মোখা ধেয়ে আসার আলোচনার মধ্যে শনিবার দেশে রাজনৈতিক ঝড় তোলার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে যে হুমকি এসেছে, তার জবাবে কটাক্ষ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেছেন, বিএনপি কী ‘ঝড়’ তোলে তা দেখার অপেক্ষায় তারা।
রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে এ কথা বলেন কাদের।
বঙ্গোপসাগরে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ধেয়ে আসার মধ্যে শনিবার মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ঝড় আসছে, উত্তাল সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসছে এই বাংলাদেশের বুকে…। আজকে ঝড় শুধু প্রাকৃতিক ঝড় আসছে সেটা মনে করার কারণ নেই।
“রাজনৈতিক ঝড়ও আসছে। এই রাজনৈতিক ঝড় এদেশের মানুষের হৃদয় থেকে নিঃসরিত হয়ে সমস্ত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।”
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ঝড় আসছে, ঝড় আসবে, এর সঙ্গে আমাদের পলিটিক্যাল অপনেন্ট বিএনপির মহাসচিব বলেছেন রাজনৈতিক ঝড় নাকি আসবে।
“মানুষ সৃষ্ট রাজনৈতিক ঝড়ের অপেক্ষায় আমরা আছি। বিএনপির ঝড়ে নাকি শেখ হাসিনা সরকারের পতন হবে। আসলে বাস্তবতা হচ্ছে, এদের এখন আন্দোলন করার, ঝড় তোলার সামর্থ্য নেই। সামর্থ্য নেই বলেই এরা আজকে গলাবাজি করে নিজেদের অক্ষমতাকে ঢাকতে চেয়েছে।”
বিএনপি আন্দোলনের যে পথরেখা দিয়েছিল, সেখান থেকে তারা সরে গেছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। তিনি বলেন, “তাদের ঘরে এখন অনৈক্য। জোটে এখন অনৈক্য। এই জোটে নেতা নেই, এই আন্দোলনের নেতা নেই, এই নির্বাচনের নেতা নেই। নির্বাচন পর্যন্ত সতর্ক পাহারা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা অবস্থান করবে।”
নির্বাচনে আসবে না, তাদের ইচ্ছা
তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিতে বিএনপির যে ঘোষণা, সেটি নিয়েও কথা বলেন কাদের। বলেন, ভোট বানচালের চেষ্টা রুখে দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “নির্বাচনে তারা আসবে না এটা তাদের ইচ্ছা। তবে নির্বাচন হতে দিবে না এমন ধরনের আজকে তারা যে সংকল্প ব্যক্ত করে, তা রুখে দাঁড়াবে!
“আমরাও দেখব, কে কাকে রুখে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন বানচালের সব ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দেব।”
বিএনপি বিদেশি দূতাবাসগুলোতে গিয়ে ‘নালিশ করে দেশকে ছোট করে’ বলেও মন্তব্য করেন কাদের। বলেন, “বিদেশিদের ইচ্ছায় বাংলাদেশের নির্বাচন হবে, এ রকম একটা অবান্তর ধারণা নিয়ে তারা (বিএনপি) এগোচ্ছে।”
বিএনপি ১০ ডিসেম্বরের আগে ক্ষমতার আশা দেখিয়ে নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়েছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ দেয়, সেখানে সাত দিন আগে থেকেই নানাভাবে লেপ, কম্বল নিয়ে পিকনিক মোডে তারা অবস্থান করে। এই ধরনের পরিস্থিতি আমরা দেখেছি।”
অতীতের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বেশি সতর্কতা
গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হলেও পরে ঝড় উপকূলে এসেছে তুলনামূলক কম শক্তি নিয়ে। এবার মোখা নিয়েও ঘটেছে একই ঘটনা।
এটি ‘সুপার সাইক্লোন’ হয়ে যাবে, এমন কথাও বলাবলি হচ্ছিল। কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের বেগ দুইশ কিলোমিটারের মত হলেও শেষ পর্যন্ত অতটা তীব্র ছিল না ঝড়। চট্টগ্রামে এর প্রভাব ছিল আরও কম। রাজধানী ঢাকায় সূর্য ওঠে সকালেই, বিকাল পর্যন্ত দেখা মেলেনি বৃষ্টির।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “অনেক সময় দেখা যায় আমরা খুব বেশি প্রস্তুতি নিয়ে থাকি, খুব বেশি সতর্কতা অবলম্বন করি, বাস্তবে ঘূর্ণিঝড় কেটে যায়। আমরা সেটাই কামনা করি।
“ঘূর্ণিঝড় হলে কত ভয়ংকর রূপ নেয় অতীতে আমরা দেখেছি। এবার আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি।”
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তিদাশ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, উপপ্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপদপ্তর বিষয়ক সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী সভায় উপস্থিত ছিলেন।