“যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে তিনি আবার আমাদেরকে সবক দেন। সবক কী রকম? আমরা নাকি চুক্তি আর সমঝোতার মধ্যে পার্থক্য বুঝি না। আমাদেরকে উনি পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন।”
Published : 27 Jun 2024, 05:42 PM
ছয় মাস পর পর খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে সরকার ‘চালাকির আশ্রয়’ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন যে, খালেদা জিয়া প্রায় দুই বছর বেশি জীর্ণ পরিত্যক্ত কারাগারে ছিলেন, তারপরে নিয়ে আসা হয়েছে পিজি হাসপাতালে সেখানে তিনি কোনো চিকিৎসা পাননি। শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে সাজা স্থগিত করে।
“এখানে আরেকটা চালাকি আছে, চালাকিটা কী? ছয় মাস ছয় মাস করে সাজা স্থগিত করছে, তার মানে সাজা কিন্তু কমছে না। সেই সাজা আবার গুণতে হবে ভবিষ্যতে, যখন তাদের প্রয়োজন হবে, এটা হচ্ছে আরেকটা চালাকি। অর্থাৎ আরো বেশি দীর্ঘায়িত করা হবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে এই মানববন্ধন হয়।
ফখরুল বলেন, “ইতিমধ্য্যে আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, ব্যাংক লুটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, আমরা পাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যে আন্দোলন করছি, সেটা সম্পূর্ণভাবে সামগ্রিক আন্দোলনের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা আন্দোলন।”
“কেন না, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র এক, অভিন্ন। একে আলাদা করা যাবে না। যদি দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে পারি, আমরা গণতন্ত্রকেও মুক্ত করতে পারব। আসুন আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। তার মুক্তি চেয়ে সবাই কথা বলুন, সোচ্চার হোন, আন্দোলনে শরিক হোন।”
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যেসব সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে তার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আপনারা দেখেছেন, যে সমস্ত চুক্তি করা হয়েছে, সমঝোতা করা হয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশের পক্ষে নয়। যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে তিনি আবার আমাদেরকে সবক দেন। সবক কী রকম? আমরা নাকি চুক্তি আর সমঝোতার মধ্যে পার্থক্য বুঝি না। আমাদেরকে উনি পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন।”
ফখরুল বলেন, “কী এনেছেন এবার ভারত সফরে গিয়ে? তিস্তার পানি বন্টনের চুক্তি করতে পারেননি। তিস্তা প্রকল্পের জন্য ভারত প্রস্তাব দিয়েছে, চীনও দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দুইটার মধ্যে দেখব কোনটা ভালো হয়। আবার সব শেষে একথা বলেছেন, ভারত যে প্রস্তাব দিয়েছে তাদেরকে যদি আমরা কাজটা দেই তাহলে আমাদের পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
“আমরা সব বোকা মানুষগুলো এদেশে বাস করি। তিস্তার পানি যে সমস্যা সেটাকে আপনি বাতিল করে দিলেন, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টনের সমস্যার সমাধান আর হলো না, সমস্যাই রয়ে গেল। এবার আপনারা একটা দেশকে ভারতের কাছে পুরোপুরি জিম্মি করে দিচ্ছেন।”
মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “কেন আমাদের নেত্রী আইনি সহায়তা পাচ্ছে না? আজকে আইনি প্রক্রিয়াকেও তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বাধাগ্রস্ত করছেন। তিনি ৪০২ ধারা নিজের হাতে নিয়ে শর্তসাপেক্ষে বন্দি অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়াকে বাসভবনে রেখেছেন।
“আমরা বলতে চাই, কারো করুণা-কৃপা আমরা চাই না। আমরা আমাদের অধিকার জনগণকে নিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠা করবই।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, যে হসপিটাল ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) অ্যাম্বুলেন্স দিতে অস্বীকার করেছে, সেই হাসপাতালের আমি একজন পরিচালক। তবে পরিচালক আমি আরেকটা কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছি। এই ধরনের একটা গর্হিত কাজ একটা মানবিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে সম্ভব?”
সভাপতির বক্তব্যে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, “দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে আজ আমাদের আর স্লোগানে আটকে থাকলে চলবে না। আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে সবাইকে যার যার জায়গায় থেকে।”
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শিরিন সুলতানা, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ফরিদা ইয়াসমিন, যুব দলের গোলাম মাওলা শাহিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।