এছাড়া, আরও ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
Published : 21 Aug 2024, 08:03 PM
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে এক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার বিকালে নিহত রোমান মিয়ার খালা রিনা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জোবায়ের হোসেন জানান।
এ মামলায় সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, তার ছেলে গাজী গোলাম মূর্তজা, সাবেক পাটমন্ত্রীর একান্ত সহকারী এমদাদুল হক, ফিরোজ ভূঁইয়া, রূপগঞ্জ উপজেলার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া, ৫০ থেকে ৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
নিহত ১৭ বছর বয়সি রোমান মিয়া উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের নব কিশলয় উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। পরিবারের সঙ্গে চনপাড়াতেই থাকত সে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর সন্ধ্যায় চনপাড়ায় ছাত্র-জনতার একটি আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিলকে পণ্ড করার উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতারি গুলি করেন। এ সময় রোমানের গলা, ঘাড়, হাত, বুক ও পিঠে কয়েকটি গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক জোবায়ের।
সিদ্ধিরগঞ্জে আরেক মামলায় প্রধান আসামি শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মঙ্গলবার রাতে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানসহ ১২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের একটি বাণিজ্যিক ভবনের তত্ত্বাবধায়ক নিহত মনির হোসেনের ছোট ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান, থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক।
মামলায় শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, নাসিক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল, মতিউর রহমানসহ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ৫৬ বছর বয়সি মনির হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায়। গত ২০ জুলাই বিকালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলার সময় ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি করেন শামীম ওসমান ও তার সহযোগীরা। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন মনির।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পরদিন ২১ জুলাই চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করে তার শরীর থেকে গুলি বের করা হয়। ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পরদিন বিকালে মারা যান মনির।
“বেসরকারি ওই হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা চিকিৎসা বিল হয়। গ্রামের বাড়ির জমি ও সোনার গহনা বন্ধক রেখে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন নিহতের স্বজনরা। পরে মরদেহ নারায়ণগঞ্জে নিয়ে এলে আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর ও ইয়াছিন দ্রুত গ্রামে নিয়ে দাফন করতে চাপ দেন। পরে কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে গুলিতে নিহত মনিরের দাফন হয়”, বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন তার ছোট ভাই।
এ মামলায়ও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি বলে জানান ওসি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হতাহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের চারটি থানায় পাঁচটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। চারটি মামলারই প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।