“সেই ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নতুন যাত্রা শুরু হবে। তরুণদের জেগে উঠতে হবে,” বলেন তিনি।
Published : 09 Jul 2023, 09:47 PM
সরকার হটাতে ‘রাজপথে নামার’ নতুন ঘোষণা বুধবার ঢাকার সমাবেশ থেকে আসবে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার বিকালে সিলেটে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব একথা জানান।
সরকার হটাতে ১০ দফা দাবিতে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে আসা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা ফখরুল গত কয়েকদিন থেকে এক দফা আন্দোলনে নামার ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন। সিলেটের সমাবেশ থেকে সেই আন্দোলন কবে শুরু হবে সেটি ঘোষণার দিনক্ষণ জানালেন।
সমাবেশে দেশে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে’ আনার পাশাপাশি কারাগারে আটক খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা, লন্ডনে থাকা তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা এবং ‘৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে’ দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারে আন্দোলনে নামার কথা বলেন।
তিনি বলেন, “সেই মামলাগুলোকে প্রত্যাহার করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সরকারকে বিদায় দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় আছে।
‘‘এই ব্যাপারে কি আপনারা সবাই একমত, সবাই নামবেন। নেমেছেন নাকি? তাহলে আগামী ১২ তারিখ ঢাকায় একটা সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশে নতুন ঘোষণা আসবে, সেই ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নতুন যাত্রা শুরু হবে।”
এ যাত্রায় তরুণদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই সংগ্রামে রাজপথে মানুষ আর মানুষ, তরুণ আর তরুণ, যুবক আর যুবকের সমাহার দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকার যারা আমার বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের রাষ্ট্র আমাদেরকে নির্মাণ করতে হবে।”
যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে তারণ্যের এ সমাবেশ হয়। সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জের থেকে হাজারো নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে এতে যোগ দেন। নেতাকর্মীদের মাথায় লাল, সবুজ ও হলুদ রঙের টুপি এবং গায়ে ছিল রঙিন টি শার্ট।
গত ১০ জুন চট্টগ্রামে আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের সমাবেশের এ কর্মসূচি শুরু হয়, যা খুলনা ও ঢাকায় আয়োজনের মাধ্যমে শেষ হবে। এর আগে বগুড়া ও বরিশালে সমাবেশ হয়েছে। সিলেটের সমাবেশটি চতুর্থ।
‘ওরা নির্বাচনকে অস্ত্র বানিয়েছে’
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, ‘‘দুইটা নির্বাচন করেছে এর আগে। আর নির্বাচনটা কি? নির্বাচনটা হল একটা অস্ত্র। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে তাদের মতো করে ব্যবহার করার জন্য তারা নির্বাচনটা ব্যবহার করেন। আর বলবেন, নির্বাচন তো হবে। আওয়ামী লীগের আমলে না কি সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হয়।
‘‘আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই, হয় না। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে জানে না।”
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হবে। সেজন্য আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে, মানুষের সার্বভৌমত্ব থাকবে, কাজ করে আয় করার ব্যবস্থা থাকবে, মানুষ সহজভাবে জীবনযাপন করতে পারবে।”
এ অবস্থার পরিবর্তন করতে এবং গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে রাজপথে নামার আাহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “রাজপথে এর ফয়সালা করতে হবে।”
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘কোনো রকম কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না ডেঙ্গু দূর করবার জন্যে। চট্টগ্রামে আজকে একটি পরিবারেরই সাতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।”
‘বিদ্যুৎখাতের লুটপাট’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘পত্রিকায় বেরিয়েছে যে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ইভালুয়েশনে বিদ্যুৎখাতকে বলা হয়েছে অপচুক্তি ও লুটেরা মডেল। কারা বলছে? সরকারের লোকেরা। কেন বলছে? শুধু কেন্দ্রগুলোতে কোনো উৎপাদন না করে বিদ্যুৎ বাবদ ভাড়া দিতে হয়েছে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গোটা বিদ্যুৎখাতে লোকসান দিয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা- এই দুই বছরে।”
তিনি বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে সরকার দুর্নীতি ও অনিয়ম করছে অভিযোগ করে কৃষকের ধান ও কৃষিপণ্যের দাম না পাওয়া, সারের উচ্চ মূল্য এবং নিত্যপণ্যের চড়া দামের জন্য সরকারের সমালোচনা করেন।
সমাবেশের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানি, মুক্তিযুদ্ধে সিলেট সেক্টরের যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জিয়াউর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীরসভাপতিত্বে যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা, জেলা সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, যুবদলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন ও ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন ‘গুম’ হওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহমিনা রুশদির লুনা, ছাত্রদলের জোনায়েদ আহমেদের মা আয়েশা বেগম ও ইফতেখার আহমেদ দিনারের বোন তাহমিন শারমিন তামান্না, নবীন ভোটার সাদিয়া কাউসার রুহি, সাবিহা জামান আরিফা, আহত যুবদলের খালেদুর রহমান খালেদ।
প্রতিবাদী কবিতা আবৃত্তি করেন এম এ চৌধুরী শাহান, আরিফ উল্লাহ ও শায়মা আহমেদ অসীম।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, এনামুল হক চৌধুরী, সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা নাসের রহমান, এম এ সালাম, শাম্মী আখতার, জেলা সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার আগে সিলেট পৌঁছে বিএনপি মহাসচিব শহরে হয়রত শাহজালাল ও খাদিমনগরে হযরত শাহ পরানের মাজার জিয়ারত করেন।