জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত সংসদ অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর আশ্বাসে পেয়ে আগের দিন বিকালে সংসদ বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সোমবার বিকালে তারা সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন।
এদিন অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য অধিবেশনে যোগ দেন। তবে ঢাকার বাইরে নির্বাচনী এলাকায় থাকায় মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু অধিবেশনে আসতে পারেননি।
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের বদলে দলের চেয়ারম্যান কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত দলটির সংসদ সদস্যরা আর অধিবেশনে যাবেন না বলে রোববার সংসদীয় দলের সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেলেন চুন্নু।
এর আগে সোমবার বিকালে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, স্পিকারের আশ্বাসে সংসদে যাবে জাতীয় পার্টি।
এতে বলা হয়, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি সোমবার এক নির্দেশনায় জাতীয় পার্টির সব সংসদ সদস্যকে অধিবেশনে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
কবে নাগাদ গেজেট প্রকাশের আশ্বাস পাওয়া গেছে, জানতে চাইলে মহাসচিব চুন্নু বলেন, “চেয়ারম্যান অধিবেশনে গেছেন। হয়ত স্পিকারের সঙ্গে জাপা চেয়ারম্যানের কথা হয়েছে। আমি জানি না বিস্তারিত। ঢাকা ফিরেই সংসদে গেলে জানতে পারব।”
এ বিষয়ে জিএম কাদেরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বিরোধীদলীয় নেতার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, স্পিকারের বিবেচনা মতে যে সংসদ সদস্য সংসদে বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসঙ্গের নেতা।
জাতীয় পার্টিকে ‘আশ্বাস দেওয়া' হয়েছে এমন তথ্য স্পিকারের দপ্তর নিশ্চিত করেনি।
স্পিকার কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা অধিবেশনে জানানো হবে।
বেশ কিছু দিন ধরে রওশন এরশাদ ও মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে ঘিরে আলোচনায় রয়েছে জাতীয় পার্টি।
এরমধ্যে গত শুক্রবার বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ পদে রাঙ্গাঁকে অব্যাহতি দেয় জাতীয় পার্টি। সেই চিঠিও স্পিকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির হারুনের চোখে জাপার ‘নাটক’
জাতীয় পার্টির সংসদের অধিবেশনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার ঘটনাকে ‘নাটক’ আখ্যা দিয়ছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।
সোমবার জাতীয় সংসদে উন্নয়ন বোর্ড আইনসমূহ রহিতকরণ বিল উত্থাপনের আপত্তি জানিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি বলেন, “কী নাটক! আমাদের সারা জীবনটাই নাটকের! পত্রিকায় আজকে হেডলাইন আসল, আজকে সংসদে বিরোধী দলের কেউ আসবে না। আবার দেখলাম সব পরিবর্তন।”
স্পিকারের উদ্দেশে হারুন বলেন, “কী অবস্থা, কী হচ্ছে তা জানাতে হবে। কার্যপ্রণালী বিধিতে বিরোধীদলীয় নেতা কীভাবে হবেন, তা বলা আছে। এটি পরিষ্কার হওয়া দরকার। স্পিকার কেন সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না, এখানে কী সমস্যা আছে, এসব জানানো দরকার।”
হারুনের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “উনি খবরের কাগজে দেখেছেন বিরোধী দল আসবে না। আজকে দেখলেন বিরোধী দল এসে গেছে। উনিও বিরোধী দল কন্ট্রোল করেন না। আমিও বিরোধী দল কন্ট্রোল করি না।
“বিরোধী দল গতকাল যদি সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, এই সিদ্ধান্ত তো এমন নয় যে পাল্টানো যাবে না।
উনারাও (জাতীয় পার্টি) উনার বা বিএনপির অঙ্গুলি হেলনে চলে না। সেই কারণেই আজকে উনাদের গাত্রদাহ হয়ে গেছে।”
সংসদে যোগ দেওয়ায় জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদও জানান আইনমন্ত্রী।
আরও পড়ুন