তার স্ত্রী রাহাত আরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা এসে একটি মাইক্রোবাসে করে বাসা থেকে নিয়ে যায় বিএনপি মহাসচিবকে।
Published : 29 Oct 2023, 09:00 AM
বিএনপির ডাকা হরতালের সকালে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তার গুলশানের বাসা থেকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।
তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম জানান, রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা এসে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে বাসা থেকে নিয়ে যায় বিএনপি মহাসচিবকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) খ. মহিদ উদ্দিন বিডনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তারাই বলতে পারবে।”
মির্জা ফখরুলকে কোন মামলায় আটক করা হয়েছে, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, “আমি মিটিংয়ে পরে কথা বলব।”
বিএনপি মহাসচিব অসুস্থ জানিয়ে তার স্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এভাবে নিয়ে যাওয়া… আমার বলার কোনো ভাষা নেই। তিনি অসুস্থ, প্রচণ্ড অসুস্থ। এটা বাইরের কেউ বুঝবেন না। এই সময়ে তাকে এই অসুস্থ অবস্থায়… প্রচণ্ড কাশি, তার ফুসফুসের সমস্যা। বাংলাদেশে ট্রিটমেন্ট করেন, সিঙ্গাপুরেও গিয়েছিলেন।”
গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে ‘দিলরুবা’ অ্যাপার্টমেন্টের দ্বিতীয় তলায় একটি বাসায় থাকেন মির্জা ফখরুল। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য উত্তরার বাসা বদলে গুলশানে এসেছেন।
রাহাত আরা বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের দল ফখরুলকে নিয়ে যাওয়ার সময় বাসায় তার একান্ত সহকারী ইউনুস আলী এবং একজন গৃহকর্মীও ছিলেন। ‘তুলে নেওয়ার আগে’ পুলিশ বাসা ঘিরে ফেলে।
ফখরুলকে আটকের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার স্ত্রী বলেন, “ওরা (পুলিশ) সকালে এল। ওই সময় আমরা চা খাচ্ছিলাম। এসে প্রথমে বলল যে, স্যার আপনার সাথে কথা বলব। কিছু কথাবার্তা বলে নিচে চলে গেল । বলল যে, ‘স্যার আপনার সাথে কথা বলার জন্য আসছিলাম।’ যাওয়ার সময়ে তারা বাসায় ভেতরের সিসি ক্যামেরার ডিভাইস (হার্ড ডিস্ক) এবং অ্যাপার্টমেন্টের নিচের সিসি ক্যামেরার ডিভাইস নিয়ে গেছে।
“আমার যতটুকু ধারণা, তারা নিচেই ছিল। ১০ মিনিট পরে আবার এল যে, ‘স্যার আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে’। যা বলে প্রত্যেকবার… ‘স্যার উপরের অর্ডার আছে’।”
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে শনিবার সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।
শনিবার দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরো ডজনখানেক যানবাহন।
দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।
এছাড়া বিএনপি নেতাকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন অনেকেই। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের অন্তত ৪১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি, পুলিশের হামলায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই রোববার সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর হরতালের সকালেই তাকে আটকের ঘটনা ঘটল।
গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেলেও দ্রুতই ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তার স্ত্রী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এভাবে যে তাকে নিয়ে যাবে, এটা আামি কল্পনা করতে পারি নাই, আমি মেনে নিতেই পারছি না। আমি আশা করব যতটা সম্ভব তাদের কথাবার্তা যা আছে, সেগুলো সেরে তাকে আবার ফেরত নিয়ে আসবেন।
“আমি আশা করব তাদের কাছ থেকে… এইটুকু অন্তত আশা করতে পারি। তার যে অসুস্থতা সেখানে তার থাকার কথা না।”
মির্জা ফখরুলকে কোথায় নিয়ে গেছে বলেছে কিনা, জানতে চাইলে তার রাহাত আরা বলেন, “কিছু বলেনি। ডিবির লোকও ছিল, পুলিশও ছিল।”
ঢাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশের পর শনিবার রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গুলশানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর বাসায় পুলিশ অভিযান চালায় বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার। বিএনপির এই দুই নেতা তখন বাসায় ছিলেন না।
তবে আবদুল আউয়ালের ছোট ছেলে তাজওয়ার এম আউয়ালকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তার পরিবারের ভাষ্য।