আমি বিএনএমে যাইনি, সাকিবও তার পথ বেছে নিয়েছেন: হাফিজ

“সম্পূর্ণ পাতানো এই নির্বাচনে তিনি এমপি হয়েছেন, এটি তার বিষয়। এ নিয়ে যে কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এটা সঠিক নয়।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2024, 10:32 AM
Updated : 19 March 2024, 10:32 AM

বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আগে ‘কিংস পার্টি’ নামে পরিচিতি পাওয়া ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম’ এর সঙ্গে তার নিজের এবং ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততার যে খবর পত্রিকায় এসেছে, তা ‘সঠিক নয়’।

মঙ্গলবার দুপুরে বনানীতে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ দাবি করেন।

তিনি বলেন, “আমি আগেও বলেছি, কেন আমি বিএনএমে যোগদান করি নাই, কেন আমি বিএনপি ছাড়ি নাই। এতদিন পর আবার এই সংবাদ। এটা তো গোপন কোনো কিছু না। আমাকে অ্যাপ্রোচ করেছেন তারা (বিএনএম)… আমি প্রস্তাব গ্রহণ করি নাই, বিএনপিতে রয়েছি।”

আওয়ামী লীগের টিকেটে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাগুরা-১ আসনের এমপি হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

তবে নির্বাচনের কিছুদিন আগে সাকিব ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নতুন দল বিএনএমে যোগ দিয়েছিলেন বলে খবর এসেছে দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে।

বিএনপির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার মধ্যে সাবেক মন্ত্রী হাফিজকে নিয়েও গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের গত সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ দাবি করেছিলেন, হাফিজের নেতৃত্বে নতুন দল হচ্ছে এবং তারা ভোটে যাবে। পরে হাফিজ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, তিনি দল গঠন করছেন না।

সোমবার দৈনিক সমকালে একটি ছবি প্রকাশ করে বলা হয়, বিএনএম এর ফরম পূরণ করে সাকিব তুলে দেন হাফিজের হাতে। এ বিষয়ে কথা বলতে ফোন করলেও সাকিব ধরেননি বলে সমকালের ভাষ্য।  

সাকিব এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন ডাকেন হাফিজ।

তিনি বলেন, “সাকিব আল হাসান দেশের গৌরব, বিশ্বের সেরা অল রাউন্ডার। কোনোদিন রাজনীতি করে নাই। তিনি রাজনীতি করতেই পারেন। সাবেক ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমার কাছে এসেছিলেন, আমি তাকে কোনো উৎসাহ দিইনি।

“আমি যোগদান না করায় তিনিও তার পথ বেছে নিয়েছেন। যেখান থেকে সহজে জেতা যাবে, সেই নির্বাচনে কোনো প্রতিপক্ষ থাকবে না, সম্পূর্ণ পাতানো এই নির্বাচনে তিনি এমপি হয়েছেন, এটি তার বিষয়। এ নিয়ে যে কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এটা সঠিক নয়।”

বিএনপি নেতা হাফিজ বলছেন, সাকিবের সঙ্গে সেই সাক্ষাতের এতদিন পরে দুটি পত্রিকা ‘মিথ্যা প্রচার’ করেছে এবং তাতে তিনি ‘মর্মাহত’।

“আমার ধারণা জন্মেছে, সরকারের বিভিন্ন অপকর্ম লুকিয়ে রেখে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র নিবদ্ধ করার জন্যই আমার বিরুদ্ধে এই বিএনএম সৃষ্টির কাল্পনিক কাহিনীর অবতারণা তারা করেছে। আমি বলতে চাই, আমি নির্বাচন কমিশনে কাউকে পাঠাইনি, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ কিংবা তদবির করার জন্য কাউকে কখনো পাঠাই নাই।

“এই বিএনএম সৃষ্টি করেছেন কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা যারা যোগ দেয়ার অনুরোধ করেছেন এবং আমার বাসায় এসেছের কয়েকবার। আমার বাসায় ওই দলটির কোনো সভাও হয়নি। সব মিথ্যাচার।”

বিএনএম এর অফিসও চেনেন না দাবি করে হাফিজ বলেন, “নির্বাচনের দুই মাস আগেই বলেছি, আমি বিএনপি ছাড়ব না, কোনো পাতানো নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনের একমাস আগে চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছিলাম। এমনভাবে পত্রিকাগুলো সংবাদ প্রচার করেছে যে তারা বিরাট একটা রহস্যের ভাণ্ডার উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

“এখানে গোপন কিছু নাই। আমি সব সময় বলে এসেছি ‘মাই লাইফ ইজ আ ওপেন বুক’। লজ্জিত হওয়ার কোনো কাজ করি না, গোপন কোনো কাজ করি না।”

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, শারীরিক কারণে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন, কিন্তু গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ‘হাফিজ দল ত্যাগ করতে পারেন’। তাতে বিএনপির ভেতরে ‘চাঞ্চল্য’ সৃষ্টি হয়।

“কয়েকজন আমার সাথে যোগাযোগ করেছে, তারা নতুনভাবে রাজনীতি করতে চান। আমি তাদের নিরস্ত করেছি।”

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ভারতে অবস্থানত সালাহউদ্দিন আহমেদ সে সময়ে যোগাযোগ করে ‘প্রকৃত বিষয়’ জানতে চাইলে তাদেরকেও বিষয়টি ‘স্পষ্ট’ করেছেন বলে হাফিজের ভাষ্য।

“আমি বলেছি, এগুলো সরকারি প্রপাগান্ডা। আমি বিএনপি ছেড়ে কোথাও যাব না। এই বয়সে তো আমার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস নাই। দুই বার মন্ত্রী হয়েছি, আর কত? ৬ বার এমপি হয়েছি জনগণের ভোটে, গুড এনাফ। আমার তো নতুন দলে যোগদানের দরকার নাই, আমার কিংস পার্টি খোঁজার দরকার নাই।”

‘সাকিব একজন নন্দিত ক্রীড়াবিদ’

সাবেক ফুটবলার হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ক্রীড়াঙ্গনে একসময় আমি ভালো ক্রীড়াবিদ ছিলাম, নামকরা ক্রীড়াবিদ ছিলাম, আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় ছিলাম, একমাত্র বাঙালি ছিলাম পাকিস্তানের জাতীয় দলে। ক্রীড়াবিদদের প্রতি দুর্বলতা আছে।

“সাবিক আল হাসানও নন্দিত ক্রীড়াবিদ। তার দোষত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে তিনি ইনকমপেয়ারেবল ইন বাংলাদেশ। রাজনীতি করুক যাই করুক… এদেরকে হতাশ করে তারা খেলাধুলা ছেড়ে দিক এই ধরণের পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবেন না।”

হাফিজ বলেন, “সাবিক আল হাসান দল করবেন, রাজনীতি করবেন এটা তার বিষয়। সেটি তিনিই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার সাথে আমাকে যুক্ত করার কোনো প্রয়োজন নাই। আমার সর্বশেষ কাজটা আপনারা দেখেন।

“কী করেছি, কী অপরাধ করেছি আমি? আমি কি বিএনএমে যোগ দিয়েছি? দল ভেঙেছি? আমি তো দেশেই ছিলাম না। দুই মাস আগে আমার উদ্দেশ্য আমার পরিকল্পনা জনসম্মুখে প্রকাশ করে গেছি। তারপরে এসব মতলবি নিউজ আমাকে বিব্রত করে, দেশের তরুণ সমাজকে বিব্রত করে।”

‘৩২ বছর বিএনপি করি, কেনো ছাড়ব’

হাফিজ উদ্দিন বলেন, “৩২ বছর দল করার পর দল ছাড়া কি এতো সোজা নাকি? কেনো ছাড়ব? একটা অজানা অচেনা দলে যাব? আপনারা অনেক রাজনীতিবিদের ইন্টারভিউ নেন, আমি দুই নম্বরি লোক না, দুই নম্বরি কথাও বলি নাই।

“আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনো দুর্নীতিতে কখনো জড়াইনি। যেহেতু আমার দলে কাউন্সিল হয় না, সেজন্য মাঝে-মাঝে পরামর্শ দিয়েছি, পত্রিকায় সেগুলো উঠেছে। কিন্তু আমার দল সম্পর্কে, আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সস্পর্কে কোনো অসৌজন্যমূলক কথা আমি বলি নাই।”

গণমাধ্যমের উদ্দেশে হাফিজ বলেন, “যেসব ক্ষেত্রে তাদের (গণমাধ্যমের) মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা জাতীয় জীবনকে প্রভাবিত করে, সেসব সংবাদের প্রতি তারা মনোযোগ দিলে দেশবাসী রক্ষা পাবে, দেশও রক্ষা পাবে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা মাথা উঁচু করে সারা জীবন চলেছি। এখন শেষ বয়সে মর্যাদার সাথে বসবাস করতে চাই।

“আমি আশা করব, আমার বিরুদ্ধে বিরূপ এই ধরনের প্রচার করবেন না… প্লিজ লিভ মি এলোন। আমি কোনো বিরাট রাজনীতিবিদ না। নির্বাচন দিলে এলাকায় গিয়ে ভোটে দাঁড়াই। আপনারা কেউ আমার এলাকা ভোলায় ভিজিট করে দেখতে পারেন, সেখানে জনগণ এসব ভুয়া মিথ্যা প্রচারে কান দেয় না। তবে আমার দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।”