ইসির ‘ভুল সম্বোধনের’ চিঠি নিয়ে ক্ষোভ সিপিবি ও বিএমএলের

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, “এটা রাজনৈতিক দলের প্রতি ইসির এক ধরনের অবজ্ঞা।” আর বিএমএল বলছে, সম্বোধনে ইসির পদবি ভুল করা বাঞ্চনীয় নয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2023, 05:56 PM
Updated : 31 March 2023, 05:56 PM

অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য আট রাজনৈতিক দলকে পাঠানো নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য দেখে ক্ষোভ ঝেড়েছেন দুটি দলের নেতারা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে (সিপিবি) দেওয়া চিঠির শুরুতে দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সকে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু চিঠির মাঝখানের বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে, অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ডাকা হয়েছে বাংলাদেশ মুসলীম লীগকে (বিএমএল)।

আবার বিএমএলকে দেওয়া চিঠিতে দলটির সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর পদ লেখা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। পাশাপাশি দলের কার্যালয়ের ঠিকানাও ভুল করা হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বাক্ষরিত চিঠিতে এমন ভুল নিয়ে শুক্রবার ক্ষোভ জানিয়ে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আমাদের নামে চিঠিটি পাঠিয়েছে। কিন্তু পত্রের ভেতরে আলোচনা ও মত বিনিময়ের জন্য ডেকেছে বিএমএলের নেতাদের। এ ধরনের আমন্ত্রণ জানানো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ইসির এক ধরনের অবজ্ঞা। দলের প্রতি ইসির ন্যূনতম সদিচ্ছা থাকলে এভাবে চিঠি দেওয়া হত না।”

ইসির ডাকে আলোচনায় বসা বা চিঠির জবাব দিতেও অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।

জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সিইসির দপ্তর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে কোনো ধরনের ভুল থাকলে আগামী রোববার পুনরায় দলটিকে চিঠি দেওয়া হবে।

সিপিবির ক্ষোভের বিষয়টিকে সঙ্গত বর্ণনা করে এ কর্মকর্তা বলেন, “আমি খোঁজ নেব। ভুল হলে তা স্বীকার করে আবারও যথাযথভাবে চিঠি পাঠানো হবে।”

বৃহস্পতিবার রাতে সিপিবি চিঠি পেয়েছে জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স বলেন, “এ আমন্ত্রণ তো আমাদের দেওয়া হয়নি, অন্যদলের চিঠি আমাদের দিয়েছে। সংশোধন করে আবারও চিঠি দিলে- তখন দেখা যাবে। তবে ইসির চিঠির জবাবের চেয়ে আমরা বরং কমিশনের কাছে জানতে চাই- সিপিবি বিভিন্ন সময়ে ইসির কাছে ৫৩ দফা সংস্কারসহ এক গুচ্ছ সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাবের বিষয়ে কমিশন কী ভূমিকা নিয়েছে, তা জানার ইচ্ছে আমাদের।”

Also Read: আলোচনার জন্য আরও ৮টি দলকে ইসির আমন্ত্রণ

রাজনৈতিক দলের প্রতি ইসির ‘অবজ্ঞা’র বিষয়ে জনগণই বিবেচনা করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলা হয়, “সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে সংলাপ আয়োজন করা হয়েছিল, আপনার দলসহ কয়েকটি দল সেই সংলাপে অংশগ্রহণ করে নাই। তবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল এর নেতৃবৃন্দের সাথে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে আনুষ্ঠানিক না হলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও মতবিনিময় হতে পারে।“

বিএমএলের আপত্তি, বিএনপির সঙ্গে আলোচনার করে সিদ্ধান্ত

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী বিএমএল সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী জানান, শুক্রবার দলটি সিইসির আমন্ত্রণের চিঠি পেয়েছে।

“আমার নামে চিঠি পাঠানো হয়েছে, আমি সভাপতি। কিন্তু আমার নামের সঙ্গে পদবি লেখা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। আমাদের দলের কাউন্সিল অনুমোদিত- সব কিছু ইসিতে রয়েছে, কমিশনের ওয়েবসাইটেও রয়েছে। এরপরও এ ধরনের ভুল কমিশনের করা বাঞ্চনীয় নয়। করণিক ভুল হলেও আমাদের আপত্তি রয়েছে।”

দলটির যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে তাও ভুল রয়েছে। তাদের বর্তমান ঠিকানা সেগুনবাগিচার স্বজন টাওয়ার হলেও চিঠিতে বনানী মডেল টাউন উল্লেখ করা হয়েছে।

বিএমএল দুই দফা ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি, এবার যে আমন্ত্রণে আসবে তারও কোনো আভাস দেননি দলটির সভাপতি।

জুলফিকার বুলবুল বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা করব। আগেও তো সংলাপে যাওয়া হয়নি, বিএনপি যাচ্ছে না। বিএনপির জোটে না থাকলেও সমমনা দল হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনে আছি। ইসির চিঠি নিয়ে সমমনা দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গেও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের।”

গত ২৩ মার্চ অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বিএনপি ও তার মিত্র দলের নেতাদের নিয়ে আলোচনায় আসার অনানুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ ধরে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সাড়া না পাওয়ার পর সংলাপ বর্জন করা আরও ৮ দলকে বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলাদা আলাদা চিঠি দেন।

সিপিবি ও বিএমএল এ ছাড়া বাকি দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।