ওয়াশিংটন পোস্টের ‘বিজ্ঞাপনে’ খর্ব হয়েছে ইউনূসের ভাবমূর্তি: তথ্যমন্ত্রী

“যেভাবেই হোক ইউনূস সাহেব নোবেল জয়ী। তার পক্ষে এরকম একটা বিবৃতি বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপানো -এটি তার ব্যক্তিত্বকেই খর্ব করেছে। আমার প্রশ্ন- তার এত টাকা কোথা থেকে আসে,” বলেন তথ্যমন্ত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2023, 11:41 AM
Updated : 10 March 2023, 11:41 AM

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিভিন্ন দেশের ৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে ছাপা হওয়া বক্তব্যটিকে ‘বিজ্ঞাপন’ হিসেবেই দেখছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

এই ধরনের ‘বিজ্ঞাপন’কে অভূতপূর্ব হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, এটা ইউনূসের ভাবমূর্তি বাড়ায়নি, বরং ‘খর্ব’ করেছে।

তথ্যমন্ত্রীর ভাষ্য, ওই ‘বিজ্ঞাপন’ ছাপতে বাংলাদেশি মুদ্রায় কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন সেই অর্থের উৎস নিয়ে।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “এটিকে বিবৃতি বলা যাবে না, এটি একটি বিজ্ঞাপন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে ৪০ জনের নামে একটি বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে। বিজ্ঞাপন আর বিবৃতির মধ্যে পার্থক্য আছে।”

গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্টে প্রায় এক পৃষ্ঠা জুড়ে বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হওয়া ওই ‘খোলা চিঠিতে’ ইউনূসের বিভিন্ন পুরস্কার ও কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলা হয়, “গ্রামীণ টেলিকম বা গ্রামীণফোনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হননি মুহাম্মদ ইউনূস। বরং, নিজের প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলোর সঙ্গে দারিদ্র-বিরোধী মিশনে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। ঢাকায় তিনি সাদামাটা জীবনযাপন করেন।

“এটা দেখা কষ্টকর যে, অনবদ্য সততার একজন ব্যক্তি অধ্যাপক ইউনূস ও তার জীবনকর্মকে অন্যায়ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে এবং অব্যাহতভাবে হয়রানি এবং আপনার (শেখ হাসিনা) সরকারের তদন্তে নেওয়া হচ্ছে।”

চিঠিতে বলা হয়, “আমরা আশা করি, টেকসই অগ্রগতির জন্য কীভাবে একটি প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজকে পরিচর্যা করা যায়, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তার রোলমডেল হিসাবে পুনরায় আবির্ভূত হবে।

“এক্ষেত্রে ভালো প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে অধ্যাপক ইউনূসের অর্জনের স্বীকৃতি এবং তিনি যেন কেবল নিজেকে রক্ষার জন্য না লড়ে আপনার দেশ ও বিশ্বের জন্য আরও ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে নজর দিতে পারেন, সেই সুযোগ করে দেওয়া।”

এ চিঠির লেখকদের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৪০ জন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের নাম রয়েছে।

তাদের মধ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, এডওয়ার্ড কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়র, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস রয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এই চিঠিকে ‘ফন্দিফিকির’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক আয়োজনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি বলব এগুলো একেবারে অলীক। মানে বস্তুনিষ্ঠ হয় নাই।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ড. ইউনূস বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক। তার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, এইভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিবৃতি আমি বাংলাদেশে দেখি নাই। বিশ্ব অঙ্গনেও এরকম হয় কিনা জানি না।

“এরকম বিবৃতি কেনা বা বিজ্ঞাপন দিয়ে বিবৃতি, সেটাকে আবার কোটি টাকা খরচ করে প্রকাশ করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন। যেভাবেই হোক, ইউনূস সাহেব নোবেল জয়ী। তার পক্ষে এরকম একটা বিবৃতি বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপানো- এটি তার ব্যক্তিত্বকেই খর্ব করেছে। আমার প্রশ্ন- তার এত টাকা কোথা থেকে আসে?”

বিএনপির ‘অব্যাহত চেঁচামেচি বৃথা’

বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাই, মানুষের কথা বলার অধিকার নাই’ বলে বিএনপি ক্রমাগতভাবে যে অভিযোগ করে আসছে, তাকে ‘অব্যাহতভাবে চেঁচামেচি’ হিসেবে বর্ণনা করেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়েছে। তার মানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা অব্যাহত আছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রগতি হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস প্রকাশিত বিশ্ব গণতন্ত্রচর্চা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে এবার।

২০২১ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৭টি দেশের মধ্যে ৭৫ নম্বরে। সেবার বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৯৯। এবার বাংলাদেশ উঠে এসেছে ৭৩ নম্বরে, যদিও স্কোরের উন্নতি হয়নি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি নেতারা প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা কথা বলে, সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অহেতুক সমালোচনা করে যে বলেন, ‘আমাদের কথা বলার অধিকার নাই’, সেটি যে অসার মিথ্যা, সেটি ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

“অর্থাৎ বাংলাদেশে গণতন্ত্রচর্চা অব্যাহত রয়েছে। এটি আরও হত যদি বিএনপি সঠিকভাবে গণতন্ত্র চর্চা করত।”

‘বিএনপির অভ্যন্তরেই গণতন্ত্র নাই' মন্তব্য করে হাছান বলেন, “তাদের সর্বশেষ সম্মেলন কখন হয়েছে সেটা তারা নিজেরাও বলতে পারে না। এক কলমের খোঁচায় বিএনপিতে নেতা হয়, আবার এক কলমের খোঁচায় বাদ যায়।”

‘রশি টান দিলে কোমর ভাঙবে বিএনপির’

'সরকারের রশি ধরে টান দেয়ার সময় এসেছে' বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য দিয়েছেন, তারও জবাব দেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “তারা তো রশি ধরে টান দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর। সরকারকে রশি ধরে টান দিতে গিয়ে সেই রশি ছিঁড়ে পড়ে গিয়ে তাদেরই কোমরটা ভেঙে গেছে। এখন আবার টান দিতে গেলে তাদের কোমর আরো ভেঙে যাবে।”

তিনি বলেন, “এটা মনে রাখতে হবে সরকারের ভিত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভিত অনেক গভীরে প্রোথিত। এই রশি টানাটানি ১৪ বছর ধরে তারা করেছে, এতে তাদের কোনো লাভ হয়নি বরং নিজেরাই বারবার রশি ছিঁড়ে পড়ে গেছে।”