“নির্বাচনে কে যোগ্য প্রার্থী, তার বিচার করবে জনগণ; ভোট দিয়েই জনগণ তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন,” বলছেন নৌকার প্রার্থী।
Published : 25 Dec 2023, 10:06 PM
নৌকার মিছিলটি মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড যখন অতিক্রম করছিল, তখন পাশের একটি বাড়ির গেটে ‘প্ল্যাকার্ড' হাতে ‘নৌকা' বলে নাচতে শুরু করল ছোট্ট সারা।
তোমার হাতে কী? সারারউত্তর, ‘নৌকা মার্কা'। পোস্টারের ছবির লোকটিকে চেন? জবাব এল, ‘নানা ভাই'।
সারা যাকে ‘নানা ভাই’ বলছে, তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানক- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। যে মিছিলটিকে ঘিরে সারার এই উচ্ছ্বাস, সেটি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নানকের সমর্থকদের।
নৌকা নিয়ে সারার উচ্ছ্বাস দৃষ্টি এড়ায়নি নানকেরও। বিশাল মিছিলের বহরের মধ্যে গাড়ি থেকে সারাকে উদ্দেশে হাত নাড়েন নানক। সারাও মিষ্টি হাসিতে শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
সোমবার ছিল বড়দিনের সরকারি ছুটি। এ দিন সকাল পৌনে ১১টায় আদাবরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টার থেকে নানকের নির্বাচনি মিছিলটি শুরু হয়। পরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটান নৌকার এ প্রার্থী।
সেই মিছিলটি শিয়া মসজিদ দিয়ে সলিমুল্লাহ রোড পার হয়ে তাজমহল রোডে প্রবেশ করে। এ সময় পথে পথে সমর্থকদের ফুলের মালা আর পুষ্প বৃষ্টিতে সিক্ত হন নানক। এর মাঝেই সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি।
তাজমহল রোডের খেলার মাঠের পাশে যেতেই একটি বাড়ি গেটে উচ্ছ্বসিত দেখা যায় এক নারীকে। রেনুফা নামের ওই নারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা মকবুল এমপির বাড়ি। আমি এখানে কাজ করি।"
আপনি কি এই এলাকার ভোটার? রেনুফা বললেন, “আমার বাড়ি রাজশাহী। ভোটের সময় বাড়ি গিয়ে ভোট দিমু, তবে নৌকায় ভোট দিমু।"
আদাবর রিং রোডের একটি বাড়ির কেয়ারটেকার ৭৮ বছর বয়সী এরশাদ ভুঁইয়া। গেইটের বাইরে চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় এরশাদ বললেন, “অহন তো নির্বাচনে বিএনপি নাই। আওয়ামী লীগ আছে, আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীও আছে। আওয়ামী লীগের মইধ্যে ক্যাডা ভালা, এইডা দেহন যাইব। নির্বাচন ভালোয় অইবো মনে হয়। বিএনপি থাকলে আরও জমতো।”
এরশাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে। ভোট দিতে এলাকায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে তার।
গাছাড়া ভাব প্রতিদ্বন্দ্বীদের
সকাল থেকেই নৌকার মিছিলে প্রকম্পিত হচ্ছিল সূচনা কমিউনিটি সেন্টার এলাকা। জমায়েত হতে থাকেন মোহাম্মদপুর ও শেরেবাংলা থানার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মাইকে অবিরত বাজতে থাকে ‘জিতবে এবার নৌকা' শিরোনামের গত নির্বাচনের আলোচিত গানটি।
কমিউনিটি সেন্টারের ফটকের মুখেই দেখা গেলপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কামরুল আহসান আখন্দের পোস্টার। বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের এ প্রার্থী লড়ছেন দলীয় ফুলের মালা প্রতীকে।
ওই এলাকার টোকিও স্কয়ার মার্কেটের একটি দোকানের কর্মচারী আবিদ আব্দুল্লাহ বলেন, “এই আসনে বিএনপির প্রার্থী থাকলে হইতো কিছুটা লড়াই হত। তবে জাহাঙ্গীর কবির নানকই পাস করবে। আর এবার যে প্রার্থীরা আছে, তারা কেউ নানকের মতো বড় মাপের নেতা না।"
মোহাম্মদপুরেরআদাবর, মোহাম্মদী হাউজিং, তাজমহল রোড, কৃষি মার্কেট এলাকা ঘুরে নানকের পোস্টারই বেশি দেখা গেছে। দু-এক জায়গায় বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির সোহেল সামাদ বাচ্চুর একাতারার পোস্টার চোখে পড়ছে।
তবে সশরীরে অন্য প্রার্থীদের প্রচারণা দেখা যায়নি, দেখা যায়নি ক্যাম্প অফিসও।
জানতে চাইলে ছড়ি প্রতীকের প্রার্থী শাহাবুদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই’ তিনি প্রচার শুরু করবেন।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের এ প্রার্থীর ভাষ্য, তিনি সোশাল মিডিয়ায় ভোটের প্রচার চালাতে চান। সেটির জন্য ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির প্রস্তুতি চলছে।
মোহাম্মদপুর-আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩ আসনে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্ট-বিএনএফের জাহাঙ্গীর কামাল (টেলিভিশন প্রতীক) এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের জাফর ইকবাল নান্টু (মোমবাতি প্রতীক)।
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনে কে যোগ্য প্রার্থী, তার বিচার করবে জনগণ। ভোট দিয়েই জনগণ তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন।”
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, প্রত্যাশা নানকের
সূচনা কমিউনিটি সেন্টার থেকে মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “আগামী ৭ই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে সারা দেশের মানুষ নির্বাচনি উৎসবে রয়েছে। আমার নির্বাচনি এলাকা ঢাকা-১৩ আসনের সকলকে বলব, আপনারা সবাই নির্বাচনি আমজের মধ্যে আছেন। আমি বিশ্বাস করি, এই ভোট উৎসবে এলাকার সকল ভোটাররা অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে ইনশাল্লাহ।”
নির্বাচনে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে তিনি বলেন, “নির্বাচনে সকলকে সংযত হতে হবে। কোনো রকম বিশৃঙ্খলা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
“আমরা দল থেকেও কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে, যারা নির্বাচনেবিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিএনপির অসহযোগের ডাক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্তকরবে কি না, পরে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নেনানক বলেন, “বিএনপি গত ১৫ বছর যাবত আন্দোলন করছে, একের পর এক কর্মসূচি দিচ্ছে। সাতই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি আবার ২০১৪ সালের মতো মানুষ হত্যা, অগ্নি সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়েছে।
“এই মানুষ হত্যা করে, অগ্নি সন্ত্রাস করে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা তা ব্যর্থ করা যাবে না। মানুষ গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখবে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ণরাখবে ইনশাল্লাহ।”