“আজকে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সুযোগ নিয়েছে…। এখন কে যেন বুদ্ধি দিয়েছে সরকারকে আমাদের ডাক্তাররা কেনে সুযোগ নেবে না?”
Published : 28 Mar 2023, 05:11 PM
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ জনগণের কোনো উপকারে আসবে না বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
‘সরকার দলীয় চিকিৎসকদের পকেট ভারী’ করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন বিএনপির এই নেতা।
সরকার নতুন নিয়ম করেছে, বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে হাসপাতালে বসেই ব্যক্তিগত রোগী দেখতে পারবেন। একজন চিকিৎসক সপ্তাহে দুদিন বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নির্ধারিত ফির বিনিময়ে রোগী দেখতে পারবেন।
এর সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আপনারা দেখেছেন, একটা সার্কুলার দিয়েছে, আগামী ৩০ মার্চ থেকে নাকি সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা সেই হাসপাতালে বসে বিকাল ৩টার পর থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন। দেখেন… এখানেও দলীয়করণ, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত ডাক্তারদের অতিরিক্ত সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এই প্রাইভেট প্রাকটিসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটা রোগীদের জন্য কোনো উপকারে আসবে না, রোগীদের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।”
বরং সাধারণের ভোগান্তি ‘বাড়বে’ আশঙ্কা প্রকাশ করে মোশাররফ বলেন, “এটা হচ্ছে এই সরকারের যারা সমর্থন করে, এদেশের একটি গোষ্ঠীর চিকিৎসকদের পকেট ভারী করার জন্য এই ধরনের একটি ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে সাধারণভাবে এই সরকারি হাসপাতালগুলোতে… এমনিতেই সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পায় না, এখন কিন্তু তাও পাওয়া যাবে না।”
বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ বলেন, “যেসব হাসপাতালে এটা (প্রাইভেট প্র্যাকটিস) হবে, দেখা যাবে যে চিকিৎসার জন্য একজন রোগী ১০ টাকার টিকেট কেটে এসেছেন, দেখবেন যে ওই ডাক্তার উপস্থিত নাই। ওই ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে ব্যস্ত আছে, ওই চিকিৎসক ওয়ার্ডে ব্যস্ত আছেন। বলা হবে যে, বিকাল ৩টার পরে আসেন।
“৩টা পরে গেলে প্রাইভেট ফি দিয়ে ওই ডাক্তারকে ওই রোগী দেখাতে পারবেন। অর্থাৎ আজকে সমাজে যে পচন সেই উপর থেকে নিচে পর্যন্ত তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।”
স্বাস্থ্য খাতে ‘বিশৃঙ্খলার’ জন্য সরকারের ‘অদক্ষতা ও অযোগ্যতাকে’ দায়ী করে মোশাররফ বলেন, “এই খাতের বিপর্যয়ের জন্য সরকারই দায়ী। এই ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধবংস করে ফেলা হয়েছে। কেন? অন্যতম কারণ দলীয়করণ।”
ধনী-গরীবের বৈষম্য বাংলাদেশে সবচেয়ে ‘বেশি’ মন্তব্য করে মোশাররফ বলেন, “এই অবস্থায় আজকে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সুযোগ নিয়েছে…। এখন কে যেন বুদ্ধি দিয়েছে সরকারকে আমাদের ডাক্তাররা কেনে সুযোগ নেবে না?
“দলীয়করণ করেই ওরা ক্ষান্ত হয়নি। যোগ্য, দক্ষ চিকিৎসকরা তাদের নিজের জায়গায় স্থান নেই। তাদেরকে এমন জায়গায় পোস্টিং দিয়ে রাখা হয়েছে যে, সেখানে তাদের কোনো কাজ নেই।…একদম সেই সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে তৃণমূলে উপজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত আজকে শুধু মাত্র দলীয়করণের কারণে সব কিছু বিপর্যস্ত।”
সরকারের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আজকে দেশ উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এটা এখন দূষিত বাতাস হয়ে গেছে। এই দুর্নীতি কেন? আওয়ামী লীগের সেই গোষ্ঠী তাদেরকে ধনী থেকে ধনী বানানোর জন্য দুর্নীতির বিস্তার হচ্ছে।”
খন্দকার মোশাররফ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, “আজকে জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা মনে করে এই সরকার কোনো কিছুই ঠিক করতে পারবে না, মেরামত করতে পারবে না।
“অতএব তাদের (বর্তমান সরকার) যত দ্রুত বিদায় করা যায় তত জাতি ও দেশের জন্য কল্যাণকর। তাই পেশাজীবীরা যারা এখানে আছে আপনারা যার যার অবস্থান থেকে যত দ্রুত এই সরকারকে সরিয়ে দিতে সক্রিয় হবেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণঅভ্যুত্থানে জন্য প্রস্তুতি নেবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।”
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশসের এম এ হানিফ, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভানেত্রী জাহানারা সিদ্দিকী, ফিজিও থেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাহতাব উদ্দিন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বিপ্লব-উজ-জামান বিপ্লব, ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. আবদুস সেলিম, মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, জহিরুল ইসলাম শাকিল, শহিদ হাসান, সিরাজুল ইসলাম, পারভেজ রেজা কানন, শহিদুল হাসান, আদনান হাসান মাসুদ, সায়ীদ মেহবুব উল কাদির বক্তব্য দেন।