সরকার এমন করছে, যেন ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় যুদ্ধ হবে: ফখরুল

ক্ষমতাসীনরা দেশে ‘উত্তপ্ত পরিবেশ’ সৃষ্টি করতে চাইছে, অভিযোগ বিএনপি মহাসচিবের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2022, 09:54 AM
Updated : 17 Nov 2022, 09:54 AM

ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ‘বানচাল’ করতে ক্ষমতাসীনরা ‘বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সামগ্রিকভাবে এমন একটা আবহাওয়া তৈরি করছে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে, যেন মনে হচ্ছে যে, ১০ তারিখে (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় একটা যুদ্ধ হবে।”

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিএনপির আন্দোলনে পাঁচ নেতা-কর্মীর নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সব বিভাগীয় শহরে এই সমাবেশ করছে বিএনপি। ১০ ডিসেম্বরে ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে তাদের এ কর্মসূচি শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “ঢাকার সমাবেশকে বানচাল করার লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জে আমাদের নিরীহ লোকজনের ওপরে হামলা চালিয়ে, শহীদুল ইসলাম শাওনকে হত্যা করে, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। সেই মামলায় আপনারা জানেন যে, আমাদের কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মুন্সিগঞ্জ জেলার সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনকে আটক করে রাখা হয়েছে।

“স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রফিক হাওলাদার, যুব দলের সাবেক সহসভাপতি আলী আকবর চুন্নুসহ বিভিন্ন থানায় ইতোমধ্যে ৫০জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপরে হামলা চালিয়ে ৫০ জন নেতা-কর্মীকে আহত করেছে।”

এগুলো পূর্ণাঙ্গ চিত্রের অংশবিশেষ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা একটা কঠিন সময়, ক্রান্তিলগ্নে উপস্থিত হয়েছি। এখানে আপনার নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে, শত বাধা-বিপত্তি, আক্রমণ, নির্যাতন সহ্য করেও কিন্তু আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এগোচ্ছি, শান্তিপূর্ণ পথে এগোচ্ছি।

“এই অবৈধ সরকার, তারা অত্যন্ত অর্বাচীনের মত এই দেশকে একটা স্থিতিহীনতার দিকে, অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং তারা একটা উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে আবার সেভাবে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।”

১০ ডিসেম্বর ‘চূড়ান্ত আন্দোলন নয়’

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, এখনো বলছি, আবারো বলছি, ঢাকার সমাবেশটা হচ্ছে আমাদের একটা বিভাগীয় সমাবেশ। আমরা যে ১০ বিভাগকে কেন্দ্র করে বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিলাম, সেই সমাবেশগুলোর লাস্ট সমাবেশটা হচ্ছে ঢাকায়।

“ঢাকার এই সমাবেশ থেকে আমরা পরিবর্তী কর্মসূচি, পরবর্তী দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে আরো বৃহত্তর আন্দোলন নিয়ে আমরা সামনে আসব। এটা তো চূড়ান্ত সমাবেশ নয়, চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নয়। এটা হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক বিভাগীয় গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।”

কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে প্রমাদ বকছে’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “গণভিত্তি না থাকলে যেটা হয়, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে যেটা হয় আর কি।

“প্রতিমুহূর্তে এরা নাইটমেয়ার দেখে, দুঃস্বপ্ন দেখে। এই মুহূর্তে বুঝি গেলো গেলো, আমার সব গেলো। ওই ভয়ে ওই আতঙ্কে তারা এখন রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রকে ব্যবহার করে হুমকি দিচ্ছে।”

সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, “আরে! তোমরা কি গুণ্ডাবাহিনীর সর্দার? তোমরা কি মাফিয়ার সর্দার? তাহলে ঘোষণা করো যে, তোমরা তাই । তাহলে আমরা তোমাদেরকে রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাখব না, গণতান্ত্রিক দলের মধ্যে চিন্তা করব না।”

‘সেই অবস্থা এখন নেই’

বিএনপির পরিণতি ‘হেফাজতের মত হবে’– ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এরকম বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, “শোনেন, ওই একটা জিনিসই উনারা পারেন- অভ্যস্ত আর কি। সেই অবস্থা এখন আর নেই। আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, হেফাজতের সময়ে তারা যেটা করেছেন, এখন জনগণের সঙ্গে সেটা তারা করতে পারবেন না। কারণ জনগণ তাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে এবং জনগণ যে কোনো মূল্যে এবার তাদের দাবি আদায় করে ছাড়বে।”

ফখরুল প্রতিশ্রুতি দেন, তার দল এমন কোনো কর্মসূচি নেবে না, যাতে জনগণের কষ্ট হয় বা সাধারণ মানুষ বিপদগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

“আমরা জনগণকে নিয়ে জনগণের দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছি শান্তিপূর্ণভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাব।”

গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে ‘বাধা’, নেতা-কর্মীদের ওপর ‘নির্যাতন-অত্যাচার’, গ্রেপ্তার-মামলার একটি নিজস্ব পরিসংখ্যান সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর ‘পুলিশি নির্যাতনের’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “নরসিংদীতে এক আওয়ামী লীগের নেতার বাসা থেকে বোমা উদ্ধার করেছে, সাথে গানপাউডার ও অন্যান্য কিছু। আর মামলা দিয়েছে বিএনপির ৭ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। এগুলো হাস্যকর না? বালখিল্য আচরণ না?”

‘এই আলামত কীসের?’

‘বিদ্যুতে দাম আবারো বৃদ্ধির পাঁয়তারা’ এবং ‘ওএমএসে চালের জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন’- জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত এমন প্রতিবেদনের শিরোনাম তুলে ধরে মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই আলামত কীসের? এই আলামত হচ্ছে যে, আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেটা অমূলক করেন নাই। তিনি একটা অবস্থা তৈরি করে রাখতে চাচ্ছেন যেটা হতে পারে।

“যদি হয়, সেটা হবে তোমাদের কারণে, তোমাদের দুর্নীতির কারণে, তোমাদের অব্যবস্থাপনার কারণে, তোমাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার… তোমরা বর্গীদের মত কায়দায় দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে চলে যাচ্ছ, তার জন্য হবে।”

বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসার প্রসঙ্গ ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “রিজার্ভের কথা এত বলে কেন? এখন খুব ডিফেন্ড করে রিজার্ভকে প্রতিদিন। তাহলে ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। তারা রিজার্ভের টাকা বের করে নিয়ে গেছে এবং বিদেশে রিজার্ভের টাকা দিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে-কৌশলে তারা বাড়ি-ঘর, অ্যাসেট সব তৈরি করেছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “কালকে একটা পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, শেয়ার মার্কেট, দুর্ভাগ্যক্রমে সাকিবের (সাকিব আল হাসান) নামটাও উঠে এসেছে। একেবারে সারপ্রাইজড, আমি জানতাম না!

“সেটাও এসেছে যে, এসব শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে অনেক বড় বড় রথী-মহারথীরা যুক্ত হয়ে পড়েছেন।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে গত ১৪ নভেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন ফখরুল।

ছয়টি বিভাগীয় সমাবেশ ‘সফল’ করার জন্য নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমের প্রতি ওই সভায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় বলে জানান তিনি।