মোটরসাইকেল নিয়ে তরুণরা হাজির হন জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতীর তালতলা এলাকায়।
Published : 29 Dec 2024, 01:24 PM
বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিতে শীতকালের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত হয়ে আছে খেজুরের রস। গাছ কমে যাওয়া বা টাটকা রসের অপ্রতুলতার সঙ্গে নিপাহ ভাইরাসের কারণে শীতের ভোরে এই রস আস্বাদনে কিছুটা ভাটা পড়লেও তাতে দমে যাননি ‘শেরপুর রাইডার্স’ নামের একদল তরুণ।
পৌষের কুয়াশা ঘেরা সকালে প্রাকৃতিক পরিবেশে ভেজাল মুক্ত টাটকা খেজুরের রস উপভোগ করার জন্য তারা আয়োজন করেছেন ‘রসের ট্যুরে’র।
রোববার কাকডাকা ভোরে এই আয়োজনে শেরপুর রাইডার্সের তরুণরা মোটরসাইকেল নিয়ে হাজির হন জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতীর তালতলা এলাকায়।
সেখানে খেজুর গাছে উঠে রসের হাড়ি পেড়ে নিজেরা গ্লাসে ঢেলে কিংবা হাড়িতে চুমুক দিয়ে রস খাওয়া এবং অন্যকে খেজুরের রস খাওয়ানোর উৎসবে মাতেন তারা। আবার কেউ কেউ ছবি তোলা নিয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
শেরপুর রাইডার্সের সমন্বয়ক সোহানুর রহমান সুমন বলেন, “আমরা প্রতি বছর এখানে খেজুরের টাটকা রস খাওয়া আয়োজন করি। সব জায়গাতে এমন ভেজালমুক্ত সুমিষ্ট রস পাওয়া যায় না। তাই আমরা ছুটে আসি পাহাড়ি এলাকায়।
“শেরপুর রাইডার্সের সদস্য ছাড়াও অন্য যারা এখানে এসেছে সবার জন্য বিনামূল্যে খেজুরের রস খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি আমাদের ১৪ তম আসর।”
রস খেতে আসা তরুণরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, প্রকৃতির মাঝে সুন্দর একটা সকালের আয়োজন অংশ নিয়ে তারা খুবই খুশি। শীতের সকালটা রসের সঙ্গে ভালই মিলে গেছে।
কলেজ শিক্ষার্থী তানকিন হোসেন তুহিন বলেন, “যেহেতু এটি একটা সিজনে নির্দিষ্ট করে পাওয়া যায় এবং সব জায়গায় পাওয়া যায় না। যার ফলে শেরপুর থেকে ছুটে আসা পাহাড়ে।”
ভোজন পিপাসু আতিকুর রহমান খান জানান, “শীতের সকালে রসের সঙ্গে ভালোই মিলে যায়। প্রকৃতির মাঝে এসে যদি একটু রস খাওয়া যায়, তাহলে সকালটি ভালো কাটে এবং সতেজ মনে হয়।”
ওই এলাকার গাছি আব্দুল কুদ্দুস প্রায় ২০-৩০টি খেজুর গাছ থেকে দুই দিন অন্তর অন্তর রস সংগ্রহ করেন। নিপাহ ভাইরাসের হাত থেকে সুরক্ষায় তিনি নেন বিশেষ ব্যবস্থা। বাদুড়সহ অন্য প্রাণীদের থেকে রক্ষায় বিশেষভাবে তৈরি বাশের ঝালর দিয়ে ঢেকে রাখেন গাছের কাটা অংশসহ রস সংগ্রহের পাত্র।
তিনি বলেন, এলাকার গ্রামীণ সড়কের ধারে অনেক খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে সবগুলো থেকে রস নামানো যায় না। ঘুরে ঘুরে ২০ থেকে ৩০টা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বিক্রি করে সংসার চালাই।
তিনি জানান, মাটির হাঁড়ি ও প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে গাছ থেকে দুই দিন পরপর রস সংগ্রহ করা হয়। এখানকার গাছগুলো থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লিটার রস পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, প্রতি গ্লাস খেজুরের রস সাধারণত ১০-২০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। আবার অনেকে খুশি হয়ে ৫০ টাকাও দেন। বছরে কমপক্ষে ২০-৩০ হাজার এমনকি কোনো কোনো বছর অর্ধ লাখ টাকার উপরে লাভ হয়।