রোববার সকালে বিএনপির ডাকা হরতালের মধ্যে মির্জা ফখরুলকে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
Published : 29 Oct 2023, 07:42 PM
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ তথ্য জানান।
এর কিছুক্ষণ আগে বিশেষ পুলিশ প্রহরায় একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নেওয়া হয় ফখরুলকে। সেখানে তাকে হাজতখানায় রাখা হয়েছে বলে প্রসিকিউশন পুলিশের উপ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান।
ফখরুলের জামিন আবেদনের শুনানি করার জন্য আদালতে উপস্থিত আছেন তার আইনজীবীরা। অন্যদিকে ফখরুলকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হতে পারে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রোববার সকালে বিএনপির ডাকা হরতালের মধ্যে মির্জা ফখরুলকে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে শনিবার সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।
শনিবার দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরো ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে।
দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।
সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই রোববার সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার গুলশানের বাসায় যায় গোয়েন্দা পুলিশ।
ফখরুলকে আটকের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম পরে সাংবাদিকদের বলেন, “ওরা (পুলিশ) সকালে এল। ওই সময় আমরা চা খাচ্ছিলাম। এসে প্রথমে বলল যে, স্যার আপনার সাথে কথা বলব। কিছু কথাবার্তা বলে নিচে চলে গেল । বলল যে, ‘স্যার আপনার সাথে কথা বলার জন্য আসছিলাম।’ যাওয়ার সময়ে তারা বাসায় ভেতরের সিসি ক্যামেরার ডিভাইস (হার্ড ডিস্ক) এবং অ্যাপার্টমেন্টের নিচের সিসি ক্যামেরার ডিভাইস নিয়ে গেছে।
“আমার যতটুকু ধারণা, তারা নিচেই ছিল। ১০ মিনিট পরে আবার এল যে, ‘স্যার আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে’। যা বলে প্রত্যেকবার… ‘স্যার উপরের অর্ডার আছে’।”
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, শনিবারের সংঘাতের ঘটনায় ঢাকার ২১টি থানায় ২৮টি মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৯৬ জনকে।
এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার পাশাপাশি পুলিশ হত্যা মামলাতেও আসামি করা হয়েছে মির্জা ফখরুলকে। পল্টন থানার ওই মামলায় বিএনপি মহাসচিবকে করা হয়েছে ১ নম্বর আসামি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ঘটনা অনেকগুলো ঘটেছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে অ্যাটাক করেছে, বাড়িতে ঢুকে গিয়েছে, এ মামলা তো হবেই। আমরা শনাক্ত করছি, যারা যারা এখানে ঢুকেছিলেন, যার যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদেরকে অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
“প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আক্রমণ হল, এর দায় কি তারা এড়াতে পারবেন? পুলিশ হত হল, এর দায় কি তারা এড়াতে পারবেন? পুলিশের তিনটি অস্ত্র তারা জোর করে নিয়ে গেছে, এর দায় কি তারা এড়াতে পারবেন?”
আর ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার নিজ কার্যালয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশকে যারা হত্যা করেছে, যারা প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা চালিয়েছে, পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্সসহ গাড়ি পুড়িয়েছে, পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
"এসব ঘটনায় যত উচ্চ পর্যায়ের হোক আর যত নিম্ন পর্যায়ের হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।"