ওসি আরও বলেন, “হতাহতরা রাতে কেন নকলায় গিয়েছিলেন সে বিষয়টি আহতদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জানা সম্ভব হয়নি।”
Published : 03 Feb 2025, 10:02 PM
শেরপুরের নকলায় গরুচোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দুইজনকে। গুরুতর আহত হয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও চারজন।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ নকলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আব্দুল করিম।
নিহতরা হলেন, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের গোমড়া এলাকার মৃত মইজ উদ্দিনের ছেলে মুসলিম উদ্দিন (৪৫) এবং নূর মোহাম্মদের ছেলে আমির হোসেন (৩০)।
আহতরা হলেন, একই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে আয়নাল হক (৩৪), মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে আজি রহমান (১৯), সুরুজ মিয়ার ছেলে রাজু মিয়া (২৫) ও সন্ধ্যাকুড়া গ্রামের মো. শাহজাদার ছেলে মো. সাদ্দাম (৩০)।
স্থানীয়দের বরাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, রাতে রাস্তার পাশে ওই ছয়জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা ‘গরু চোর’ বলে চিৎকার শুরু করেন। এতে কয়েকশ লোক জড়ো হয়ে তাদেরকে গণপিটুনি দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ছয়জনকে উদ্ধার করে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মুসলিম উদ্দিন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল হাসান বলেন, রোববার রাতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত নিয়ে ছয় জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। পরে রাত পৌনে ১টার দিকে মুসলিম উদ্দিন নামে একজন মারা যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নকলা থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকাল ৫টার দিকে আমির হোসেন মারা যান। সেখানেই তার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এছাড়া মুসলিম উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, “হতাহতরা রাতে কেন নকলায় গিয়েছিলেন সে বিষয়টি আহতদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জানা সম্ভব হয়নি। তদন্তের পর পুরো বিষয়টি জানা যাবে ।”
প্রত্যক্ষদর্শী দক্ষিণ নকলা এলাকার আসবাবপত্র ও কাঠ ব্যবসায়ী নাজমুল হক নওফেল জানান, ঘটনাস্থলে মানুষের হৈচৈ শুনে রোববার রাত ১১টার দিকে সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখতে পাই গরু চোর সন্দেহে ৬ জনকে গণপিটুনি দিয়ে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে। কয়েকশ মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিল। মাটিতে ফেলে রাখা অবস্থাতেও ৬ জনকে থেমে থেমে মারপিট করা হচ্ছিল।
“পরে পুলিশ এবং আমরা কয়েকজন ঘটনাস্থল থেকে বিক্ষুব্ধ মানুষের রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে অতিকষ্টে আহত ওই ৬ ব্যক্তির মধ্যে ২ জনকে ব্যাটারিচালিত রিকশা ভ্যানে এবং বাকি ৪ জনকে একটি অটোরিকশায় করে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই এবং ভর্তি করি। ”
নওফেল আরও জানান, “ঘটনাস্থল দক্ষিণ নকলার কাছেই প্রায় এক সপ্তাহ আগে শফিকুল নামে এক ব্যক্তির তিনটি গরু চুরি হয়। ধারনা করা হচ্ছে, এ ঘটনার পর রোববার রাতে অপরিচিত মানুষ দেখতে পেয়ে সন্দেহ করে বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।”
এদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান জানান খবর পাওয়ার পর সোমবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন।
তিনি বলেন, বৈঠকে নকলায় গণপিটুনির শিকার ওই ৬ জন চোর না, তবে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত বলে তারা জানতে পেরেছেন। রোববার রাতে তারা ঝিনাইগাতী থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে তিনআনী ও কোয়ারি রোড হয়ে শেরপুরে যাওয়ার সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিকল্প পথে নকলায় গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
রোববার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম। এ ঘটনায় নকলা থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান নকলা থানার ওসি হাবিবুর রহমান।