রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার বসবে ইসি

ইসি এখন নির্বাচনের ‘রোড ম্যাপ’ করবে, এরপর ডাকবে দলগুলোকে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2022, 03:36 PM
Updated : 1 August 2022, 03:36 PM

নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ মাত্রই শেষ করেছে ইসি, এখন ভোটের ‘খসড়া কর্মকৌশল’ নিয়ে আবার বসার প্রয়োজন বোধ করছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ‘রোড ম্যাপ’ তৈরির পর রাজনৈতিক দলগুলোকে পুনরায় ডাকা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

এই খসড়া তৈরি করতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত লাগতে পারে, এরপরই হবে দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফা সংলাপ।

দায়িত্ব নেওয়ার পাঁস মাসের মধ্যে অংশীজনের মতামত নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি। এর মধ্যে দুই দফা নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে বসেছে।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত বেশিরভাগ দল ইসির ডাকে সাড়া দিলেও বিএনপিসহ কয়েকটি দল সংলাপ বর্জন করায় খানিকটা অস্বস্তি রয়েছে ইসির মধ্যে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতিবাচক অনেক দিক রয়েছে সংলাপে। কিছু দল না আসাটা এ সংলাপের ঘাটতি। সংলাপ বারবার চালিয়ে যেতে হবে। সরকারের সঙ্গেও সংলাপ করতে হবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে ২০২৩ নভেম্বরে। ভোট হবে আগামী বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে।

বর্তমান ইসি ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্চ থেকে মে মাসে শিক্ষাবিদ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন পযবেক্ষক, গণমাধ্যম সম্পাদক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নানা পেশাজীবীর মতামত নেয়।

জুন মাসে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়। এতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি দল মতামত দিয়েছে, দুটি দল কমিশনের সঙ্গে বসে সময় নষ্ট না করার অজুহাতে লিখিতভাবে মতামত পাঠিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে বিএনপিসহ ১১টি দল আসেনি।

জুলাই মাসে নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্মুক্ত আলোচ্যসূচি নিয়ে সংলাপ ডাকে ইসি। বিএনপিসহ সাতটি দল সংলাপ বর্জন করে। দুটি দল পরে বসবে বলে জানিয়েছে। দুটি দল সংলাপে না এসে মতামত জানিয়ে দেয়।

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বাকি ২৮ দলের সংলাপে সব মিলিয়ে তিন শতাধিক প্রস্তাব আসে ইসির কাছে।

Also Read: ইসির সংলাপে ২৬ দলের ৩ শতাধিক প্রস্তাব

Also Read: ৩০০ আসনে ইভিএম চায় আওয়ামী লীগ

Also Read: ব্যালট সকালে কেন্দ্রে পাঠালেই রাতের বিষয়টা আসে না: চুন্নু

সংলাপে ‘ঘাটতি’

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ইসির সঙ্গে যে সংলাপ দেখলাম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, এতে বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি। এটা ভালো কোনো দিক না। এটা সংলাপের একটি ঘাটতি। তাদের মতামত, অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

সংলাপে ইসির প্রস্তুতিতেও কিছু ঘাটতি দেখছেন তিনি। তার মতে, সংলাপের আগে নিজেরা ওয়ার্কশপ করে, হোমওয়ার্ক করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নানা দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেগুলো যদি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে হাজির করতে পারত, তাহলে ভালো হত।

আলীম বলেন, “সংলাপে সফল বা অসফল বলব না; যে কোনো কাজের ভালো দিক, খারাপ দিক থাকে। সংলাপে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এসেছে। এখানে যেহেতু কোনো এজেন্ডা ছিল না; তাই অপ্রাসঙ্গিক অনেক বিষয়ও চলে আসে।”

তবে এমন সংলাপ চালিয়ে গেলে তা ইসির উপর দলগুলোর আস্থা তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।

“এক দফা, দুই দফা নয়, ইসিকে সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। আগামীতে রোডম্যাপ করবে; সেক্ষেত্রে খসড়া রোডম্যাপ নিয়ে আবার দলগুলোকে ডাকতে হবে। নির্বাচন করবে ইসি; এখন এরমধ্যে যদি দল না থাকে, অন্য স্টেকহোল্ডার না থাকে- তাহলে তো হবে না। এজন্যে দলগুলোকে যত বেশি ইনভলবড করা যায়, যত বেশি আলোচনা করা যায়, তাতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।”

সরকারের সঙ্গেও ইসির সংলাপের উপর জোর দিচ্ছেন এ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ তো রুলিং পার্টি। সরকারের সঙ্গে বসতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে চিঠি দিতে পারে- সরকারের সঙ্গে বসতে চাই, কথা বলতে চাই। মন্ত্রী না হলেও সচিবদের সঙ্গে বসবে। তারাই সরকারের কাছে বার্তা দিয়ে দেবে।”

এর কারণ ব্যাখ্যা করে আলীম বলেন, “নির্বাচনের সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার হচ্ছে সরকার। কারণ, সরকারের সাপোর্ট ছাড়া পৃথিবীর কোনো নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে নির্বাচন করতে পারবে না।”

রোববার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের এক পর্যায়ে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, “আমরা একই সাথে সরকারের সাথে সংলাপ করছি, আওয়ামী লীগের সাথেও সংলাপ করছি। সরকারকেও অ্যাড্রেস করতে পারছি। পার্টি হিসেকে আওয়ামী লীগকেও অ্যাড্রেস করতে পারছি।”

তবে সিইসির কথার বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, সরকার নয়, তারা দল হিসেবেই এই সংলাপে এসেছেন।

‘রোড ম্যাপ’ অক্টোবর নাগাদ

নির্বাচন কমিশনার আলমগীর সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, সংলাপের আলোচনা পর্যালোচনা করে তার ভিত্তিতে নির্বাচনী পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। এরপরই রাজনৈতিক দলগুলোকে পুনরায় ডাকা হবে।

তিনি বলেন, “আমরা সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক দলের সাথে যে আলোচনা করেছি, সেই আলোচনার পর্যালোচনা করে আমরা কর্মকৌশল তৈরি করব। এই রোড ম্যাপের খসড়া তৈরি করতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময় লাগতে পারে।”

তা নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে জানিয়ে আলমগীর বলেন, “আমরা আবারও মতামত নেওয়ার চেষ্টা করব। তখন হয়ত আলাদা আলাদাভাবে ডাকা হবে না। একটা হয়ত ওয়ার্কশপের মাধ্যমে মতামত নেওয়া হতে পারে।”

দলগুলোর মতামতের আলোকেই ‘রোডম্যাপ’ চূড়ান্ত করে তা ধরে নির্বাচনের পথে এগোবেন বলে জানান তিনি।

এ নির্বাচন কমিশনার জানান, এ সংলাপে তার দৃষ্টিতে তিন ধরনের বিষয় এসেছে। এরমধ্যে কিছু প্রস্তাব ইসির এখতিয়ারের বাইরে, কিছু প্রস্তাব আইন সংস্কারে এবং কিছু প্রস্তাব ইসির এখতিয়ারের মধ্যে।

এখতিয়ারের বাইরের প্রস্তাবের বিষয়ে কিছু করার সুযোগ ইসির নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তবে এক্ষেত্রে কমিশন একমত হলে সে প্রস্তাবগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। তারা সেগুলো আমলে নেবেন কি না, সেটা তাদের বিষয়।

যে প্রস্তাবগুলো আইন-সংবিধান অনুযায়ী ইসির এখতিয়ারের ভেতরের, সেগুলো নিয়ে ইসি কাজ করবে বলে জানান আলমগীর।

বাকিগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, “কিছু কিছু সুপারিশ এসেছে, যেগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন। সেগুলো আইনসম্মত হলেও, বাস্তবসম্মত নয়। আর কিছু ভালো প্রস্তাব আছে, যেগুলো বাস্তবসম্মত, তবে কিছু আইন পরিবর্তন করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা আইন পরিবর্তনের প্রস্তাব করব।”