“শুধু ড্রাগন বা শাক-সবজি চাষ নয়, এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম যাতে মসলা জাতীয় ফসলও সহজে উৎপাদন করা যায়।”
Published : 28 Feb 2025, 09:28 AM
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কৃষক আব্দুল্লাহ প্রচলিত চাষাবাদের গণ্ডি পেরিয়ে নতুন পথ দেখিয়েছেন। ড্রাগন ফলের সফল বাগান করার পর এবার তিনি আলোচনায় এসেছেন, বস্তায় রসুন চাষ করে। তার এই উদ্যোগ শুধু আশেপাশের কৃষকদেরই নয়, কৃষি বিশেষজ্ঞদেরও চমকে দিয়েছে।
বস্তায় রসুন চাষের এই পদ্ধতি দেশের কৃষিতে ‘নতুন সম্ভাবনা’ তৈরি করতে পারে, বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা। আর স্থানীয় কৃষকরা মনে করেন, সহায়তা পেলে আবদুল্লার এই উদ্যোগ ‘দৃষ্টান্ত’ হয়ে উঠবে।
ফরিদপুরের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন আব্দুল্লাহ। কিন্তু মাটি আর শেকড়ের প্রতি ভালোবাসা তাকে চার দেয়ালে আটকে রাখতে পারেনি।
তাই ২০২৩ সালে চাকরি ছেড়ে নিজের গ্রামে ফিরে ছোট ভাই আবু তালেবের ড্রাগন বাগানের দেখভালের দায়িত্ব নেন তিনি; সেখান থেকেই নতুন কিছু করার চিন্তা শুরু তার।
আদিতমারীর কমলাবাড়ী ইউনিয়নের বড় কমলাবকড়ী গ্রামে আব্দুল্লাহর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তার বাগানে বস্তায় লাগানো সতেজ রসুন গাছগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। তা দেখে প্রসন্ন হাসি ফোটে আব্দুল্লাহর চেহারায়।
কার্তিক মাসে রোপণ করা রসুন আগামী এক মাসের মধ্যে ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা এ কৃষকের।
বস্তায় রসুন চাষের পদ্ধতি কী- জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে তিনি আড়াই হাজার পলিথিনের বস্তায় রসুন লাগান। মাটি তৈরির সময় গবাদিপশুর মূত্র, গোবর, নালী গুড় ও বেসন মিশিয়ে একটি বিশেষ ধরনের জৈব সার তৈরি করেন; যা মাটির উর্বরতা বাড়ায়। এরপর প্রতিটি বস্তায় মাটির সঙ্গে এই সার মিশিয়ে রসুন চাষ শুরু করেন। পর্যাপ্ত যত্ন ও নিয়মিত পানি দেওয়ার ফলে রসুন গাছগুলো সতেজ হয়ে উঠেছে।
আব্দুল্লাহর হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি বস্তায় খরচ হয়েছে মাত্র ১৫-২০ টাকা। তিনি বলেন, রসুনের বাজারদর ভালো থাকলে, প্রতি বস্তা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। তার এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগ সফল হলে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগে দেড় লাখ টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, “শুধু ড্রাগন বা শাক-সবজি চাষ নয়, এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম যাতে মসলা জাতীয় ফসলও সহজে উৎপাদন করা যায়। বাজারে রসুনের চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় আমি পরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্ত নেই।
“প্রতি বস্তায় ২০-২৫টি রসুন গাছ রয়েছে, যা থেকে প্রত্যেক বস্তায় ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম রসুন উৎপাদন হবে। খরচ বাদে দেড় লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি। আগামীতে আরও বড় পরিসরে রসুন চাষের পরিকল্পনা করেছি।”
এদিকে আব্দুল্লাহর এই নতুন উদ্যোগ দেখে কমলাবকড়ী গ্রামসহ আশপাশের এলাকার কৃষকরাও উৎসাহিত হচ্ছেন এ পদ্ধতিতে রসুন চাষ করার। অনেকেই আব্দুল্লার কাছ থেকে শিখছেন এবং নিজেরাও বস্তায় সবজি ও রসুন চাষ পরিকল্পনা করছেন।
কমলাবকড়ী গ্রামের বাসিন্দা রহিম উদ্দিন বলেন, “আব্দুল্লাহ শুধু নিজের জন্য নয়, আমাদের জন্যও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছেন। তার এই পদ্ধতি সহজ আর কম খরচে লাভজনক। আমরাও এটি শিখতে চাই।”
“আব্দুল্লাহর বস্তায় রসুন চাষ করাটা একটা দারুণ ব্যাপার”, বলছিলেন বড় কমলাবাড়ী গ্রামের রহিম মিয়া।
তিনি বলেন, “আব্দুল্লাহর দেখাদেখি আমিও আগামীতে বস্তায় রসুন চাষ করব।”
কমলাবাড়ী গ্রামের ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, “সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে আব্দুল্লাহ আরও বড় পরিসরে এই চাষ পদ্ধতি বিস্তৃত করতে চান। কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ ও সহায়তা পেলে তার এই উদ্যোগ দেশের আরও অনেক কৃষকের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।”
বস্তায় রসুন চাষের নতুন এ পদ্ধতি সফল হলে আগামীতে বস্তায় চাষের পদ্ধতি অনেক বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক।
ওমর বলেন, “বস্তায় রসুন চাষের বিষয়টি একেবারেই নতুন পদ্ধতি। এটি সফল হলে আগামীতে বস্তায় চাষের পদ্ধতি অনেক বেড়ে যাবে।
“এ ছাড়া বস্তায় রসুন চাষের এই পদ্ধতি দেশের কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। যদি এটি সফলভাবে বিস্তৃত হয়, তাহলে রসুন আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং স্থানীয় কৃষকরা ভালো লাভ করতে পারবেন।”
কৃষক আব্দুল্লাহ কৃষি বিভাগের পরামর্শ চাইলে তাহলে তাকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই এ ধরনের উদ্যোগ আরও ছড়িয়ে পড়ুক।”