শুধু মেহেরপুরে জন্য বিশেষ প্রজ্ঞাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মুজিবনগর দিবসকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
Published : 17 Apr 2023, 12:04 AM
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ১৭ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান মুজিবনগর) বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। আর সেই ইতিহাসকে জীবন্ত করতে নির্মাণ করা হয়েছে শত শত ভাস্কর্য ও ম্যুরাল। যা দিয়ে পুরো মুক্তিযুদ্ধ যে কারো চোখের সামনে ধরা দেয়।
স্বাধীনতার ৫২ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের তীর্থস্থান মুজিবনগর তার কাঙ্ক্ষিত রূপ-মর্যাদা পায়নি।
গত ১৫ বছর ধরে সরকার মুজিবনগরকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেখানে নতুন করে কোনো সংস্কারের কাজ হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২৫ বছর আগে ৬০ একর জমির উপর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপনা, ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়। ২০০১ সালে শেষ হওয়া এই কাজগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও উদ্বোধন হয়নি।
অবহেলা-অযত্ন ও জনবল সংকটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই শত শত ভাস্কর্য ও ম্যুরাল রোদ-বৃষ্টিতে বিবর্ণ হয়ে গেছে। আবার অনেক ভাস্কর্যে দেখা দিয়েছে ফাটল।
শুধুমাত্র মুজিবনগরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য সমস্ত ঘটনাবলীর ইতিহাস ভাস্কর্য ও ম্যুরাল করে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল স্মৃতি মানচিত্র ও কমপ্লেক্স।
শপিংমল ভবন নির্মাণের ২০ বছর পরও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। দুই কোটি টাকা ব্যয়ের গোপালবাগান এখন অনেকটা বিরাণভূমি। এখন পুরনো স্থাপনার অনেককিছুই ভেঙে আবার নতুন করে করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
লোকবল না থাকায় অরক্ষিত মুজিবনগরের শতবর্ষী আম্রকানন শুকিয়ে মরতে বসেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সিমেন্টে তৈরি মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যগুলোতে চিড় ধরেছে। ফাটল ধরেছে স্মৃতিসৌধসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মানচিত্র ভবনের চর্তুদিকে।
তার পরও দর্শনার্থীরা স্বাধীনতার সূতিকাগার ঐতিহাসিক এই স্থানটি দেখতে প্রতিদিন মুজিবনগর ভীড় করেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, সারাদেশে মুজিবনগর দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন হবে। শুধুমাত্র মেহেরপুরে জন্য বিশেষ প্রজ্ঞাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং মেহেরপুর জেলা প্রশাসন আয়োজনে পালন করা হবে মুজিবনগর দিবস।
১৭ এপ্রিল ভোরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রের পক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
পরে মুজিবনগরে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সেখানে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
এ উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবি।
জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভুরাম পাল বলেন, “মুজিবনগরে ১১টি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নতুন করে বিভিন্ন কাজ শুরু হবে। মূলত মুক্তিযুদ্ধকে চিরঅম্লান ও জীবন্ত করে তুলে ধরতেই মুজিবনগরকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র করা হবে। সে ক্ষেত্রে পুরনো অনেক স্থাপনা তুলে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হবে। সাদা সিমেন্টে তৈরি পুরনো ভাস্কর্যগুলো ভেঙে নতুন করে ধাতব পদার্থে আরও বড় আকারের দামি ও টেকসই ভাস্কর্য করা হবে।
“এ ছাড়া মুজিবনগরকে সৌন্দর্য্যমণ্ডিত করতে আর্ন্তজাতিক মানের শব্দ, আলো, ফোয়ারা, লেক, টাওয়ার, নিরাপত্তা, ভিআইপি গেস্ট হাউস, পার্ক তৈরি করা হবে। দ্রুত কাজ শুরু করতে এরই মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের দুই দফা বৈঠকও শেষ হয়েছে। নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। দ্রুতই দরপত্র হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন এই কাজ শুরু হলে বদলে যাবে মুজিবনগর। তখন দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জ্ঞান আহরণ ও গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হবে মুজিবনগর।”
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আজিজুল ইসলাম বলেন, “ঐতিহাসিক মুজিবনগরের গুরুত্বকে তুলে ধরতে সরকার এর মধ্যে মুজিবনগর স্থলবন্দর, রেলপথ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ঘোষণা দিয়ে সেগুলোর প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে।
“এবার পরিকল্পিতভাবেই সবকিছু নির্মাণ করা হবে। এগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুজিবনগর একটি পরিচিত ঐতিহাসিক স্থান হবে।”
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “মুজিবের নামে দেশে একটি মাত্র স্থান। সেটা মুজিবনগর। যে স্থানের গর্ভে বাংলাদেশের জন্ম। মুজিবনগরকে সরকার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন কেন্দ্র করতে চায়। সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
“কেননা মুজিবনগরের প্রতি এই সরকারের রয়েছে বিশেষ দৃষ্টি। এখানে মুজিবনগর নামে চেকপোস্ট, স্থলবন্দর, রেলপথ ও বিশ্ববিদ্যালয় হলে বদলে যাবে এই এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক চিত্র।”