সেনা সদস্যদের লাশের উপর দাঁড়িয়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
তিনি বলেছিলেন, “বহু সৈনিক ও অফিসারদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ৭ নভেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। পরবর্তী সময়ে এই হত্যার রাজনীতির মধ্য দিয়েই বিএনপি দলটির সৃষ্টি হয়।
“সাতই নভেম্বরকে বিএনপি ‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস বলে, কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে- ৭ই নভেম্বর বিপ্লবের অন্তরালে বহু মুক্তিযোদ্ধা নিধন করা হয়েছিল। ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার কলঙ্কিত ষড়যন্ত্রের দিন, বিশ্বাসঘাতকতার দিন, পাকিস্তানি ভাবাদর্শের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টার দিন।”
৭ নভেম্বর স্মরণে মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে যুবলীগ আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দি।
৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, পরে দেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
জিয়া মুক্ত হওয়ার পর সামরিক আদালতের কথিত বিচারে তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। খালেদ মোশাররফ ও তার সঙ্গী মেজর হায়দারসহ অনেককে হত্যা করা হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা।
বিএনপি এই দিনকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’, আওয়ামী লীগ ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ এবং জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে।
শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, “এই দিনকে বিপ্লব বলা আসলে জাতির সঙ্গে একটা তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল হুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল হায়দারসহ বহু সৈনিক ও অফিসারকে হত্যা করা হয়।”
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের উৎখাত করার লক্ষ্যে ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে একটি অভ্যুত্থান হয় উল্লেখ করে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, “অভ্যুত্থানে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে আটক করা হয়। অর্থাৎ খালেদ মোশাররফ সঠিকভাবে জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন এবং আটকও করেছিলেন।
“৭ নভেম্বর বিএনপির জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন ও ১৫ অগাস্ট খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালন একই সূত্রে গাঁথা। বিএনপি মূলত এই দুটি দিবসে বিজয়োল্লাস করে থাকে। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস- বিএনপি ও স্বাধীনতার পরাজিত কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, যারা জিয়াউর রহমানের কল্যাণে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে- এমন কয়েকটি ক্ষুদ্র দল শুধু দিনটি পালন করে থাকে।”
পরশ বলেন, “ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে জিয়াউর রহমান এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেনি। নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করে বন্দুকের নলের ভয় দেখিয়ে বিচারপতি সাত্তারকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ দখল, অবৈধ উপায়ে একইসঙ্গে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন, গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হাঁ-না ভোট করা, সংবিধানকে স্থগিত করে সামরিক ফরমানবলে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে তুলে দেওয়া, রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে নিজেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দল গঠন, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন, তথাকথিত ক্যু’র অভিযোগে শত শত সেনা কর্মকর্তা হত্যা ও হাজার হাজার সেনা সদস্যদের চাকুরিচ্যুতি, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে ১৫ অগাস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করা ছিল তার কুকর্মের লম্বা তালিকা।”
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ক্যু’র মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী এবং বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাস্টারমাইন্ড।
“খুনিরা জানতো, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের যদি কেউ বেঁচে থাকে- তাহলে বাংলার মানুষ আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে। সে কারণে তারা সবাইকে হত্যা করেছিল।”
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, প্রেসিডিয়াম সদস্য মামুনুর রশীদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা,সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন খসরু, মশিউর রহমান চপল, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী।