গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হন।
Published : 21 Jan 2025, 08:45 PM
ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবুর রহমান।
শাস্তি পাওয়াদের মধ্যে চারজনের সনদ বাতিল, একজনকে স্থায়ী বহিষ্কার, দুইজনের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত এবং নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শাস্তি পাওয়াদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ওরফে যাযাবর নাঈমকে (ফোকলোর, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) স্থায়ী বহিষ্কার, সাবেক উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক জয় মোড়লের (আইন ও বিচার বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকের সনদ বাতিল, সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক লোবন মোখলেছের (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল, ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমেদ তুহিনের (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ,২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকের সনদ বাতিল, ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা ফাহিম সিরাজির (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সামিউল হক হিমেলকে (টিপিএস বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর, সাবেক উপশিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মাছুম বিল্লাহকে (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর, ছাত্রলীগ কর্মী রেজওয়ানুল কবীর রাব্বিকে (ইইই বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছর, আবু রায়হানকে (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছর, গালিব ফয়সাল নির্ঝরকে (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) দুই বছর, সৌমিক জাহানকে (চারুকলা বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছর, নাঈমুল ইসলাম অনিককে (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর, পবিত্র মণ্ডলকে (পপুলেশন সায়েন্স, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর এবং আব্দুল্লাহ আল শাহরিয়ারকে (চারুকলা, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইন অনুষদের সহ-সম্পাদক হাবিবুল্লাহ জামির (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ এবং ছাত্রলীগ কর্মী নয়ন হাসানের (ইএসই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহর অনুসারীদের সঙ্গে আরেক ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রাজ্জাক অনিকের অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাহাদ বিন সাঈদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহসান হাবীব সংবাদ সংগ্রহ করতে সেখানে গেলে তাদেরকে মারধর করা হয়।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলের তৎকালীন প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে সভাপতি ও তৎকালীন প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্যসচিব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রক্টর মাহবুবুর রহমান বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সব ধরনের অপরাধ দমনে প্রশাসন তৎপর থাকবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিগত প্রশাসনের তদন্ত কমিটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বসম্মতিক্রমে ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়।
এর মাধ্যমে আগামীতে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে এবং এমন ঘটনার যেনো পুনরাবৃত্তি না হয় সেই লক্ষে সিন্ডিকেট কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।