তৃতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৬১ জন, বাতিল হয়েছে ৩৫ জনের, সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে দুটির ক্ষেত্রে।
Published : 12 Dec 2023, 08:41 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের আপিল শুনানির তৃতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আরও ৬১ জন। এ নিয়ে তিন দিনের শুনানিতে মোট ১৬৮ জন প্রার্থিতা ফিরে পেলেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৯৮ জনের আপিল আবেদনের শুনানি হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে শুনানিতে অন্য চার কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের আইন শাখার কর্মকর্তারা জানান, তৃতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৬১ জন। বাতিল হয়েছে ৩৫ জনের মনোনয়নপত্র। আর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে দুটি আবেদনের ক্ষেত্রে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে বাদ পড়াদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছিলেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী, কুয়েতে মানব পাচার ও অর্থ পাচারের দায়ে দণ্ডিত শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামও। কিন্তু মঙ্গলবারের শুনানিতেও তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম। দুদকের এক মামলায় তথ্য গোপনের অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
আপিল শুনানিতে সেলিনা ইসলামের আইনজীবী বলেন, “হলফনামায় মামলার তথ্য লিখতে পারেননি প্রার্থী। এখন সেটা নিয়ে এসেছি।”
অপরদিকে শুনানিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, “উনার মামলাটা দুদকের। উনি জামিনে আছেন; কিন্তু এই তথ্য দেননি। উনাদের সময় দেওয়া হয়েছিল।
“তিনি বাংলাদেশে আলোচিত মামলার আসামি। এরপর কমিশন মামলার অবস্থা জানতে চান। তখন সেলিনা ইসলামের আইনজীবী বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন। এই কথা শুনে কমিশন সেলিনা ইসলামের আপিল আবেদন নামঞ্জুর করেন।”
তবে প্রার্থিতা বাতিলে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে সেলিনা ইসলামের ইসলামের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
ইসির শুনানির প্রথম দিনে ৫৬ জন প্রার্থিতা ফিরে পায়, ৩২ জনের প্রার্থিতা বাতিল ও ছয়টির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়। দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পান ৫১ জন, বাতিল হয়েছে ৪১ জনের।
তৃতীয় দিনের শুনানি শেষে যে ৬১ জন মনোনয়নপত্র ফিরে পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩০ জনই স্বতন্ত্র। বাকিরা বিভিন্ন দলের প্রার্থী।
স্বতন্ত্র যারা ফিরলেন
ঢাকা বিভাগের ঢাকা-২ আসনের ডা. হাবিবুর রহমান, ঢাকা-১৪ আসনের মো. লুৎফর রহমান ও জেড আই রাসেল, ঢাকা-১৮ আসনে মো. বশির উদ্দিন, মানিকগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহাবুদ্দিন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের হাজী মো. শরীফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সুব্রত পাল, ফরিদপুর-৩ আসনে গোলাম রাব্বানী খান প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগে বগুড়া-৬ আসনের মো. সৈয়দ কবির আহমেদ ও রাজশাহী-৫ আসনে মো. ওবায়দুল ভোটে অংশ নেওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন।
খুলনা বিভাগে খুলনা-৩ আসনে ফাতেমা জামান সাথী, খুলনা-৫ আসনের শেখ আকরাম হোসেন, যশোর-৫ আসনে হুমায়ূন সুলতান, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের মো. নুর হাকিমের প্রার্থিতা আপিলে টিকে গেছে।
রংপুর বিভাগে রংপুর-৫ আসনে জাকির হোসেন, রংপুর-৬ আসনে মো.সিরাজুল ইসলাম, লালমনিরহাট-২ আসনে হালিমা খাতুন, নীলফামারী-১ আসনে মো. ইমরান কবির চৌধুরী, নীলফামারী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হুকুম আলী, গাইবান্ধা-১ আসনে আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার, গাইবান্ধা-১ আসনে কে এম আমজাদ হোসেন তাজু, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুম ইকবাল ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আশা মনির প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
সিলেট বিভাগের সিলেট-৩ আসনে এহতেশামুল হক ও সুনামগঞ্জ-২ আসনে মিজানুর রহমানও প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী-২ আসনে এ এস এম আনোয়ারুল করিম, কুমিল্লা-৫ আসনে মো. জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন; বরিশাল বিভাগে বরিশাল-৬ আসনে মো. জাকির খান সাগর ও ঝালকাঠি-১ আসনে মো. মনিরুজ্জামানও নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টি
ঢাকা-১৯ আসনে মো. আবুল কালাম আজাদ, ফেনী-১ আসনে শাহরিয়ার ইকবাল, নোয়াখালী-৬ আসনে মুসফিকুর রহমান, মানিকগঞ্জ-১ আসনের মো. হাসান সাঈদ প্রর্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
জাসদ
গোপালগঞ্জ-২ আসনে ফুলমিয়া মোল্লা, নোয়াখালী-৩ আসনে জয়নাল আবদীন, ঢাকা-৭ আসনে হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস বেপারী, কুমিল্লা-১ আসনের বড়ুয়া মনোজিত ধীমানের মনোনয়নপত্র বৈধতা পেয়েছে।
ইসলামি ঐক্যজোট
কুমিল্লা-১ আসনে মাওলানা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন, সিলেট-৩ আসনে মইনুল ইসলাম, খুলনা-৪ আসনে রিয়াজ উদ্দিন খান, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মৌলভীবাজার-৩ আসনে মো. আব্দুর রউফ, কুমিল্লা-২ আসনে আবদুছ সালাম, চট্টগ্রাম-১২ আসনে এম এ মতিন সুযোগ পাচ্ছেন ভোটে দাঁড়ানোর।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট
ঢাকা-১০ আসনে শাহরিয়ার ইফতেখার, নোয়াখালী-২ আসনে রবিউল হোসাইনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে ইসি।
তৃণমূল বিএনপি
ঢাকা-১৮ আসনে মফিজুর রহমান, পিরোজপুর-১ আসনে মো. ইয়ার হোসেন রিপন, ন্যাপের চট্টগ্রাম-১৬ আসনের আশীষ কুমার শীল, কক্সবাজার-৩ আসনের শামীম আহসান প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
বাংলাদেশ কংগ্রেস
খুলনা-৪ আসনে মনিরা সুলতানা, কুমিল্লা-৩ আসনে মো. আমিনুল ইসলাম, সিলেট-২ আসনে মো. জহির প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি
ঢাকা-১৬ আসনে মো. তোহিদুল ইসলাম, কুমিল্লা-১০ আসনে এম অহিদুর রহমানের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে।
অন্যান্য
কুমিল্লা-১১ আসনে গণফোরামের আব্দুল রহমান, নোয়াখালী-২ আসনে কল্যাণ পার্টির কাজী সরওয়ার আলম, সিলেট-৪ আসনে তৃণমূল বিএনপির আবুল হোসেন, নরসিংদী-৫ আসনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) বিটু মিয়া, নরসিংদী-৩ আসনে গণফোরামের মাহফুজুর রহমান ও কুষ্টিয়া-২ আসনের বিএনএমের আরিফুর রহমান প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
যাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি
গোপালগঞ্জ-৩ আসনের বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. সাহিদুল ইসলাম মিন্টু ও নওগাঁ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামানের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৫৬১টি আপিল আবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা পড়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করবে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি চাইলে উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোট হবে ৭ জানুয়ারি ।
আরও পড়ুন-