কুয়েট ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে ফরিদপুরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
Published : 23 Apr 2025, 08:00 PM
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটের সমস্যা দ্রুতই সমাধান হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার।
উপচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের মধ্যে উপদেষ্টা বুধবার বিকালে বলেন, “আমি কোনো ব্যক্তি নিয়ে কথা বলব না। পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করতেছি। এখানে অংশীদার যারা ছিলেন তাদের নিয়ে কমিটি হচ্ছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে তারা যে রিকমেন্ডশন (পরামর্শ) দেবেন সেগুলো সরকার বিবেচনায় নেবে।
“তবে সমস্যা সমাধান করার যে প্রক্রিয়া সেটি আমরা ত্বরান্বিত করছি এবং আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।”
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা করে বিকালে ফরিদপুরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন তিনি ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনটির ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।
এ সময় সি আর আবরার সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। পুরো সমাজ একটি অস্থিরতার মধ্যে চলছে এবং সব যে রাতারাতি ঠিক হয়ে যাবে সেটা ভাবনাও বোধ হয় ঠিক না।”
উপদেষ্টা বলেন, “আগের সরকারের সময়ে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া উত্থাপন করার সুযোগ-সুবিধা ছিল না এবং যখনই কেউ দাবি-দাওয়া উত্থাপন করতো তখন রাষ্ট্র ঝাপিয়ে পড়ত তাদের উপরে। বর্তমানে রাষ্ট্র মনে করে যে, এখন একটি ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের দাবি-দাওয়া আমরা সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখছি।
“আমরা চেষ্টা করব, তারা যেটি চাচ্ছে সেটি নিয়মের ও আইনের মধ্যে এবং যুক্তিসংগতভাবে সমাধান করার। তারা হয়ত অতীতের মত ভাবছে, সমাধান হবে না কিন্তু আমরা অতি দ্রুত এর সমাধান করব।”
এর আগে সাহিত্য পরিষদের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের সময় জেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন শিক্ষা উপদেষ্টা। এ সময় তিনি ফরিদপুর নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ, সাধারণ সম্পাদক লেখক মফিজ ইমাম মিলন উপস্থিত ছিলেন।
ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। পরে সোমবার থেকে তারা আমরণ অনশনে বসেন।
এই অবস্থার মধ্যে বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার কুয়েট ক্যাম্পাসে পৌঁছান। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। পরে প্রায় ৪০ মিনিট অনশনরত ও অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
কিভাবে ছয় দফা থেকে উপাচার্য পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পরিণত হলো, সেই বিষয়টি শিক্ষার্থীরা জানান। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থী গালিব, তৌফিক, সৈকত, রাহাত ও মহিবুজ্জামান উপল উপাচার্যের অপসারণ ছাড়া কোনোভাবেই অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন না বলে উপদেষ্টাকে জানান।
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে ফোন করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, পরিস্থিতি এ পর্যায়ে এসে গেছে। ছাত্রদের অনশন করতে হচ্ছে। আমি এখানে একজন পিতা হিসেবে এসেছি। আমি তাদের বলেছি যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে তারা যেন পানি পান করে। আর যারা সুস্থ আছে, তারা অনশন পালন করুক। কিন্তু তারা সেটা শুনেনি।”
“তারপরও আমি তাদের অনুরোধ করছি, তারা যেন অনশন ভাঙে। আমি আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব তাদের এই সমস্যা সমাধান হবে।”
আরও পড়ুন:
কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, হলও খুলেছে
কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা, অনশনে অনড় শিক্ষার্থীরা
কুয়েট শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান শিক্ষা উপদেষ্টার
কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি: শাহবাগ অবরোধের হুঁশিয়ারি
কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা
কুয়েট শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান শিক্ষা উপদেষ্টার
কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি: শাহবাগ অবরোধের হুঁশিয়ারি
কুয়েটে সংঘর্ষ: ৩৭ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার, হল খুলবে ২ মে
৩৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার: কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে ঢাবিতে বিক্ষোভ