ফখরুলের মন্তব্য ‘আদালত অবমাননার’ শামিল: কাদের

ওবায়দুল কাদের বলছেন, দুর্নীতিকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ রূপ দিতে বিএনপি তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের ‘সুরক্ষা’ দিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2023, 10:02 AM
Updated : 31 May 2023, 10:02 AM

দুর্নীতি মামলায় বিএনপির দুই নেতার সাজা ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য ‘আদালত ও সংবিধান অবমাননার শামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, “তিনি (মির্জা ফখরুল) বিজ্ঞ আদালতের রায়কে ‘ফরমায়েশি রায়’ বলে দেশের উচ্চ আদালত এবং পবিত্র সংবিধানকে অবমাননা করেছে।“

দুর্নীতিকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ রূপ দিতে বিএনপি তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের ‘সুরক্ষা’ দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন কাদের।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা এক মামলায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছর এবং তার স্ত্রী সাবেরা আমানের ৩ বছরের সাজার রায় বহাল রেখে মঙ্গলবার রায় দেয় হাই কোর্ট। আরেক মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের কারাদণ্ডও হাই কোর্ট বহাল রাখে।

মঙ্গলবার আমান ও টুকুর বিরুদ্ধে সাজা বহালের রায়কে ‘ফরমায়েশি’ অ্যাখ্যা দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিচার ব্যবস্থাকে দখলে নেওয়ার’ অভিযোগ তোলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুলের ওই বক্তবের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করে বুবধার বিবৃতিতে দেন কাদের।

তিনি বলেন, "উচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলা বিএনপির চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এই ধরনের অপরাধের জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে তাদেরকে অচিরেই জবাবদিহি করতে হবে।"

মির্জা ফখরুলের বক্তব্য ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ মন্তব্য করে কাদের বলেন, "তার (মির্জা ফখরুল) বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে। বিএনপির এই দুই নেতার আজকের পরিণতি তাদের ধারাবাহিক অপরাজনীতিরই ফসল। “বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনমালে হাওয়া ভবন খুলে তারা দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।”

কাদের বলেন, "সে সময় হাওয়া ভবনের কর্ণধার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান বিশ্বগণমাধ্যম ও বিশ্বখ্যাত গোপন নথি প্রকাশকারী সংস্থা উইকিলিকস-এ বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।"

টুকু ও আমানের দুর্নীতির ওই মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই বলেও মন্তব্য করেন কাদের।

তিনি বলেন, “২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবং তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত শাস্তিমূলক রায় দেয়। প্রায় ১৬ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত তাদের সাজা ঘোষণা করে রায় দেয়।”

সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রতিটি নাগরিক আইনের চোখে ‘সমান’ মন্তব্য করে কাদের বলেছেন, এ জন্য ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরাও প্রয়োজনে বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ হত্যা এবং বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সাজা হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

আওয়ামী লীগ সরকার বিচারব্যবস্থাকে ‘স্বাধীন’ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশের বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিএনপিই বিচারব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছিল।

“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা খুনি জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার মধ্য দিয়ে... বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি চালু করে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিচারহীনতার সংস্কৃতির পরিবর্তে দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।"

মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর বিএনপি তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে ‘করুণা প্রাপ্তির’ আশায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ‘অপপ্রচারে’ লিপ্ত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন কাদের।

আরও পড়ুন:

Also Read: ‘ফরমায়েশি রায়’ দিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না: ফখরুল

Also Read: আমানের ১৩ বছর, টুকুর ৯ বছরের সাজা বহাল