স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও যুবদলের বহিষ্কৃত নেতাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
Published : 27 Apr 2025, 06:36 PM
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় অবৈধ মাটির ব্যবসা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিক মাইনুদ্দিন রুবেলের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
শনিবার রাতে আহত সাংবাদিক বাদী হয়ে বিজয়নগর থানায় এই মামলা দায়ের করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও যুবদলের বহিষ্কৃত নেতাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মাইনুদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি। তিনি বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলা যুবদলের বহিষ্কৃত সদস্যসচিব মোখলেছুর রহমান ওরফে লিটন মুন্সি (৪০), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাইয়ুম মিয়া (৫৫), কাইয়ুমের ছেলে মো. মুন্না (৩০), রাসেল মিয়া (২৮) ও মোবারক মিয়া (২৫), কাইয়ুমের চাচাতো ভাই ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনিছ মিয়া (৫৩), রুবেল মিয়া (৩৫), আনিছ মিয়ার ছেলে আল আমিন (৩২), স্বজন বাবুল মিয়া (৫৭), আশরাফুল (৩২), ফয়সাল মিয়া (৩০), তিতন মিয়া (৫০) ও মামুন মিয়া (৩৩)। তারা বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কাইয়ুম ও যুবদল নেতাসহ মামলার আসামিরা কিছুদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভেকু দিয়ে ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে ট্রাক্টরে নিয়ে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন পুকুর ভরাটসহ নানা অপকর্ম করে আসছেন।
এতে বলা হয়েছে, এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় আসামিরা সাংবাদিক মাইনুদ্দিনকে প্রাণে হত্যার পরিকল্পনাসহ হুমকি দিয়ে আসছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় পারিবারিক কাজ শেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হন মাইনুদ্দিন। রাত পৌনে ৮টার দিকে মির্জাপুর মৌড়ের উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তায় আগে থেকেই ওত পেতে থাকা আসামিরা পরস্পরের যোগসাজসে পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র রামদা. বল্লম, কাঠের রুল, লোহার রড ইত্যাদি মারাত্মক প্রাণঘাতি অস্ত্রাদি নিয়ে সাংবাদিক মাইনুদ্দিনের পথরোধ করে।
“কারণ জানতে চাইলে, মাইনুদ্দিনের হাত-পা কেটে সাংবাদিকতার সাধ মিটিয়ে দিতে আসামিদের নির্দেশ দেন যুবদল নেতা মোখলেছুর ওরফে লিটন মুন্সী। আসামি কাইয়ুম মিয়া হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে সাংবাদিক মাইনুদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশে মাথায় কোপ দেন। বাম হাত দিয়ে প্রতিহতের চেষ্টা করলে কনুইয়ের নিচের অংশ ভেঙে যায় ও মাথার ডানপাশে আঘাত পান তিনি।”
হামলায় রক্তাক্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
মামলায় বলা হয়, এ সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অন্যান্যরা আসামিরা লোহার রড, ছুরিসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাইনুদ্দিনকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। মারধরে মাইনুদ্দিন ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল, বুকের ডান পাশের অংশ কেটে যায়।
চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে মামলায় বলা হয়েছে।
আহত সাংবাদিকের বড় বোন সালমা আক্তার বলেন, “আমার ভাই সাংবাদিকতা করেন। বিভিন্ন অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশ করে। তাই মেরে ফেলতেই সন্ত্রাসীরা আমার ভাইয়ের ওপর হামলা করেছে। আসামিরা প্রভাবশালী ও সম্পদশালী। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা খুব সহজ। এখন তারা আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা ও সাজানো গল্প ছড়াচ্ছে। কিন্তু আমার ভাই সত্যের পক্ষে কাজ করছেন। আমার ভাইয়ের ওপর হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।”
বিজয়নগর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, “সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”