উপ নির্বাচনে ভোটার ৫% এর বেশি নয়, দাবি ফখরুলের

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অনলাইনে দেখেছি… কুকুর শুয়ে আছে, মানুষ নাই।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2023, 01:14 PM
Updated : 2 Feb 2023, 01:14 PM

দলের ছেড়ে দেওয়া ছয় আসনের উপ নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ৫ শতাংশের বেশি ছিল না বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বুধবারের নির্বাচন নিয়ে এমন কথা বলেন।

তিনি বলেন, “এই উপ নির্বাচনগুলোতে ভোটারের সংখ্যা কোথাও তাদের (ইসি) হিসাব মতে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি হয় নাই।

“আর আমাদের (বিএনপি) হিসাব মতে- এটা ৫ শতাংশের বেশি হয় নাই। আজকে পত্র-পত্রিকাগুলোতে যে ছবিগুলো আসছে দেখবেন একেবারে ২০১৪ সালে… শফিউল আলম প্রধানের (প্রয়াত জাগপা প্রধান) ভাষায় কুত্তা মার্কা নির্বাচনের মতই।”

গত বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২, চাপাইনবাবগঞ্জ- ২, ঠাকুগাঁও- ৩, বগুড়া- ৪ ও ৩ আসনে উপ নির্বাচন হয়। ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ থেকে গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে এসব আসন শূন্য হয়।

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অনলাইনে দেখেছি… কুকুর শুয়ে আছে, মানুষ নাই। এই অবস্থায় তারা (সরকার) নিয়ে চলে গেছে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে।”

দেশে লুট-দুর্নীতি বিস্তার লাভ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, লাগামহীন দুর্নীতি করে বিশ্ব মন্দার কথা বলে কোনো লাভ নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রত্যেকটি দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে।

“চালের দাম আপনারা (সরকার) বাড়াচ্ছেন, লবনের দাম, তেলের দাম আপনারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। আজকে বিদ্যুতের দাম দুইবার, তিনবার, চারবার, পাঁচবার… ১৫ বার বাড়িয়েছেন। কিন্তু বিদ্যুতে যে চুরি আপনারা করছেন সেই চুরি বন্ধ করলে তো বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয় না। গ্যাসে যে চুরি আপনারা করছেন সেই বন্ধ করলেও দাম বৃদ্ধি করতে হয় না।”

সংসদে সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল জানান, শুধু জাপানকে নয়, তারা অনেক দেশকে চিঠি দিয়ে সরকারের লুটপাট, দুর্নীতি ও গুমের বিষয়গুলো জানিয়েছেন। এ বিষয়টি সত্য।

২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন, সংসদে প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, “এদেশে চলমান যে শাসনব্যবস্থা, আওয়ামী লীগ সরকার- তারা যে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে মানুষের উপরে অন্যায় অত্যাচার করে, দুর্নীতি-লুটপাটের মধ্য দিয়ে মানুষের পকেট কেটে নিয়ে তারা দেশকে ধ্বংস করছে।

“তারা যে সম্পূর্ণ এনফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স করে রাজনৈতিক কর্মীদেরকে হত্যা করছে, গুম করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে প্রতি মুহূর্তে প্রতিনিয়ত- এ বিষয়গুলো তো অবশ্যই আমরা সারা পৃথিবীকে জানিয়েছি।”

সংবাদ সম্মেলনের আগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে এ যৌথসভা হয়।

এতে সরকার হটানোর ১০ দফা দাবিতে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মুনির হোসেন, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, আবদুল হালিম মিঞা, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, যুবদলের মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসকে জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের কাজী আলমগীর হোসেন, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, জাসাসের লিয়াকত আলী, জাকির হোসেন, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল উপস্থিত ছিলেন।

গণফোরাম-এলডিপি-পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক

ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে হটাতে যুগপৎ আন্দোলনে জোরদারের কর্মকৌশল ঠিক করতে গণফোরাম, এলডিপি ও পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠকের পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে আরও কীভাবে বেগবান করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা আলোচনা করেছি। ভবিষ্যতে কর্মসূচি অর্থাৎ ৪ তারিখ আমাদের যে সমাবেশের কর্মসূচি আছে সেই কর্মসূচির পর কী কর্মসূচি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছি।”

গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, “আমাদের আন্দোলন অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হবে। আমরা সবাই ঐক্যমতে পৌঁছেছি যে, চলমান আন্দোলন আমরা একসাথে করব, আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। কোনো অবস্থাতে আমরা পিছপা হবো না।”

বৈঠকে গণফোরামের প্রতিনিধি দলে সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ, এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক সরকার, পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সর্দার চাখারী, মহাসচিব আবদুল কাদের, কো-চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রনো ও প্রেসিডিয়াম সদস্য বিলকিস খন্দকার, আবু তালেব সরকার ছিলেন।

বিএনপির প্রতিনিধি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল উপস্থিত ছিলেন।

সন্ধ্যায় এলডিপির লিয়াজোঁ কমিটির সাথে বৈঠক হয় বিএনপি মহাসচিবের। এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ন আহমেদের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল  বৈঠকে অংশ নেন।