এখন দেখা যাচ্ছে বিএনপি নিজেরাই হটে যাচ্ছে: হাছান মাহমুদ

“বিএনপি যাই বলুক, নির্বাচন যদি তারা বর্জন করে, সেটি তাদের জন্য আত্মহননমূলক হবে,” বলেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2022, 02:55 PM
Updated : 11 Dec 2022, 02:55 PM

দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ‘বাধাগ্রস্ত করতেই’ বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে তিনি বলেন, “বিএনপির সর্বমোট সাতজন সংসদ সদস্য আছে। তারা বলেছিল- সরকারের পদত্যাগ দাবি করবে, ১০ তারিখ সরকার হটিয়ে দেবে, এখন দেখা যাচ্ছে নিজেরাই হটে যাচ্ছে। অর্থাৎ নিজেরাই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে।

“এই ঘোষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, তারা আসলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বাধ্যগ্রস্ত করতে চায়। এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সংসদের কিংবা সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে বিএনপির।”

শনিবার গোলাপবাগের বহুল আলোচিত সমাবেশে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেওয়ার পর পরদিন স্পিকারের দপ্তরে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা।  এ দিন সকালে বগুড়া-৭ আসনের জি এম সিরাজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ এর জাহিদুর রহমান, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা সংসদ ভবনে স্পিকারের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আব্দুস সাত্তার ‘অসুস্থতার’ কারণে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এর হারুনর রশীদ বিদেশে থাকায় সংসদ ভবনে উপস্থিত না হলেও তাদের স্বাক্ষর সম্বলিত পদত্যাগপত্র স্পিকারের হাতে দেন দলীয় হুইপ রুমিন ফারহানা। 

পাঁচজন সশরীরে উপস্থিত থাকায় তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নিয়ে আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করেছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বাকি দুজনের পদত্যাগপত্র যাচাইবাছাই করে পরে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন তিনি।   

হাছান মাহমুদ বলেন, “সংসদে যেখানে সাড়ে তিনশ এমপি সেখানে সাতজন এমপি পদত্যাগ করলে কিছু আসে যায় না। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে উপনির্বাচন হওয়ার কথা। তবে এতে বিএনপি যে সংসদে কথা বলতে পারতো, সেই পথটা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।

“মির্জা ফখরুল সাহেব এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু তাদের হাইকমান্ডের নির্দেশে তিনি শপথ নিতে পারেননি। এতে বরং বিএনপির ক্ষতি হয়েছে। তার মতো একজন বাকপটু নেতা যদি সংসদে থাকতেন, তাহলে বিএনপিরই লাভ হতো।”

বিএনপির সমাবেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “১০ লাখ মানুষের সমাবেশের কথা বলে তারা বড়জোর ৫০ হাজার মানুষের সমাবেশ করেছে। কারণ যে মাঠে গরুর হাট বসে, সেটাই তারা পছন্দ করেছে এবং তার আয়তন হচ্ছে ৫০ হাজার বর্গফুট। একজন মানুষ ঠাসাঠাসি করে দাঁড়ালে কমপক্ষে ৩ বর্গফুট এলাকা লাগে। তাহলে সেই মাঠে কত মানুষ ধরে সেটি সহজেই অনুমেয়। আমাদের থানা সম্মেলনেও অনেক সময় এর চেয়ে বেশি মানুষ হয়।”

বিএনপির ১০ দফা নিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি বলেছিল ১০ ডিসেম্বরের পর একদফা দাবি। এখন দেখতে পাচ্ছি ১০ দফা। দাবিগুলো আমি দেখেছি, এগুলো গতানুগতিক, বহুদিন ধরে বলে আসছে, সেখানে মাত্র আর কিছু নতুন দাবি সন্নিবেশ করেছে। অর্থাৎ বিএনপি সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের পথ পরিহার করতে পারেনি।

“সেই পথ থেকে যতোদিন তারা ফিরে না আসবে ততোদিন বিএনপির কোনো মঙ্গল হবে না। ২৪ তারিখ গণমিছিল ডাকাও দুরভিসন্ধি মনে হচ্ছে, এ দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। সে দিন সারাদেশে সমাবেশ ডাকা দুরভিসন্ধি বলেই আমি মনে করি।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “গতকালও বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, মোটর সাইকেলে আগুন দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে। অর্থাৎ যে দল সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অগ্নিসন্ত্রাস লালন করে, তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।”

বিদেশি রাষ্ট্র ও কূটনীতিকদের মন্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নিজেদের যে রাজনীতি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক মতদ্বৈততা, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা- এগুলো অন্যের কাছে নিয়ে যাওয়া অনুচিত। একইসাথে কূটনীতিকদের অবশ্যই জেনেভা কনভেনশন মেনে চলা উচিত।

“আর আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই, আমরা সবসময় জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আমাদেরকে কোনো বিদেশি শক্তি ক্ষমতায় বসায়নি, কোনো বিদেশি শক্তি এদেশের ক্ষমতার পালাবদলও করতে পারে না। জনগণই এদেশের ক্ষমতার মালিক, আমরা জনগণের শক্তিতে বলীয়ান।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাছান মাহমুদ বলেন, “নির্বাচন আরও এক বছর পরে। তবে বিএনপির যে- কথার ঠিক থাকে না, সেটি প্রমাণিত হয়েছে; তারা নয়া পল্টনের বাইরে যাবে না বলেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলাপবাগ মাঠে গেছে- যেখানে গরুর হাট বসে। তবে বিএনপি যাই বলুক, নির্বাচন যদি তারা বর্জন করে, সেটি তাদের জন্য আত্মহননমূলক হবে।”