“আওয়ামী লীগের নৌকাটা তারা ঠিকই পাইছে, কিন্তু বৈঠাটা আমরা পাইছি।”
Published : 10 Jan 2024, 03:33 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে আসার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে ফরিদপুর-৪ আসনে জয়ী মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বলেছেন, আলোচনা করেই সে সিদ্ধান্ত হবে।
দ্বাদশ সংসদের এমপি হিসেবে বুধবার শপথ নেওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আসলে আমরা তো স্বতন্ত্ররা আলাদা আলাদা সবার জায়গা থেকে। আজকে শপথের পর আমাদের কাছে সময় আছে। আমরা আলোচনা করে যেটা ভালো হয়, সেটাই করব।”
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে আসার পর দ্বাদশ সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসবেন, সেই আলোচনার পালে হাওয়া যোগাচ্ছে আইন ও সংবিধানের ব্যাখ্যা।
সাধারণ ধারণা হল, আসন সংখ্যায় সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল যাকে নেতা নির্বাচিত করবে, তিনিই বিরোধীদলীয় নেতার আসন পাবেন। তার দলই হবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল।
গত দুটি নির্বাচনের মত এবারও ভোটের ফলে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কিন্তু তাদের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ আসনে দলনিরপেক্ষ প্রার্থীরা জিতে আসায় আলোচনা ঘুরে গেছে। জানা-বোঝার চেষ্টা হচ্ছে তাদের কেউ বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসতে পারবেন কি না। তারা জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধী দল হতে পারবেন কি না।
আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, আইনত এটা ‘সম্ভব’। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পাওয়া একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, তারা শপথ নেওয়ার পর এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বসবেন।
বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় সংসদ ভবনের নিচতলার শপথকক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শপথ পড়ান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর আগে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে সংসদে আসাদের শপথ পড়ান স্পিকার।
শপথ গ্রহণের আগে নিক্সন চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আসলে বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য আমরা স্বতন্ত্ররা নির্বাচন করিনি। আমরা আমাদের নিজ এলাকার যে নৌকার মাঝি তার বিপক্ষে নির্বাচন করেছি। আমরা নৌকার পক্ষেই। আওয়ামী লীগের নৌকাটা তারা ঠিকই পাইছে, কিন্তু বৈঠাটা আমরা পাইছি।
“যে উদ্দেশ্য ও স্বপ্ন নিয়ে জনগণ ভোট দেয়, সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। উন্নয়ন করতে হবে। কোনো নির্বাচিত সংসদ সদস্য যদি জনগণকে সময় না দেয় এবং যদি উন্নয়ন না করে, তাহলে কোনদিনই সে ভোট পাবে না। আমার তিন থানার মানুষ এটাই প্রমাণ করেছে।”
দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে গত রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়, গোলযোগের কারণে ময়মনসিংহের একটি আসন স্থগিত রেখে ২৯৮টি আসনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
এবারের নির্বাচনে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। আর জোটগতভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন মোট ২২৪ জন। এই নিরঙ্কুশ জয়ে টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের নেতা।
গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং এক সময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে।