি কাটে?। প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই মাটির ব্যবসা করছি। আপনাদের কি করতে হবে বলেন!”
প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ব্যাবসার দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইউএনও আবুবকর সরকার বলেন, “এখানে যে মাটি কাটা হচ্ছে, সেটা তো জানতাই না! সাংবাদিকদের কাছে খবর পেয়ে অভিযানে এসেছি। অভিযানের সময় পরিবেশের ক্ষতি করে এমন চারটি টায়ার পুড়িয়ে ফার্নিস তেল তৈরির অবৈধ কারখানায়ও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”