জিয়া ছিলেন পাকিস্তানের ‘গুপ্তচর’: হাছান

“মুক্তিযুদ্ধের আগে এ দেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটেছিল, স্বাধীনতার পরেও তা চলেছিল। ১৯৭৫ সালের পর তা ব্যাহত হয়,” বলেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2024, 01:26 PM
Updated : 29 March 2024, 01:26 PM

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের ‘গুপ্তচর’ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। 

তিনি বলেছেন, “মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর ও দোসর হয়ে কাজ করেছেন। এই সত্য উন্মোচন হওয়ায় বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে।"  

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দুপুরে ‘স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে বা মুক্তিযোদ্ধাদের কোনোভাবে সাহায্য করছে; এমনকি একবেলা খাইয়েছে বা এক গ্লাস পানি খাইয়েছে জানলেও- সেইসব পরিবারের ওপর নেমে আসতো পাকিস্তানি সেনাদের অকথ্য নির্যাতন। 

“আর জিয়াউর রহমান যুদ্ধক্ষেত্রে থাকে, আর তার পরিবার বেগম খালেদা জিয়া দুই সন্তান নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে আরাম-আয়েশে থাকে- এ থেকেই তো পরিষ্কার যে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের দোসর হিসেবে, গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছেন।  

“এর তো আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না। আর জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চিঠিই লিখেছিলেন যে, ‘তোমার কাজে আমরা সন্তুষ্ট, তোমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করো না’। সেই চিঠির কপি আমার কাছেও আছে।" 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, “আজ বিএনপি মিথ্যাচার করে বলে, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা তখন কোথায় ছিল’, অথচ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার আওয়ামী লীগ সরকার- যার রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম- যিনি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ -এই সরকারের অধীনেই জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ৪০০ টাকা মাসিক বেতনে চাকুরি করেছেন। যদিও কোনো সম্মুখসমরে কখনো যান নাই।"

বিএনপি স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করার অনেক চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বিফল হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে ২১ বছর ধরে তারা বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসকে মানুষের কাছে আড়াল করেছে, বিকৃত করেছে। কিন্তু গত ১৫ বছরে মানুষ আবার সঠিক ইতিহাস জেনেছে। 

“১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণাটি পরদিন ২৬ তারিখ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান কয়েকবার পাঠ করেন। এরপর আওয়ামী লীগ নেতারা একজন সেনা অফিসারকে দিয়ে পাঠ করানোর সিদ্ধান্ত নেন।" 

সেসময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাছান বলেন, “চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধরত মেজর রফিকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে- এমবুশ নিয়ে আছেন, নড়লে যুদ্ধের ক্ষতি হবে। তখন এ দেশের মানুষের ওপর হামলার জন্য আসা পাকিস্তানি অস্ত্র সোয়াত জাহাজ থেকে খালাস করতে পাকিস্তানিদের সাথে যাওয়ার পথে জনগণের বাধার মুখে পড়া মেজর জিয়াউর রহমানকে ডেকে এনে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করানো হয়। প্রথম কয়েকবার তিনি ভুল পড়েন, আওয়ামী লীগ নেতারা ঠিক করে দিলে আবার পাঠ করেন।" 

স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজায় যে দপ্তরি, তিনি যেমন ছুটির সিদ্ধান্ত নেন না; তেমনই টিভি-রেডিওতে যিনি উপস্থাপক সংবাদ পাঠ করেন, তিনি ওই সংবাদ সৃজনকর্তা নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণার একজন পাঠকমাত্র। জিয়া নিজেও কখনো নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেননি, যেটি নিয়ে বিএনপি এখন মিথ্যাচার করে।"

সমাজ উন্নয়ন ও পরিবর্তনে, তরুণ সমাজকে বিপথে যাওয়া, জঙ্গিবাদে প্রলুব্ধ হওয়া থেকে বিরত রাখতে সারাদেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটানোর আহবান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।   

তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের আগে এ দেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটেছিল, স্বাধীনতার পরেও তা চলেছিল। ১৯৭৫ সালের পর তা ব্যাহত হয়। 

“এই সভার আয়োজক বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ সকল সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্কৃতিমনা মানুষকে সারাদেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটানোর আহ্বান জানাই।" 

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন জোটের কার্যকরী সভাপতি স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম, কবি রবীন্দ্র গোপ, জোটের সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক মাহমুদ কলি।