রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দীর্ঘ এক বছর পর মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
Published : 27 Jan 2022, 09:08 PM
বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশের নবগঠিত ‘অ্যাড-হক টাস্কফোর্স ফর ভেরিফিকেশন অব দ্য ডিসপ্লেসড পার্সনস ফ্রম রাখাইন’ এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
অন্যদিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির ইমিগ্রেশন ও পপুলেশন মন্ত্রণালয়ের উপ-মহাপরিচালক ইয়ে তুন ও।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা রাখাইনের বাসিন্দা ছিলেন কি না, সেই যাচাই বাছাইয়ে দেরির কারণ খুঁজে বের করতে কারিগরি পর্যায়ের এই আলোচনায় নিজেদের সদিচ্ছার কথা তুলে ধরেছে উভয়পক্ষ।
২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর এটি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম বৈঠক।
ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পরের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দুই দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে। কিন্তু এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির শুরুতে মিয়ানমারে অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা।
ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আগে সরকার বলেছিল, ছয় দফায় মোট ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ, যার মধ্যে মাত্র ৪২ হাজারের ‘ভেরিফিকেশন’ শেষ করেছে মিয়ানমার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ে মিয়ানমারের দিক থেকে ধীরগতির বিষয়ে ‘হতাশা প্রকাশ করেছেন’ প্রত্যাবাসন কমিশনার রেজওয়ান হায়াত।
দ্রুততার সঙ্গে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত তিনটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাবও তিনি দিয়েছেন।
বৈঠকে রেজওয়ান হায়াত বলেন, আটকে থাকা ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে জটিলতা ও ঘাটতি দূর করতে পারলে বাস্তুচ্যুত মানুষদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে। এক্ষেত্রে রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের মাঝে আস্থা ফেরানোও দরকার।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ থাকার পরও রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মানবিকতা দেখিয়েছেন’ বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন প্রত্যাবাসন কমিশনার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কারিগরি জটিলতা ও তথ্যের ঘাটতির কথা তুলে মিয়ামনারের প্রতিনিধি দল বৈঠকে অনিষ্পন্ন ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শেষ করতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করতে টাস্কফোর্স কার্যকর থাকবে বলে ইয়ে তুন ও আশা প্রকাশ করেছেন।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।