শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল বুধবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে।
Published : 21 Feb 2024, 07:41 PM
বিদেশি কূটনীতিক, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একুশের ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে বাংলাদেশের মিশনগুলো।
শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল বুধবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে।
রিয়াদ
রিয়াদের বাংলাদেশ মিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক ও সৌদি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সকালে দূতাবাসের মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। অনুষ্ঠানে ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতসহ ৪০ জন কূটনীতিক যোগ দেন।
আয়োজনে অন্যদের মধ্যে সৌদিতে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মোহাম্মদ আল জারকানি ও কূটনৈতিক কোরের ডিন জিবুতির রাষ্ট্রদূত দায়া আদদীন সাঈদ বামাখারামা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টফি ফারনড, সৌদি আরবের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক জাতীয় কমিশনের উপ-মহাসচিব হানি মানসি এবং ওআইসির রাজনৈতিক বিষয়ক সহকারী মহাসচিব ইউসেফ আল দুবেহ বক্তব্য দেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে মাতৃভাষা বাংলা রক্ষা করার বিষয়ে বাঙালি জাতির অবদানের কথা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, দিবসটি পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে সংগ্রাম ও ভাষার অধিকার আদায়ের এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত।
রিয়াদে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে। এসময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে একটি তথ্যচিত্র ও ১২টি ভাষায় একুশে ফেব্রুয়ারির গান পরিবেশন করা হয়।
দিনের শুরুতে দূতাবাস চত্বরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারীসহ শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
ক্যানবেরা
বহু ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় পালন করা হয়েছে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
মাতৃভাষার গুরুত্ব আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরায় বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন অতিথিরা।
বিশ্বের প্রতিটি ভাষা সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে ক্যানবেরায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার আল্লামা সিদ্দীকী বলেন, পৃথিবীর সংখ্যালঘু ব্যক্তিদের ভাষা এখন ঝুঁকির সম্মুখীন। গত দুই শতাব্দীতে প্রায় দুই হাজার ভাষা বিলুপ্ত হয়েছে।
প্রভাত ফেরীসহ বাংলাদেশ হাই কমিশনের এ আয়োজনে অংশ নেন এসিটি সরকারের পরিবেশ মন্ত্রী রেবেকা ভাসারতি, বহুসংস্কৃতি বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী পিটার কেইন, অস্ট্রেলিয়ায় ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত সিসো প্রামানোসহ কূটনৈতিক, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ভাষা-ভাষীদের প্রতিনিধি, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী ও অভিবাসী এবং বাংলাদেশ হাই কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অংশগ্রহণকারীরা অস্থায়ী শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা শেষে ভাষা শহীদদের স্মরণে ও বাংলাদেশকে উপজীব্য করে স্থানীয় বাংলাদেশি শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রোম
সকালে দূতাবাস চত্বরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা, রোমে অবস্থিত আইজাক রবিন পার্কের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেছে রোমে বাংলাদেশ দূতাবাস।
দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
ভাষা শহীদদের সম্মানে ইতালি সরকারের সহায়তায় রোমের রবিন পার্কে ২০১১ সালে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়।
রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম বলেন, 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এ দিবস পৃথিবীর সকল দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।