ফায়ার সার্ভিস তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৬৮টি যানবাহন পোড়ানো হয়েছে। এই সময়ে প্রাণ গেছে অন্তত ৯ জনের।
Published : 03 Nov 2023, 06:42 PM
বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সেই সঙ্গে এ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে কোনো ‘উসকানিতে’ পা না দিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, “এই আন্দোলন বিজয় না হওয়া পর্যন্ত চলতেই থাকবে এবং রোববার ভোর থেকে ৪৮ ঘণ্টার যে অবরোধ রয়েছে, এই অবরোধ শান্তিপূর্ণ অবরোধ। শান্তিপূর্ণভাবেই এই কর্মসূচি পালিত হবে।”
“আমাদের দলের নেতাকর্মী বা গণতান্ত্রিক যেসব রাজনৈতিক দল ও সমমনা দল অংশগ্রহণ করছেন, সরকারের কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাবেন।”
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সেদিন নয়াপল্টনে সমাবেশ শুরুর পর কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরো ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে।
দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।
সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই পরদিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেই কর্মসূচি শেষে রবি ও সোমবার নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডাকের রিজভী।
ফায়ার সার্ভিস তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৮২টি স্থানে আগুন দেওয়ার খবর পেয়েছে তারা, এর মধ্যে ৬৮টি ঘটনায় পোড়ানো হয়েছে যানবাহন। এই সময়ে প্রাণ গেছে অন্তত ৯ জনের।
সার্বিক পরিস্থিতিতে মানুষের মনে ফিরে আসছে ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতার স্মৃতি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি তাদের ‘পুরনো চেহারায়’ ফিরে গেছে। কিন্তু গত কয়েক দিনের সহিংসতার জন্য উল্টো ক্ষমতাসীনদের দায়ী করেছেন বিএনপি নেতারা।
শুক্রবারের ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, “আমাদের আন্দোলন হচ্ছে জনগণ যাতে তার পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে… এই অধিকারটা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন। এই আন্দোলন আদর্শের আন্দোলন, এটা জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন, বিবেকবান মানুষের বেড়ে ওঠার, বিকশিত হওয়ার আন্দোলন।
“এই আন্দোলনে যারা সমর্থন দেবে, যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, যারা মানুষের স্বাধীনতার পক্ষে, নাগরিক স্বাধীনতার পক্ষে এবং একটা স্বৈরাচারী দৈত্যের বিরুদ্ধে, যিনি আজীবন স্বপ্ন দেখেন ক্ষমতায় থাকার, তার বিরুদ্ধে, প্রত্যেকেই এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সারথী হিসেবে থাকবেন।”
‘গণবিরোধী আইন বুড়িগঙ্গায় ফেলা হবে’
বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার প্রসঙ্গ ধরে রিজভী বলেন, “গতকাল সমাপ্তি ঘটেছে নিশিরাতের ভোট ডাকাতির জাতীয় সংসদের অধিবেশন।”
তার ভাষায়, এ সংসদে গত ৫ বছর ধরে ‘ভুয়া এমপিরা’ সংসদে দাঁড়িয়ে কেবল বিএনপিকে নিয়ে ‘মিথ্যাচার, খিস্তিখেউর, কুৎসা আর আওয়ামী কোটারি স্বার্থ’ চরিতার্থ করেছেন। সাধারণ জনগণের জন্য কল্যাণকর ‘কিছুই করেননি’।
“মোট ২৭২ কার্যদিবসের এই সংসদকে আওয়ামী দলীয় আড্ডাবাজির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। ৫ বছর ধরে এই অবৈধ সংসদে ১৬৫টি বিল পাস করেছে, তার প্রায় সবই গণবিরোধী। এই ভুয়া সংসদকে রাবার স্ট্যাম্প বানিয়ে যেসব অবৈধ আইন পাস করা হয়েছে, তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সুষ্ঠু ভোটের এমপিরা বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেবে।”
একাদশ সংসদে ‘বিপুল পরিমাণ টাকা’ অপচয় হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।
‘একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা’
রিজভী বলেন, “আবারো দেশে একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা চলছে। আওয়ামী দলদাস নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী দলদাস পুলিশ ও দলদাস প্রশাসন সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমরা সারাদেশ থেকে খবর পাচ্ছি, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতে দলদাস আওয়ামী প্রশাসনকে নিয়ে এক অভিনব কর্দয মিশনে নেমেছে শেখ হাসিনা ও তার সরকার।
“তার নির্দেশে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় কার্ডের মাধ্যমে সুবিধাভোগী প্রায় ২ কোটি মানুষকে টার্গেট করেছে আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় এমপিরা, অনুগত প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গত কয়েকদিন যাবত প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি উপজেলায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর হতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রকল্পের আওতায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধাপ্রাপ্ত উপকারভোগীদের নিয়ে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও নেতারা। প্রতিটি সমাবেশে ডিসি, এসপি, ইউএনওসহ থানার ওসিরাও উপস্থিত থাকছেন।”
রিজভী বলেন, “এসব সমাবেশের উদ্দেশ্য আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, ভোট কেন্দ্রে না গেলে কার্ড্ বাতিলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে।”
ভোট কেন্দ্রে ‘সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতি বিদেশীদের দেখানোর জন্যই’ সরকার এ ‘কুটকৌশল নিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট ২৯২ জনের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং ‘মিথ্যা বানোয়াট’ মামলায় মোট ১ হাজার ৪৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।