গুলি, জেল আর সহ্য করা হবে না: ফখরুল

মৃত ছেলের নামে মামলা হয় কিভাবে? মুন্সীগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শাওনের বাবার প্রশ্ন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2022, 04:04 PM
Updated : 24 Sept 2022, 04:04 PM

বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সাম্প্রতিক মৃত্যুর প্রসঙ্গে টেনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গুলি করে কিংবা জেলে দিয়ে ‘চলমান অভ্যুত্থান’ ঠেকানো যাবে না।

শনিবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, “কথায় কথায় গুলি করবেন, কথায় কথায় জেল দেবেন, কথায় কথায় আগুন জ্বালিয়ে দেবেন- এদেশের মানুষ তা আর সহ্য করবে না।

“এক শাওনের মৃত্যুতে, আরেক শাওনের মৃত্যুতে, রহিমের বা নূরে আলমের মৃত্যুতে মানুষের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, যে অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে- সেই অভ্যুত্থানকে বন্ধ করা বা দমন করা সম্ভব হবে না।”

সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমি আহ্বান জানাতে চাই- এই দেশকে রক্ষা করবার জন্য; বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বলি না, ক্ষমতায় বসানোর কথা বলি বাংলাদেশের জনগণকে। কারণ এদেশের মালিক হচ্ছে জনগণ।”

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আসুন আজকে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং সমগ্র মানুষদেরকে ঐক্যবদ্ধ করি, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করি, করে একটা দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি করি। যেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করি, পরাজিত করে তাদেরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করি।”

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের পরিষ্কার কথা- এখনও সময় আছে, আপনারা পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে এবং সংসদ বিলুপ্ত করুন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটি জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।

মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মীরকাদিম যুবদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শাওন ‘হত্যার’ প্রতিবাদে বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদল এ সমাবেশ আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “শাওনের বাবা বলেছেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তারা আমাদের দেশের মানুষের অধিকারগুলোকে হত্যা করেছে। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।“

তার অভিযোগ, “মুন্সীগঞ্জে শুধুমাত্র শাওনকে হত্যা করে তারা ক্ষান্ত হয়নি। এরপরে তারা বিএনপির নেতার কারখানা জ্বালিয়ে দিয়েছে, বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং গোটা মুন্সীগঞ্জে তারা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।

“এভাবেই তারা সারাদেশে ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। যারা গত ১৫ বছরে আমাদের ৬শ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে, সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। তারা জাতিসংঘে গিয়ে বলে যে, যুদ্ধ চাই, তারা বলে যে, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কোনো মুখে এই কথা বলেন?”

‘মৃত ছেলের নামে মামলা কীভাবে’

সমাবেশে শাওনের বাবা ছোয়াব আলী ভুঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, “আমার মৃত ছেলের নামে মামলা করা হয়েছে। এটা কিভাবে হয়? আমরা কোন দেশে বাস করি। আমি গরিব মানুষ। আমার ছেলে মিছিলে গেছে, তাকে গুলি করে মারছে। আমি আপনাদের কাছে বিচার চাই- যারা আমার ছেলেকে গুলি করে মারছে, তাদের বিচার করে দেবেন।

“আমার বাড়িতে সমস্যা, বাড়িতে একজনে আমারে হুমকি দিতাছে- এমন কিছু কইতাছে, মামলা করব, এই করব। আমি ভয়ে আছি। আমি আপনাদের কাছে একটা কথা বলি যে, আমার নিরাপত্তা কে দিবো? এখানে এই সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন- আপনারা আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে একজন পিতা তার সন্তানের জন্য বিচার চাইলেন। জনতার কাছে এই বিচার চেয়েছেন। তিনি সরকারের কাছে বিচার চান নাই। কারণ এই সরকার বিচারহীনতায় ভুগছে। এই সরকার চুরি, লুটের সরকার, এই সরকারের কাছে বিচার চেয়ে লাভ নেই- এটা শাওনের পিতা ঠিকই বুঝে নিয়েছে। এখন আর বিচার চাই, প্রতিবাদ আর চাই না, এখন আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে।”

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন ও সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও গোলাম মওলা শাহিন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল।