Published : 10 Mar 2024, 08:41 PM
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মারামারির ঘটনায় বিএনপিপন্থি আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজলকে কেন গ্রেপ্তার করতে হবে, সে প্রশ্ন রেখেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনায় তিনি এই প্রশ্ন রাখেন।
বিএনপিপন্থি সংগঠন ‘সাইবার ফোর্স’ এর ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় রিজভী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে মারামারি করেছে আওয়ামী লীগ। উদ্দেশ্য সুপ্রিম কোর্ট দখল করা। আর কী দেখা গেলো? লোক দেখানোর জন্য একটা মামলা হয়েছে… সেখানে অ্যাডভোকেট যুথীর (নাহিদ সুলতানা যুথী) নামও আছে। বাদ বাকি সব বিএনপির আইনজীবীরা। আর গ্রেপ্তার করা হল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ‘জনপ্রিয় প্রার্থী; ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে। যারা মারামারি করেছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।”
ফল ঘোষণা নিয়ে গোলযোগে কাজলের কী ভূমিকা ছিল- সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “মারামারি করেছে তো আওয়ামী-আওয়ামী লীগ, বিএনপি শুধু চায় নিরপেক্ষ নির্বাচন।”
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় বুধ ও বৃহস্পতিবার। ৭ হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবীর মধ্যে ৫ হাজার ৩১৯ জন ভোট দেন। ঝামেলা বাধে ভোট গণনা নিয়ে।
আইনজীবীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষে সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী রাতেই ভোট গণনা শেষ করে ফলাফলের দাবি জানান।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ মনোনীত প্যানেল থেকে সম্পাদক পদপ্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হকসহ অন্যরা শুক্রবার বিকালে ভোট গণনার দাবি জানান।
এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুই পক্ষ হট্টগোল এবং হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাইদ একটি পক্ষের হাতে মারধরের শিকার হন। এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর থেকেই থেমে যায় ভোট গণনা ও ফলাফল।
এরপর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার বেলা পৌনে ৩টায় আবার ভোট গণনা শুরু হয়, যা শেষ রাত সাড়ে ১০টার দিকে। সব হিসাবনিকাশ শেষে রাত দেড়টার দিকে ফলাফল ঘোষণা শেষ হয়।
তাতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সম্পাদক হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের (সাদা প্যানেল) প্রার্থী আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ শুক্রবার রাতে ওই মামলাটি করেন, যাতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০ জনের নামে করা ওই মামলার এক নম্বর আসামি সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী। তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী। আর রুহুল কুদ্দুস কাজলকে মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয়।
শনিবার বিকালে রাজধানীর তোপখানা রোডের চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কাজলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে রিমান্ডে পাঠানো হয়।
গোটা বিষয়কে ‘তামাশা’ উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, “শেখ হাসিনা পরিকল্পিত একটা ‘মারাত্মক বায়স্কোপ’ তৈরি করলেন এত বড় একটি জায়গায়।
‘‘আমি ধিক্কার জানাই এই দখলদার সরকারকে যারা প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। গণতন্ত্রের যে জায়গাগুলো শক্তিশালী হওয়া দরকার, রাষ্ট্রের সেই সব প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করেছে। সুপ্রিম কোর্টের মত একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানকে তারা ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যেভাবে তারা নির্বাচন কমিশনকে করেছে, যেভাবে তারা আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে করেছে, ঠিক এভাবেও সেটি করেছে।”
যুথী গ্রেপ্তার হননি কেন, সেই প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, ‘‘যুথী কে? পরশের (যুবলীগ চেয়ারম্যান) স্ত্রী। বিশাল ক্ষমতা। সে তার দলেরই আরেক গ্রুপকে পিটাচ্ছে।
“আমরা প্রকাশ্যে টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যেটা দেখলাম, যাকে ধাওয়া করে মারা হচ্ছে তিনি আওয়ামী লীগের একজন নেতা, যিনি নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। এই ভদ্রলোকই গত বছর বিএনপির উকিলদের সঙ্গে ‘গুন্ডামি’ করেছেন। আজকে ‘গুন্ডামি’ করছে তাদেরই দলের আরেকটা গ্রুপের বিরুদ্ধে।”
হারুনুর রশীদ ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শেখ রবিউল আলম, ওবায়দুর রহমান টিপুও উপস্থিত ছিলেন।