“সফল মা, আপন দীপ্তিতে উজ্জ্বল নেতা আইভি," বলেন সংসদ উপনেতা।
Published : 24 Aug 2023, 07:33 PM
দুই দশক আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার যে ঘটনা বাংলাদেশ দেখেছে, সেই ২১ অগাস্টের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।
তার ভাষ্যে, “পটকার মত একটা শব্দের ভেতরে এতো মরণ বা মৃত্যু লুকিয়ে ছিল-এটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।"
আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন সংসদ উপনেতা মতিয়া।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, “আল্লাহ যদি তার রহমতের চাদর দিয়ে নেত্রীকে সেদিন রক্ষা না করতেন, তাহলে কোনো অংকেই উনার বাঁচার হিসাব মেলে না। তবুও শব্দে উনার কানের পর্দা ফেটে গিয়েছিল। তার পরও নেত্রী এ শারীরিক কষ্টকে স্পোর্টিংলি নিয়েছেন; এর নামই নেতা।”
শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কথা বলতে গিয়ে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী মতিয়া বলেন, “একটা কবিতা আছে, ‘আমি তোমাকে শ্রদ্ধা করতে চাই, তুমি শ্রদ্ধার যোগ্য হও। আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই, তুমি ভালোবাসার যোগ্য হও’। আমাদের নেত্রী, কার চাইতে বয়সে ছোট, কার চাইতে বয়সে বড়- এটা বড় কথা নয়; উনি শ্রদ্ধার যোগ্য বলেই আজকে সারা বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বরেণ্য নেতাদের ভিত্রে তিনি শ্রদ্ধা কুড়াবার মতো একজন ব্যক্তিত্ব।
“একমাত্র হায়াওয়ান, মানে ওই ধরনের জল্লাদ বা ইত্যাদি …জল্লাদও তো নির্দিষ্ট সে তার যে ডিউটি- তার বাইরে সে কিন্তু হত্যা করে না। কিন্তু ওই যে যারা কী বলব- নরপশু, পিশাচ এরা ছাড়া নেত্রীর এই যে সাধারণ স্বাভাবিকত্ব এবং উদার মানসিকতা, তার (শেখ হাসিনার) যে অদ্ভুত কাছে টানার ক্ষমতা, উনি সবাইকে (কাছে) টানতে পারেন বাংলাদেশের, কিন্তু ওই সমস্ত জল্লাদদেরকে (কাছে) টানতে পারেন নাই। পারার দরকারও নাই, আমি মনে করি ওই চেষ্টা না করাই ভাল।”
প্রধানমন্ত্রীই ‘সত্যিকার অর্থে’ দেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন মন্তব্য করে সংসদ উপনেতা বলেন, “আমরা অনেকেই জানি না যে আমাদের ভোটার লিস্টে আগে বাবার নাম ছিল। ইট ইজ শেখ হাসিনা অ্যান্ড শেখ হাসিনা- যিনি নাকি বাবার নামের সঙ্গে মায়ের নাম ভোটার লিস্টে আনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এটা নিয়ে পার্লামেন্টে কিছুটা বিতর্কও হয়েছিল। সেখানে তিনি পরিষ্কার যুক্তি দিয়েছিলেন যে, হাশরের ময়দানে মায়ের নামে ডাকা হলে ভোটার লিস্টে মায়ের নাম থাকবে না কেন।”
নিজের চোখে দেখা ২১ অগাস্টের বিভীষিকার বর্ণনা দিতে গিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “সেদিন মিছিলে যাব বলে স্টেজ থেকে নেমে আমি সামনের দিকে এগোচ্ছি; এই সময় আইভি বলল যে, ‘আপনি আজকে মেয়েদের সঙ্গে যাবেন’। আমি তখন বললাম, ‘তোমার তো পায়ে ফ্র্যাকচার, তুমি জোরে হাঁটতে পারো না, মিছিলে তো তুমি পুরোটা যাবে না। আজকের মিছিলটা গুরুত্বপূর্ণ, আমি সামনের দিকে যাই’।
“ব্যাংকের সামনের কদম গাছটার সামনে গিয়ে আমি দাঁড়িয়েছি। …আসলে আর্জেস গ্রেনেড সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণাই ছিল না, মনে হয় পটকার মতো সাধারণ শব্দ। তেমন ধোঁয়াও নাই। কাজেই এই যে স্বাভাবিক একটা শব্দের ভেতরে এতো মরণ বা মৃত্যু লুকিয়ে ছিল-এটা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।"
আইভি রহমানের স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান প্রসঙ্গে মতিয়া বলেন, “জিল্লুর ভাই এত উচ্চ স্থানে, তার পিছনে আইভি ছিলেন। সংরক্ষিত মহিলা এমপি উনি হতে চাননি। আইভি বলত, জিল্লুর রহমান সাহেব সামনে আছেন, আমি পিছিয়ে থেকে সব গুছিয়ে দেই। সফল মা, আপন দীপ্তিতে উজ্জ্বল নেতা আইভি।"
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “মির্জা ফখরুলের হতাশা তো কেবল শুরু হয়েছে। আপনারা ভেবেছিলেন, আপনাদের বিদেশি প্রভুরা এসে আপনাদের ক্ষমতায় এসে বসিয়ে দিয়ে যাবে এবং সেই ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে- মুলা ঝুলিয়ে আপনাদের নেতাকর্মীদেরকে উজ্জীবিত করে ভেবেছিলেন- এই আন্দোলন করে হয়তো সরকারের পতন হয়ে যাবে।
“আমরা বহুবার বলেছি এই সরকার আওয়ামী লীগের সরকার, এই সরকার শেখ হাসিনার সরকার। এই সরকারের প্রতি দেশের ৭০-৮০ ভাগ মানুষের সমর্থন আছে। অতএব এই সরকারকে এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলা যাবে না। মানুষের সমর্থন পাওয়া যাবে না, সেটা আজকে প্রমাণিত হয়েছে।"
২১ অগাস্টের হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে হানিফ বলেন, “অপরাধ না করলে কেন তারা জজমিয়া নাটক সাজিয়েছে? সরকার প্রধান হিসেবে প্রতিটি ঘটনার দায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার উপর পড়ে। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস; হাওয়া ভবনে একাধিকবার পরিকল্পনা হয়েছে।"
মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “মির্জা ফখরুল বললেন, ২১ অগাস্টে না জানিয়ে সভাস্থল পরিবর্তন করা হয়েছে, এটা জঘন্য মিথ্যাচার। ১৮ তারিখে জানিয়ে দিয়েছিল মুক্তাঙ্গনে অনুমতি নেই, এজন্য ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সমাবেশ হবে- সেটা ১৯ অগাস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।
“মুক্তাঙ্গনে অনুমতি দেওয়া হয়নি, কারণ ওখানে হয়তো হামলায় সুবিধা করতে পারতো না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে চতুর্দিকে অনেক বিল্ডিং, সেজন্যই ওখানে অনুমতি দেয়।"
আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ বলেন, “এই দেশের মানুষের পাকিস্তানের রাজাকারদের প্রতি কোন সমর্থন নেই। যারা মির্জা ফখরুলদের মতো রাজাকারের শাবক, তারা এই বাংলাদেশকে পিছনে নিয়ে যেতে চায়, পাকিস্তানের ধারায় নিয়ে যেতে চায়; সেই ধারায় তরুণ-যুবকদের কোনও সমর্থন নেই। সাধারণ মানুষেরও কোনও সমর্থন নেই। অতএব আপনাদের হতাশই হতে হবে। আগামী দিনে আপনাদের জন্য আরও চরম হতাশা অপেক্ষা করছে; তার জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকেন।"
তরুণদের ভাবনা প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, “মির্জা ফখরুল বলেছেন, তরুণ সমাজ যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে, এই সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা যাবে না, সুনামি তৈরি করতে হবে। উনি তরুণ সমাজের কোনও ভূমিকা না দেখে খুব হতাশ হয়েছেন। আপনাদের- মিথ্যাচার করে, নাটকবাজি করে, মানুষকে ধোকা দিয়ে, আন্দোলন করে যে মানুষের সমর্থন পাওয়া যাবে না, সেটাও আজকে প্রমাণিত হয়েছে।
“আর আপনারা বলছেন, তরুণ সমাজ-যুব সমাজ আন্দোলনে আসছে না, তাদের ভূমিকা নেই। তারা কেন আসবে? আপনারা বাংলাদেশকে পিছনে নিয়ে যেতে চান; কিন্তু বাংলাদেশকে পিছনে নিয়ে যেতে দেখতে চায় না কেউ। বিশেষ করে আমাদের তরুণ সমাজ-যুব সমাজ তারা তো এগিয়ে যেতে চায়। এখন সময়টাতো এগিয়ে যাওয়ার, তারা ফরওয়ার্ড বাংলাদেশ দেখতে চায়।"
আইভি রহমান মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটির সভাপতি এম এ করিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীন, সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমেদ।