রিজভী বলেন, “এই পরিবেশ যে পূর্ব পরিকল্পিত এটা তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেই প্রমাণ হচ্ছে।"
Published : 06 Apr 2024, 04:37 PM
পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তৎপরতাকে ‘বিচ্ছিন্ন কিংবা সাধারণ ঘটনা’ হিসেবে বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও 'প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে' বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ওই সংগঠনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘সবই জানতেন’ মন্তব্য করে, তাকে গ্রেপ্তারেরও দাবি তুলেছেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেছেন, “কুকি-চিনের তৎপরতা বন্ধ করতে হলে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। অন্যথায় ব্যাংক লুট, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনার প্রকৃত রহস্য কখনো জানা সম্ভব হবে না।”
শনিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন রিজভী, সেখানেই পাহাড়ের প্রসঙ্গ আসে।
কেএনএফকে দমন করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের দাবি কেন তোলা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন করা হলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, উনি সব জানেন। উনি বলেছেন, কুকি-চিনদের এখানে অবস্থান ছিল আগে থেকে। এসব বিষয় উনার জানা ছিল। সব কিছু মিলিয়ে আজকে যে সংঘাতময় পরিবেশ, আজকে যে রক্তাক্ত পরিবেশ… এই পরিবেশ যে পূর্ব পরিকল্পিত এটা তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেই প্রমাণ হচ্ছে। সুতরাং তাকে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় তাহলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
গত মঙ্গলবার রাতে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায়। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করে। টাকার পাশাপাশি পুলিশের অস্ত্রও লুট করে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীন তখন রামু উপজেলা পরিষদ এলাকায় মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ছিলেন। হামলাকারীরা মসজিদে ঢুকে তাকে অপহরণ করে।
পরদিন দুপুরে রুমা থেকে ৮৩ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলা সদরে কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা লুট করে তিনটি গাড়িতে আসা একদল সশস্ত্র লোক।
এ নিয়ে দুই উপজেলার মানুষের ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধার করে র্যাব। এর পরপরই থানচিতে পুলিশ ও সশস্ত্র লোকদের মধ্যে ঘণ্টাখানেক গোলাগুলি হয়।
এসব ঘটনায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ এর নাম এসেছে; যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত।
রিজভী বলেন, গত ৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যা ‘একধারে বেশ কৌতুহলোদ্দীপক এবং উদ্বেগজনক’।
“তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, কুকি-চিনের আস্তানা আমাদের র্যাব ও আর্মি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। তারা আমাদের সীমানা পার হয়ে ভিন্ন কোনো দেশে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সেভাবে তারা অবস্থান করছিল। এখন তারা কোত্থেকে আসছে, কীভাবে আসছে… মাঝে মাঝ তাদের প্রতিনিধি এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলে… বলেছিল তারা শান্তি চায়… অনেক কিছুই বলেছিল।
“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে স্পষ্ট প্রমাণিত যে কুকি-চিন সম্পর্কে তিনি অবগত থাকলেও তাদের সম্পর্কে তিনি খোঁজখবর রাখেননি কিংবা রাখার প্রয়োজন মনে করেননি। বরং অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় কোনো এক অজ্ঞাত অজানা কারণে কুকি-চিনকে তোয়াজ করা হয়েছে। কেন কুকি-চিনকে এত তোয়াজ করা হয়েছে এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে আসল রহস্য। দেশবাসী জানে, এই সশ্বস্ত্র বাহিনী প্রশাসনের নাকের ডগায় বেড়ে উঠলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিনের পরিবর্তে পাহাড়ে তথাকথিত জঙ্গি ধরার নাটক করেছে।”
পাহাড়ের পরিস্থিতি উদ্বেগ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, “শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ওপর নির্ভরশীল না থেকে অবিলম্বে এই মুহূর্তে দেশের সীমান্তজুড়ে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন এখন সময়ের দাবি।”
গোয়েন্দা ব্যর্থতা?
বান্দরবানে ব্যাংক লুট ও সশস্ত্র হামলার ঘটনার পেছনে ‘গোয়েন্দা ব্যর্থতা’ রয়েছে বলেও মনে করছেন বিএনপি নেতা রিজভী।
তিনি বলেন, “কুকি-চিন গত দুই দিন ধরে যেভাবে বান্দরবানে থানা-পুলিশ ফাঁড়ি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে, তাতেই এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, এই সশ্বস্ত্র গোষ্ঠী সম্পর্কে দেশের গোয়েন্দারা বেখবর ছিল কিংবা তাদেরকে বেখবর করে রাখা হয়েছিল।”
ওই হামলার জন্য সরকারকে দায়ী করে রিজভী বলেন, “এই হামলা শেখ হাসিনার বিনা ভোটের সরকারের তাবেদারি পররাষ্ট্র নীতির কুফল ছাড়া আর কিছুই না।"
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদসহ আরও অনেকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।