শারজার সমুদ্রপাড়ে কর্নিশ এলাকায় সান্ধ্যভ্রমণে এসে এক বাংলাদেশি পথচারী বিস্ময় নিয়ে মাথার ওপর দেখছেন। পুলিশের ড্রোন ঘুরে ঘুরে নাগরিকদের জন্য নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ‘স্টে হোম’ ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে।
Published : 25 Mar 2020, 03:03 PM
যাতে বলা হচ্ছে সবাই দয়া করে নিজ ঘরে অবস্থান করুন। জনসমাগমস্থল পরিহার করুন। এমন কিছু করবেন না যা আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। আমরা চাই আপনারা নিরাপদ থাকুন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাসিন্দা শিল্পনগরী মুসাফফার প্রবাসী মোহাম্মদ শাহেদ। সে তার স্পন্সরের একটি কাজে আবুধাবির মিনা সি-পোর্ট এলাকায় আসেন দুই বন্ধুসহ। পুলিশ তাদের তিনজনকে একসঙ্গে দেখে থামালেন, এরপর আইডি, গাড়ির লাইসেন্স চেক করার পর বললেন ঘরে ফিরে যেতে এবং জানিয়ে দিলেন এখন থেকে দলবেঁধে হাঁটা যাবে না। পুলিশি টহল আবুধাবির হোটেল, রেঁস্তোরা, লেবার ক্যাম্প আবাসিক এলাকায় কোথাও দুজনের বেশি জড়ো হতে দিচ্ছে না।
সবার মধ্যে ‘সোশ্যাল ডিস্টেন্স’ বজায় রাখার প্রচারণা ও তা তদারকি জোরদার করেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ। দুবাই, শারজা, রাস আল খাইমাহ, আজমান সর্বত্র চলছে ‘স্টে হোম’ ক্যাম্পেইন। উদ্দেশ্য একটাই, আমিরাত কর্তৃপক্ষ যে কোন মূল্যে চাইছে মহামারি করোনার থাবা থেকে তাদের নাগরিক ও অভিবাসীদের রক্ষা করতে। দেশের স্থল ও আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চলছে লক ডাউন। পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে জনসমাগম স্থলগুলোর ওপর। চলছে একজনের সঙ্গে আরেকজনের ‘সেফ ডিস্টেন্স’ বজায় রাখার ক্যাম্পেইনও।
সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ। এখানে কর্মরত প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি করোনাভাইরাস সঙ্কটে কার্যত আমিরাতে হোম-কোয়ারেন্টাইনড অবস্থায় আছেন। প্রবাসীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা তীব্রতর হচ্ছে, পরিবার-পরিজন হতে যারা বিচ্ছিন্ন তাদের মধ্যে উদ্বেগের শেষ নেই। আমিরাত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। জনসমাগমের ওপর জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ছে। সপ্তাহান্তে ভিড় থাকা পাবলিক প্লেসগুলোও বিরান হয়ে গেছে। শপিংমল বন্ধ হওয়ার ঘোষণা আসায় প্রবাসীরা জরুরি কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। বাংলাদেশ বিমান আবুধাবি ও দুবাই থেকে তাদের নিয়মিত ফ্লাইটগুলো এর আগে বন্ধ করে দিয়েছে। এখন ঘোষণা এসেছে আমিরাতে সব ট্রানজিট ও প্যাসেঞ্জার ফ্লাইট দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করা হবে।
১৬ মার্চ থেকে চার সপ্তাহের জন্য দেশের সবগুলো মসজিদ উপাসনালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমিরাতে সড়ক ও জনপদগুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য পুরোদমে কাজ চলছে। এমনকি দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশিসহ সব বৈধ ভিসাধারীরাও গত ১৯ মার্চ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য দেশে প্রবেশ করতে পারছেন না। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি অ্যান্ড সিটিজেনশিপ’ ঘোষণা দিয়েছে যে আমিরাত করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তার স্থল ও আকাশপথ বন্ধ করে দেয়ায় যারা আমিরাত ভ্রমণে এসে যথাসময়ে দেশত্যাগ করতে পারেননি তাদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও সরকার তাদের অবস্থানকে বৈধ বলে গণ্য করবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে স্পষ্ট রূপরেখা দেওয়া হবে।
আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মো. মিজানুর রহমান দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে তাদের যে কোনো সমস্যায় ঢাকায় আমিরাত দূতাবাসে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করেছেন। আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাই কনস্যুলেট গত ১৮ মার্চ থেকে কনস্যুলার সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে, কেবল জরুরি সেবার জন্য দূতাবাস খোলা থাকবে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পার্ক, থিয়েটারসহ জনসমাগমস্থল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেবল নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ওষুধপত্রের জন্য গ্রোসারি ও ফার্মেসি খোলা রাখা হবে।
দেশটিতে কার্যত একটা লকডাউন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এপর্যন্ত ২৪৮জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৪৫ জন আরোগ্য লাভ করেছেন, দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশি আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ জন, তাদের মধ্যে ৪ জন সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন, অন্যরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমিরাত সরকার নিজ খরচে করোনাআক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। অনেকটা লকডাউন পরিস্থিতিতে বিশেষ করে যারা নিম্ন মজুরির প্রবাসী তাদের খাদ্য ও অর্থ সাহায্য দিতে ও যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা বাংলাদেশ দূতাবাস ও সরকারকে তাদের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |