ঠিকাদার বলেন, “অতিষ্ঠ হয়ে ঘুষ চাওয়ার কথোপকথন রেকর্ড করি। কিন্তু তখন প্রকাশ করতে পারিনি।”
Published : 08 Mar 2025, 08:42 PM
গাইবান্ধা পৌরসভার এক প্রকৌশলীর ‘ঘুষ নেওয়ার’ একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আলোচনা চলছে।
বৃহস্পতিবার রাতে কয়েকজন ব্যক্তি একযোগে তাদের ফেইসবুক আইডি থেকে এই অডিওটি আপলোড করেন।
তারা দাবি করেছেন, এটি পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) শফিউল ইসলামের সঙ্গে ঠিকাদার ফিরোজ কবিরের কথোপকথনের রেকর্ড। সেখানে একটি রাস্তার সংস্কার কাজের লেনদেন নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হয়েছে।
তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সেটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া অডিওটি ১০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের। অডিওতে প্রকৌশলীকে একটি প্রকল্পের রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজের জন্য টাকা (ঘুষ) চাইতে শোনা যাচ্ছে। কাজের বরাদ্দ অনুসারে প্রকৌশলী ছয় শতাংশ টাকা দাবি করছেন।
ঠিকাদার নানা কথা বলে কম দিতে চাইলে প্রকৌশলী বলেন, একটি টাকাও কম দেওয়া যাবে না। কম দিলে বিল পার করা যাবে না।
অডিওতে ঠিকাদারের সঙ্গে আরও অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলতে শোনা যায় ওই প্রকৌশলীকে।
ঘুষ চাওয়ার এ অডিওটি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হলেও ঠিকাদার ফিরোজ কবির ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ সরকারি কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ করেন। অভিযোগের সঙ্গে তিনি প্রমাণ হিসেবে এই অডিও জমা দেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন ৫ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্ত করেন। তবে এখনও প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন বলেন, “তদন্ত চলমান। এখন কিছু বলা যাবে না।”
অভিযোগে ঠিকাদার উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম প্রায় ১৩ বছর ধরে গাইবান্ধা পৌরসভায় কর্মরত আছেন। ওই প্রকৌশলীকে প্রকল্পের বরাদ্দ টাকার শতকরা ছয় ভাগ ঘুষ দিয়ে তার কাছ থেকে ফাইল ছাড় করতে হয়। এভাবে তিনি অবৈধভাবে টাকা আয় করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, যোগদানের পর থেকে তিনি পৌরসভার নকশা অনুমোদনের দায়িত্ব পালন করছেন। বাড়ি নির্মাণে নকশা অনুমোদনের জন্য তিনি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নেন। টাকা না দিলে তিনি সেবাগ্রহীতাদের নানাভাবে হয়রানি করেন।
শনিবার ঠিকাদার ফিরোজ কবির বলেন, “ওই প্রকৌশলীর সঙ্গে গত বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি আমার এই কথোপকথন হয়েছে। প্রকৌশলী বিল প্রদানে প্রায় এক বছর আমাকে হয়রানি করেন। পরে বাধ্য হয়ে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে বিল নেই। অতিষ্ঠ হয়ে ঘুষ চাওয়ার কথোপকথন রেকর্ড করি। কিন্তু তখন প্রকাশ করতে পারিনি।
“কারণ ওই প্রকৌশলী জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার ছত্রচ্ছায়ায় তিনি এসব করেছেন। ৫ অগাস্টের পর দেশের পটপরিবর্তন হয়েছে। তাই এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট এ অভিযোগ দিয়েছি।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শফিউল ইসলামের মোবাইলে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।