আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সময় মতো এসে আপনাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করবেন, এটা আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ।
Published : 22 Dec 2023, 10:33 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন না হলে দেশে ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে নিজের নির্বাচনি এলাকায় নোয়াখালী-৫ আসনে কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় এই প্রসঙ্গটি টানেন তিনি।
আবার ওয়ান ইলেভেনের মতো ‘অস্বাভাবিক সরকারের হাতে’ দেশকে তুলে দেওয়ার যড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে কাদের বলেন, “আপনারা নির্বাচন চান, না ওয়ান ইলেভেন চান? যদি নির্বাচন চান দলে দলে এসে ৭ জানুয়ারি সময় মতো আপনারা ভোট দেবেন।”
২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের ১১ দিন আগে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর সেই নির্বাচন আর হয়নি।
জরুরি অবস্থা জারির আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি ছিল বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে। সে সময় নানা দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে আন্দোলনে ছিল। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্ব সে সময়ের ১৭ দলীয় জোট নির্বাচনের পথে ছিল।
দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষের মধ্যে ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তত্ত্বাবধায়কের প্রধানের পদ ছেড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। এরপর শপথ নেয় ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সর্বোচ্চ মেয়াদ ৯০ দিন হলেও সেই সরকার ক্ষমতায় থাকে দুই বছর। আর সেই সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস জয় পাওয়ার পর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারে আমলে ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর বিএনপি যায় আন্দোলনে আর আওয়ামী লীগ বলছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার না পেয়ে ২০১৪ সালের মতো এবারও ভোট বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তবে তাদের দাবি পাত্তা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা আছি, আমরা মাঠ ছেড়ে যাওয়ার দল না। জনগণের সঙ্গে, ভোটারদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ থাকবে, আওয়ামী লীগের কর্মীরা আপনাদের সঙ্গে থাকবে। সময় মতো এসে আপনাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করবেন, এটা আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ।”
যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে তাদের আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগ নেতা। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'বিএনপি নির্বাচনে নেই বলে এখানে খেলোয়াড় নেই? সারাদেশে ১ হাজার ৮৯৬ জন খেলোয়াড় আছে, ফাইনাল খেলা হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।
“বিএনপি পল্টন থেকে দৌড়াতে, দৌড়াতে পালিয়ে গেছে। অবরোধে কাজ হয়নি, অবরোধে রাস্তায় জ্যাম বেড়ে গেছে। বিএনপি ফাউল করে লাল কার্ড খেয়েছে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, “এখন লন্ডন থেকে হাওয়া ভবনের চোরা, অর্থ পাচারকারী, সেও বলে ট্রাক্স দেবে না। সাহস থাকে তো আস, বাংলার রাজপথে মোকাবেলা কর। টেমস নদীর পাড়ে বসে লম্বা লম্বা কথা।”
বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের ডাক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলার জনগণ তাদের সঙ্গে অসহযোগ করবে। বিএনপি আজকে প্ল্যান করছে, খাজনা দেবে না, ট্যাক্স দেবে না। তাদের কথা শুনে ঘোড়াও হাসে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের এ আহ্বানে সাড়া দেবে না।”
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনকে টেকাতে হলে ক্ষমতার মঞ্চে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই মন্তব্য করে কাদের বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে নির্বাচনকে বাঁচাতে হবে, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে বাংলাদেশের লাখো শহীদের রক্তে ভেজা সংবিধানকে বাঁচাতে হবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে, বাংলাদেশের আদর্শকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে।”
দলীয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বানও জানান আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, “যত স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন সবাইকে বলব, নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলুন। ফাউল করলে খবর আছে, ফাউল করলে খবর আছে, আমরা কারো জন্য তদবির করতে পারব না।
“নির্বাচনের আইনে যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সে বাদ হয়ে গেছে। আমরা কারো জন্য তদবির করিনি, কোর্টে তদবির করিনি, কমিশনে তদবির করিনি।”
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের মির্জার সভাপতিত্বে পথসভায় উপস্থিত ছিলেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টু, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহীম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খিজির হায়াত খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী।
প্রচারে নামার আগে রাজাপুর গ্রামের মিয়া বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেন ওবায়দুল কাদের।
এ সময় তার ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাসহ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।