দিনভর ‘টেনশনের’ পর বিকালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমার ময়দান জেলা প্রশাসনের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করেছে মাওলানা সাদপন্থিরা।
এর আগে মাঠে থাকা মালপত্র গোছাতে ময়দানের প্রবেশ করতে চেয়েও ব্যর্থ হন ইজতেমার প্রথম পর্বের আয়োজক মাওলানা জুবায়েরপন্থিরা। তারা যাতে মাঠে প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য ময়দানের ফটক আটকে পাহারা বসিয়ে ছিলেন দ্বিতীয় পর্বের আয়োজক মাওলানা সা’দের অনুসারীরা।
পরে বিকাল সোয়া ৫টায় তারা সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির কাছে মাঠ বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মো. মাহবুব উজ্জামান বলেন, “নির্দিষ্ট সময়েই সা’দপন্থিরা প্রশাসনের কাছে মাঠ হস্তান্তর করেছেন। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই জোবায়েরপন্থি অনুসারিরা মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করলে সাদপন্থিরা তাদের ঢুকতে দেয়নি। পরে সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।”
“এ নিয়ে নানা গুজব ও টেনশনের খবর ছড়লেও কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। ময়দান হস্তান্তরের সব প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।”
এসময় জেলা প্রশাসক ছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর মহানগর পুলিশ, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মুরুব্বি ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মাওলানা সা’দপন্থিদের ইজতেমা শুক্রবার শুরু হয়ে রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। বুধবার বিকালের মধ্যে তাদের মাঠ ছাড়ার কথা। এর মধ্যে বুধবার সকালে জুবায়েরপন্থিরা মালামাল গুছাতে মাঠে প্রবেশ করতে চাইলে সা’দপন্থিরা তাদের বাধা দেন। তারা ময়দানে প্রবেশের ফটক আটকে সেখানে লাঠি নিয়ে পাহারা বসায়।
এতে খানিকটা উত্তেজনা ছড়ায় ময়দান এলাকায়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জোবায়েরপন্থি ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর বলেন, “ইজতেমা নিয়ে শুরুতেই মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও উভয় পক্ষের মুরব্বিদের মধ্যে ময়দান হস্তান্তর ও সেখানে থাকা মালাপত্র কারা কিভাবে গুছাবে তা নিয়ে দিক-নির্দেশনা তথা পরামর্শ হয়েছিল।”
“সেই অনুযায়ী ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার একদিন পর ১৭ জানুয়ারি সকাল ১১টার দিকে আমরা ময়দান হস্তান্তর করেছি জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে। পরে ওইদিন দুপুরে প্রশাসন দ্বিতীয় পর্বের আয়োজক সা’দপন্থিদের কাছে ময়দান ও মালপত্র হস্তান্তর করেছে।”
জোবায়েরপন্থি এই মুরুব্বি বলেন, “আবার দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শেষ হওয়ার পর ময়দানের মাল-সামানা খুলে তা গুদামে গুছিয়ে রাখারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাদের। কিন্তু তারা আমাদের ঢুকতে দেয়নি।“
সা’দপন্থি তাবলিগের কাকরাইলের সুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফ বলেন, “বিকেল ৫টায় ইজতেমা ময়দান ছাড়ার পূর্ব সিদ্ধান্ত হলেও জোবায়েরপন্থিরা দুপুরের আগেই মাঠে ঢুকতে চায়। তখন আমাদের লোকজন তাদের বারণ করে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশকে খবর দেয়। নির্ধারিত সময়ের আগ পর্যন্ত ময়দানের ভেতরে তাদের প্রবেশের পথ আটকে দেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিকালে প্রশাসনের কাছে ইজতেমা মাঠ হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে আর কোনো গোলযোগ বা বিশৃঙ্খলা হয়নি।”
আগে এক মঞ্চ থেকেই একবারই বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হতো। কিন্তু মাওলানা জোবায়ের এবং মাওলানা সা’দ পক্ষের অনুসারীরা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেয়।
করোনাভাইরাসের প্রকোপের আগে দুই বছর দুই ভাগে বিশ্ব ইজতেমা করেছে দুই পক্ষ। মাঝখানে মহামারীর কারণে দুই বছর ইজতেমার কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
এবার মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা প্রথম পর্বে ১৩-১৫ জানুয়ারি ইজতেমা পরিচালনা করেছেন। মাওলানা সা’দ পক্ষের অনুসারীরা ২০-২২ জানুয়ারি ইজতেমা পরিচালনা করেন।
আরও পড়ুন: