গত ৪ অগাস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বগুড়া শহরের সাতমাথায় সেলিম হোসেনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
Published : 16 Aug 2024, 02:43 PM
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষক সেলিম হোসেনের নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে নিহত সেলিম হোসেনের বাবা সেকেন্দার আলী বগুড়া সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ।
সেলিম হোসেন (৩৫) বগুড়ার শিবগঞ্জের পীরব ইউনিয়নের পালিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা এবং কাহালু উপজেলার মুরইল লাইট হাউজ স্কুলের সহকারি শিক্ষক ছিলেন।
গত ৪ অগাস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শহরের সাতমাথায় সেলিম হোসেনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার সহকর্মীরা সেসময় অভিযোগ করেছিলেন, আওয়ামী-যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে করা হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের দুজন সাবেক সংসদ সদস্য, পাঁচজন উপজেলা চেয়ারম্যান, দুই মেয়র, বগুড়া পৌরসভার আট কাউন্সিলর, ১০জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ২৫ জনপ্রতিনিধিসহ মোট ৯৯জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৩৫০ জনকে।
উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম, সাগর কুমার রায়, এ কে এম আসাদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হাসান।
আসামি করা হয়েছে- বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা, সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক দুই সভাপতি আল রাজি জুয়েল ও নাঈমুর রাজ্জাক, সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক মাশরাফি হিরো ও অসীম কুমার রায়কে।
এছাড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ, বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান, চেম্বারের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ানকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ৪ আগস্ট বেলা ৩টার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথায় স্টেশন সড়কে আইএফআইসি ব্যাংকের সামনে আওয়ামী লীগের সাবেক ওই দুই সংসদ সদস্যসহ সাত নেতার নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
এ সময় তারা হাতবোমা ও পেট্রোল বোমা হামলা চালান। হামলায় শিক্ষক সেলিম হোসেন রক্তাক্ত হন। পরে বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর আবদুল মতিন সরকার ও আমিনুল ইসলাম রামদা দিয়ে কুপিয়ে এবং কাউন্সিলর আরিফুর রহমান হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে তাকে জখম করেন। পরে অন্য হামলাকারীরা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, শিক্ষক সেলিম হোসেনকে হত্যা মামলা ছাড়াও শ্রমিক দল অফিস পোড়ানোর ঘটনায়ও মামলা করা হয়েছে।
ওই মামলায় শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম বাদী হয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটনকে প্রধান আসামি করে মোট ১৪১জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানান ওসি।
প্রবল গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ষষ্ঠ মামলা এটি। এর আগে গত তিন দিনে পাঁচটি মামলা হয়, যার মধ্যে চারটি হত্যা মামলা, অন্যটি দায়ের হয়েছে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে। আগের পাঁচটি মামলাই হয়েছে ঢাকায়।
এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।