“আমাদের সঙ্গে সরকারের কোনো সমঝোতা নেই”, বললেন দলটির নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
Published : 15 Jul 2023, 08:43 PM
বিএনপির সঙ্গে দূরত্বের কথা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আনার পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী দাবি করল, আওয়ামী লীগের সঙ্গেও তাদের কোনো সমঝোতা হয়নি।
জামায়াত জানিয়েছে, তাদের আমিরের গ্রেপ্তারে বিএনপি নিশ্চুপ থাকায় তাদের কর্মীরা ‘আহত’ হয়েছেন। এ কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকলেও তারা বিএনপির ‘পথে নেই’।
তবে ভবিষ্যতে তাদের পথ আবার মিলতে পারে, সে আভাসও দিয়ে রেখেছে দুই দশক ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকা দলটি।
শনিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের প্রশ্নে তাদের বর্তমান অবস্থান প্রকাশ করেন।
এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না: ইইউকে জামায়াত
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াত ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হলেও কয়েক বছর ধরে তাদের সম্পর্ক আগের মতো নেই।
২০২২ সালে কুমিল্লায় একটি ইউনিটের রুকন সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেছিলেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট আর নেই। তবে তারা যুগপৎ আন্দোলনে আছেন।
জোট ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমে কিছু স্বীকার করা হয়নি। তবে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দুই দিন আগে করা সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এরপর বিএনপি যখন যুগপৎ কর্মসূচি গ্রহণ করে, তাতেও জামায়াত থাকে অনুপস্থিত। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দলের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ জানান, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কর্মসূচি নেওয়ায় তারা বিএনপির সঙ্গে মাঠে নামছেন না।
তবে গত ২ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল দাবি করেন, জামায়াত তাদের সঙ্গেই আন্দোলনে আছে।
সেদিন তিনি বলেন, “সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে যুগপৎভাবে জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রয়েছে। এই নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।”
দুই সপ্তাহ পর জামায়াতের নায়েবে আমির তাহের সেই বক্তব্যের বিপরীতে গিয়ে বলেন, “প্রোগ্রামের ব্যাপারে উনারা (বিএনপি) যেসব দলের সঙ্গে আলাপ করে করছেন, আমাদের সঙ্গে সে রকম এক্সচেঞ্জ ছিল না। সেজন্য আমরা আমাদের মতো করে কর্মসূচি করছি, সরকার পতন আন্দোলনেই আমরা আছি। বিএনপি তার মতো করে আছে।”
বিএনপির প্রতি যে কারণে নাখোশ
বিএনপির সঙ্গে দূরত্বের কারণ ব্যাখ্যা করে জামায়াত নেতা তাহের বলেন, “আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। ওরা (বিএনপি) যখন ১০ দফা দিয়েছে, আমরাও ১০ দফা দিয়েছিলাম। কিন্তু এই ১০ দফা দেওয়ার কারণে আমাদের আমিরকে সরকার গ্রেপ্তার করল। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে একটা মিছিল করলাম, সেই মিছিলে পুলিশ হামলা করল।
“আমরা বিএনপির সঙ্গে একজোটে ছিলাম বহুদিন। একসঙ্গে নির্বাচনও করেছি, একসঙ্গে সরকারেও ছিলাম এবং যুগপতে আমরা ১০ দফা ঘোষণা করেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম তারা (বিএনপি) অন্তত আমাদের আমিরের গ্রেপ্তারের পরে একটা বিবৃতি দেবে, পুলিশি হামলার পরে একটা বিবৃতি দেবে। আমি জানি, তারা সেই কাজটি করেননি। আমাদের কর্মীরা আহত হয়েছেন।”
২০২২ সালের গত ১৩ ডিসেম্বর ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসি। পরের দিন যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। তিনি এখনও কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে ৯ নভেম্বর শফিকুরের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসে সিটিটিসি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন, তা জানতেন শফিকুর। এরপরও তিনি নীরব ছিলেন।
তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করে বলা হয়, জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে দলের আমির কিংবা কারও কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।
দূরত্ব ‘ঘুচতেও পারে’
“আমরাও সরকারবিরোধী আন্দোলনে”- একথা জানিয়ে জামায়াত নেতা তাহের বলেন, আন্দোলন জোরাল হলে তাদের ও বিএনপির পথ একই দিকে মিলতে পারে।
“সরকারবিরোধী আন্দোলন যদি আরও জোরদার হয়, মাঠে সব বিরোধী লোকদের সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে এবং সেটা যে নামেই বলেন, একটা কমন গ্রুপ ধারণ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
জামায়াত নেতা জানান, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার না হলে তারা ভোটে অংশ নেবেন না এবং সেই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পরামর্শ দিয়েছেন।
সরকারের সঙ্গে ‘সমঝোতা নেই’
বিএনপির সঙ্গে দূরত্বের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতা হয়েছে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু এক দশক পর ঢাকায় প্রকাশ্যে দলটির নির্বিঘ্ন সমাবেশ করা থেকে।
এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জামায়াতের নায়েবে আমির তাহের বলেন, “১০ তারিখে (জুন মাসে) আমাদের সমাবেশের (রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে) পর যারা আমাদেরকে প্রশ্ন করেছেন, ‘কীভাবে হল?’, আমরা তাদেরকে প্রশ্ন করি, ১০ বছর কেন দেওয়া হল, এই প্রশ্নটা কেন আপনারা করেন না?
“আমাদের সঙ্গে এই বিষয়ে সরকারের কোনো সমঝোতা নেই।”
১০ জুনের ওই সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের মুখ থেকেও সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগের বিষয়ে আকার-ইঙ্গিতে নানা বক্তব্য আসে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এমন একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এ টি এম মাছুম প্রতিবাদও জানান।
পরে ফখরুল বলেন, তার বক্তব্য কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। জামায়াতে সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে।