রোহিঙ্গাদের সংকটের পাঁচ বছরপূর্তি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
Published : 25 Aug 2022, 06:30 PM
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সংকটের পাঁচ বছরপূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একার সংকট নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকট যে একটি বৈশ্বিক সংকট, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সে বিষয়ে যথাযথভাবে কনভিন্স করতে পারেনি।
“বিশ্বের অন্যান্য মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সাড়া দেয় বা তৎপর হয়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা সেভাবে এগিয়ে আসেনি। এটা নিঃসন্দেহে সরকারের চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না।”
ফখরুল বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যার মূল চ্যালেঞ্জ তথা নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াটি একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার তাদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সংকটকে এখন আর গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না বিশ্ব।
“২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুটি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। এই পটভূমিকায় বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি এখন আগের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক মহল আরও কার্যকরী ও ফলপ্রসূ চাপ না দিলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব নয়।”
২০১৭ সালের ২৪ অগাস্ট নতুন করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর আগে থেকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বড় একটা অংশ আশ্রয় নিয়েছিল।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সংকটের শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন অনির্বাচিত সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি রাখাইনে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কোনো কার্য্কর চাপ সৃষ্টি করতে সরকার পারেনি। একজন রোহিঙ্গা শরনার্থীকেও তারা (সরকার) রাখাইনে পাঠাতে পারেনি।
“শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিনের এই সমস্যাকে কার্য্করভাবে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে না পারা নিঃসন্দেহে সরকারের চরম ব্যর্থতা বলে আমরা মনে করি।”
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকে শুধুমাত্র কাগুজে চুক্তিতে বন্দি না রেখে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তির কার্য্কর প্রয়োগের পথে এগুতে হবে। এই সংকট সমাধানে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা, বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর স্ব স্ব ভূমিকা সুনিশ্চিত করতে হবে। কার্য্কর কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে জাতিসংঘসহ আঞ্চলিক মহলকে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা উপলব্ধি করাতে হবে।”
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিদেশ সফরও করেননি বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশ শুধু অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সামাজিকভাবে বড় ধরনের ভয়ের কারণ আছে। যেটা আপনারা বুঝতেই পারছেন। এই সরকারের চরম ব্যর্থতা যার মূল হচ্ছে, তাদের নেগোসিয়েটিং ক্যাপাসিটি নেই।”
আরও পড়ুন:
রোহিঙ্গা সঙ্কটের ৫ বছর: আটকে প্রত্যাবাসন, চিন্তা বাড়াচ্ছে জন্মহার
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: এক বছর পর বৈঠক হল মিয়ানমারের সঙ্গে