আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় কেউ কেউ ‘ইচ্ছাকৃত সময়ক্ষেপণ’ করেছে বলে যে অভিযোগ বিএনপি করছে, তাকে ‘আজগুবি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা গায়েবানা অভিযোগ। গত বছর আমরা আমাদের মিছিলের পাশ দিয়ে বিএনপির মিছিল যেতে দিয়েছি, তারা ফুল দেওয়ার পর আমরা ফুল দিয়েছি। এতে আমাদের সাড়ে তিন ঘণ্টা বেশি সময় লেগেছিল।
“এ বছর আমরা ফুল দিয়ে ৩০ সেকেন্ড নীরবে দাঁড়িয়েছিলাম, পুরোপুরি এক মিনিটও না, তারপর চলে গেছি। বিএনপি দেরিতে শুরু করেছে এবং তখন শহীদ মিনারে ভিড় হয়ে গেছে। তাদের কে কোথায় বাধা দিল?”
মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা সাড়ে ৭টার দিকে বলাকা ভবন থেকে প্রভাতফেরি নিয়ে গেলে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
“কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম এখানে বারবার উচ্চারণ করা হয়েছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেদী ত্যাগ করেনি, অযথা সময় নষ্ট করেছে। বিষয়টি এখানে দায়িত্বরত পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতা। মহান ভাষা দিবসেও এখানে দলবাজি হয়েছে, এটা দুঃখজনক।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “আসলে একুশের চেতনা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনোটাই বিএনপি ধারণ করে না। তারা একুশে ফেব্রুয়ারি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলে আর সেই স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে রাজনীতি করে যারা আরবি হরফে বাংলা ভাষা চালু করা, রবি ঠাকুরের গান প্রচার নিষিদ্ধ করা, ভাষা ইসলামিকরণের পক্ষে ছিল।”
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ যদি দুই বছরের বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত হয় তিনি নির্বাচন করতে পারেন না। খালেদা জিয়া দুই বছরের অনেক বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না।
“আর সরকার তাকে শর্তসাপেক্ষে ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছে তার স্বাস্থ্য বিবেচনায়। তার শারীরিক অবস্থা এবং বয়স বিবেচনায় তাকে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে অবস্থান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেই শর্ত অনুযায়ী তিনি রাজনীতিও করতে পারেন না।”
তিন গ্রন্থকারের পাঁচ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
এর আগে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কবি ও গবেষক সৌমিত্র দেব রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও শিল্পভাবনা’, গবেষক ও রাজনীতিক শামীমা সুলতানার লেখা ‘শেখ হাসিনা একটি কালজয়ী উপাখ্যান’ এবং ‘শেখ রেহানা এক দীপ্ত শিখা’, তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শেখ মুসলিমা মুন রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্নলোকের নদী’ এবং গবেষণাগ্রন্থ ‘এইচআইভি-এইডস ঝুঁকি ও জেন্ডার সম্পর্ক : বাংলাদেশের নারী যৌনকর্মী’বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এ সময় তিনি বলেন, “ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে যখন একুশে গ্রন্থ মেলা চলছে তখন তিনজন লেখককেই আমি অভিনন্দন জানাই। বই লেখা কঠিন কাজ। ধৈর্য এবং লেখার মুন্সিয়ানা থাকলেই কেবল বই লেখা সম্ভবপর হয়।
“সেই সাথে আমি মনে করি যে, বইগুলোর মান নিয়ন্ত্রণের দিকে একটু আমাদের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ অনেক বই রচিত হচ্ছে, বইমেলায় সেগুলোর মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে, কিন্তু সবগুলোর মান ঠিক আছে কি না সেটি দেখা প্রয়োজন।”