“নিজেদের রক্ষা করার জন্য, নিজেদেরকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্য এই ধরনের নাটক তারা সাজিয়েছেন,” বলেন ফখরুল।
Published : 29 Jul 2023, 10:18 PM
বিএনপির কর্মসূচি থেকে নেতাদের আটক করার পর তাদের ফল পাঠানো বা খাবার খাওয়ানোর যেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসছে, তাকে ‘সরকারের নাটক’ বলছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তার ভাষায়, “এটা নাকি ভিসানীতির একটা পরিণতি। কারণ আসলে নিজেদের রক্ষা করার জন্য, নিজেদেরকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্য এই ধরনের নাটক তারা (সরকার) সাজিয়েছেন।”
সরকার হঠানোর এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতের পর সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
নির্দলীয় সরকারের দাবি তুলে সরকার পতন আন্দোলনে নামা বিএনপি শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল। তার পাল্টায় আওয়ামী লীগও সেসব স্থানে অবস্থানের ঘোষণা দেয়।
পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিএনপিকে স্থানগুলোতে দাঁড়াতেই দেয়নি। ধোলাইখাল ও মাতুয়াইলে তাদের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
গাবতলীতে অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির মধ্যে সড়কে শুয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি আমানউল্লাহ আমান।
সেখান থেকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আমানকে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
তার আগে আমানকে দেখতে প্রধানমন্ত্রী তার সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকুকে পাঠান হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। তার মাধ্যমে আমানের জন্য ফল, জুস ও দুপুরের খাবার পাঠান সরকারপ্রধান। সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল।
এদিকে ধোলাইখালে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে সেখান থেকে আটক করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে চার ঘণ্টা রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ডিবি কার্যালয়ে গয়েশ্বরের মধ্যাহ্নভোজের ছবি ও ভিডিও পরে সোশাল মিডিয়ায় ছড়ায়, যেখানে দেখা যায় পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ নিজে হাতে বেড়ে খাওয়াচ্ছেন গয়েশ্বরকে। টেবিলে সাজানো নানা খাবার ও ফল।
এ বিষয়গুলো সামনে এনে সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিবকে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। তিনি জানতে চান, এ বিষয়গুলো বিএনপি কীভাবে দেখছে।
জবাব দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির প্রসঙ্গ টানেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “এখানে মানুষ জেনে গেছে, বুঝে গেছে যে, এগুলো নিজেদের রক্ষা করার জন্য নাটক সাজিয়েছে। এর আগেও এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। সুতরাং এই জিনিসগুলো নেতা-কর্মী ও জনগণ গুরুত্বই দেয় না।”
বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে বিদেশি তৎপরতার বাড়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি আলোচিত রাজনৈতিক অঙ্গনে।
গত দুটি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা ওয়াশিংটন সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে; যেখানে বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে অন্তরায় হবে যারা, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবে না।
সে প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, “আগেও তো অনেক লোককে গ্রেপ্তার করেছে, তাদেরকে নির্যাতন করেছে, ডিবি অফিসে নিয়ে গেছে। তারপর দেখেন আমাকে মির্জা আব্বাস সাহেবকে ডিসেম্বরে নিয়ে গেছে, আমাদের এখানে অনেক নেতা আছেন প্রায় সাড়ে ৪ শ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল। তখন তো আপনার সুস্বাদু আম তাদেরকে খাওয়ানো হয় নাই, ফুলও পাঠানো হয়নি, ফলও পাঠানো হয় নাই।
“এখন পাঠানো হচ্ছে ভিসা নীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য।”
ফখরুল দাবি করেন, সরকার ‘নাটক’ করলেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের ‘সঠিক চিত্রটিই’ তুলে ধরা হচ্ছে।
“আল-জাজিরাতেও দেখবেন খুব স্পষ্ট করে আসল যে ঘটনা, সেটাই বলেছে যে, বাংলাদেশের জনগণ যখন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলন করছে, তখন এসবকে দমন করবার জন্য এই দানবীয় সরকার আবার পূর্বের চেহারায় ফিরে এসেছে, গুম করছে, অত্যাচার-নির্যাতন করছে। এসব করে তারা আন্দোলনকারীদের রুখে দিতে চায়। ইতিহাস বলে সেটা রোখা সম্ভব নয়।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কমিটমেন্ট টু হিজ পার্টি অ্যান্ড পলিটিক্স, এটা প্রমাণ করার প্রয়োজন রাখে না। তিনি তার সারা জীবন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজনীতি করেছেন, বড় হয়েছেন। আমান উল্লাহ আমানকে প্রমাণ করতে হবে না যে রাজনীতির প্রতি, দলের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি…। এই বিষয়গুলো মানুষ নেয় না ভাই।”
এরপর কী
ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে ‘নিপীড়ন-নির্যাতনের’ প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি জানান, সোমবার দেশের সব মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশ করবে বিএনপি।
আওয়ামী লীগ রোববার সারা দেশে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে, সে কারণেই বিএনপি একই দিনে কোনো কর্মসূচি রাখেননি বলে জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা তাদের মত একই দিনে কর্মসূচি দিয়ে সংকট সৃষ্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করব এই গণতান্ত্রিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হবে না।”
সরকার হটানোর এক দফা আন্দোলনে বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, ফখরুলের কাছে তা জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “দুয়েক দিনের মধ্যে আপনারা জানতে পারবেন। আপনাদেরকে জানাব।”
গত ১২ জুলাই একদফা ঘোষণার পর ১৮ ও ১৯ জুলাই মহানগর ও জেলা সদরে পদযাত্রা, ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি করেছে বিএনপি।
পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৈঠকে বসে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এই ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে আসেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামা ওবায়েদ, জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, শাম্মী আক্তার, তাইফুল ইসলাম টিপু, কাজী রওনুকুল ইসলাম টিপু ও আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার মহানগর ও জেলায় বিএনপির জনসমাবেশ