শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের সামনে মাইনুদ্দিন রুবেলের ওপর হামলা হয়।
Published : 27 Apr 2025, 10:24 PM
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় অবৈধ মাটির ব্যবসা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক মাইনুদ্দিন রুবেল ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার করেছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
রোববার প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এই হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মাইনুদ্দিন রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি। তিনি বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটি দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার মিজাপুর এলাকায় উপজেলা পরিষদের সামনে মাইনুদ্দিনের ওপর হামলা হয়। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কাইয়ুম মিয়া ও উপজেলা যুবদলের বহিষ্কৃত সদস্যসচিব ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ওরফে লিটন মুন্সির নেতৃত্বে এই হামলা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।
এ ঘটনায় মোখলেছুর ও কাইয়ুমসহ ১৩ জনকে আসামি করে শনিবার রাতে বিজয়নগর থানায় মামলা করেন সাংবাদিক মাইনুদ্দিন।
হামলার ঘটনায় জড়িতের কাউকেই এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম ও সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, সহসভাপতি ইব্রাহীম খান সাদাত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রিয়াজ আহমেদ অপু, অর্থ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ফরহাদুল ইসলাম, পাঠাগার ও ক্রীড়া সম্পাদক মুজিবুর রহমান খান, সংস্কৃতি ও তথ্য প্রযুক্ত সম্পাদক মোজাম্মেল চৌধুরী, কার্যকরী সদস্য নজরুল ইসলাম ভুইয়া ও শাহাজাহান সাজু।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন ও সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা বলেন, সাংবাদিকের ওপর হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তারা জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধির ওপর হামলার ঘটনায় মামলা
হামলায় রক্তাক্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বেলালও এই হামলার ঘটনার জন্য নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন, এ ঘটনা ন্যাক্কারজনক। সাংবাদিকরা সমাজের অসঙ্গতি, অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরে নাগরিক দায়িত্ব পালন করছেন। একজন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিবাদ জানানোর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারেন। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের জেরে একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা কোনোভাবেই কাম্য নই। রাষ্ট্র, প্রশাসন ও পুলিশকে সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। এই হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি আবদুন নুর বলেন, ৫ অগাস্টের পর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না এবং গণমাধ্যমকর্মীরা স্বাধীনভাবে কাজ করবে বলে আশার বাণী শুনানো হয়েছিল। কিন্তু আগের মতো আবার সাংবাদিকতের উপর হামলার ঘটছে।
“স্বাধীন সংবাদিকতায় এই রকম হামলা দুঃখজনক। আমরা কি আবার আগের চর্চায় ফিরে যাচ্ছি। সাংবাদিকদের নিশ্চয়তা কি রাষ্ট নিশ্চিত করবে না?”
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির জেলা আহ্বায়ক নাসির মিয়া বলেন, “এই হামলার ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অনতিবিলম্বে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানাচ্ছি।”
প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্ধুসভার সভাপতি অভিজিৎ রায় বলেন, “একজন সাংবাদিক কলমযোদ্ধা। তার লেখনিতে সমাজের অসঙ্গতি উঠে আসে। কিন্তু সেজন্য একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা কোনোভাবে উচিত না। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।”
খেলাঘর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাধারণ সম্পাদক নিহার রঞ্জন সরকার হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “দল-মত নির্বিশেষে এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঢেউ’ এর আহ্বায়ক সৈয়দ তৈমুর ও সদস্যসচিব শাহাদাত হোসেন বলেন, সাংবাদিক সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। মাইনুদ্দিন রুবেল অত্যন্ত নিষ্ঠাবান, সৎ ও সাহসী সাংবাদিক। সংবাদ প্রকাশের জেরে তার ওপর হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জড়িতদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের উদ্যোক্তা ও পরিচালক (প্রশাসন) হারুন অর রশিদ বলেন, “সাহসি সাংবাদিকতার জন্য হামলা কোনোভাবে কাম্য না। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। জড়িতদের গ্রেপ্তারের পুলিশ কেন বিলম্ব করছে বুঝতে পারছি না। দ্রূত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।”