“এই সরকার থাকা মানে হচ্ছে আমাদের দেশের ধ্বংস হওয়া, গণতন্ত্র ধ্বংস হওয়া, দেশের মানুষ ধ্বংস হওয়া”, বলেন ফখরুল।
Published : 29 Jun 2024, 09:08 PM
সরকারের পতন ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে অন্য দলগুলোকেও শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলটির মহাসচিব মহাসচিব মির্জা ইসলাম আলমগীর।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সময় বারবার আসে না‘।
শনিবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির ডাকা সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা। খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে সরকারকে ‘যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার’ হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’, আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। তাকে বাঁচাতে হলে তাকে রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের অধিকারকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
“অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন, আজকে আমরা যেমন ‘গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার’ জন্য সংগ্রাম করছি, যুগপৎ আন্দোলন করছি, আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে একইভাবে একত্রীভূত করে সোচ্চার আওয়াজ তুলি।”
সরকারের পতনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “এই সরকার থাকা মানে হচ্ছে আমাদের দেশের ধ্বংস হওয়া, গণতন্ত্র ধ্বংস হওয়া, দেশের মানুষ ধ্বংস হওয়া।
“তরুণ-যুবকদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, ‘কেউ আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাকিছে ভবিষ্যৎ’, তোমাদের হাতে কিন্তু নির্ভর করছে এ দেশের ভবিষ্যৎ।”
আন্দোলনে সফল হওয়ার সুযোগও দেখছেন ফখরুল। বলেন, “আমি বলতে চাই, বার বার সময় আসে না, সুযোগ আসে না, আজকে সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে সেই সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে ‘এই ভয়াবহ দানব’, যে আমাদের ‘দেশকে ধ্বংস করছে’, ‘গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে’, ‘স্বাধীনতাকে ধ্বংস করছে’, তাকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।”
গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর এটিই বিএনপির সবচেয়ে বড় জমায়েত। ফের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ডাকা এই কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন উদ্দীপ্ত।
নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে তারা নয়া পল্টনে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে তাদের ভিড় কাকরাইলের নাইটেঙ্গল মোড় থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত ছাড়ায়।
দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কে জমায়েতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে ছিল খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। কারো কারো হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা।
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা স্থগিতের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আরে প্রতিবার মেয়াদ বাড়িয়ে যাচ্ছে সরকার।
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এই চার বছরে বিএনপি নেত্রী বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখনও তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে আছেন।
গত ২৩ জুন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানোর পর তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন নামার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। গত ২৬ জুন ঘোষণা হয় তিন দিনের কর্মসূচি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, ‘দেশনেত্রীকে’ মুক্তি দিন। অন্যথায় আপনাদের যে কোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে।
“বাংলাদেশের মানুষ কখনো দেশনেত্রীকে এভাবে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি অবস্থায় চলে যেতে দেবে না, এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।”
দাবি পূরণে তীব্র থেকে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই আন্দোলনের মাধ্যমেই এদেরকে পরাজিত করতে হবে।”
‘দেশের স্বার্থ ভারতকে বিলিয়ে দিয়েছে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশের স্বাস্থ্য বিলিয়ে দেওয়ার অভিযোগও করা হল বিএনপির সমাবেশ থেকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “ভারতে সঙ্গে চুক্তি করেছে, দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা, পানি বিশেষজ্ঞ বলছেন এটা বাংলাদেশ বিরোধী, বাংলাদেশের স্বার্থের বিরোধী। আমরা পানি চাই, আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা চাই, আমরা সীমান্তে হত্যা বন্ধ চাই, আমার যেসব সমস্যা আছে তার সমাধান চাই। তা না করে এই সরকার সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছে।
“আপনি (প্রধানমন্ত্রী) উজাড় করে দিয়েছেন, বাংলাদেশ কী পেল? বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে ঘৃণা, বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে তার অধিকার হরণ করা, বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে তার যে সম্পদগুলো আছে সেগুলোকে লুণ্ঠন করার আরও পথ তৈরি করা।”
‘খালেদা জিয়া সুস্থ হলে দেশ সুস্থ হবে’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “একটা ব্যানারে দেখলাম, খালেদা জিয়া সুস্থ হলে দেশ সুস্থ থাকবে। কথাটা ঠিক। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, আজকে পুরো জাতি অসুস্থ হয়ে গেছে। চোর-ডাকাত-বাটপার-বদমায়েশ সবাই মুক্তি পেয়ে যায়, আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) মুক্তি দিতে চান না।
“আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, দেশনেত্রীকে যে কোনো মূল্যে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তির স্বার্থে কোনো আপোষ কারও সঙ্গে হবে না।
“দেশনেত্রীর মুক্তির লক্ষ্যে কর্মসূচি দেয়া হয়েছে...এরপর আরও কর্মসূচি আসবে। আমরা বহুদিন পরে প্রথম বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে মুখ খুলেছি, এই মুক্তির আন্দোলন থামবে না কোথায় গিয়ে থামবে সেটা আল্লাহই বলতে পারেন।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমরা যখন নেমেছি একবার চেষ্টা করি। আমরা প্রতিদিন বক্তৃতা দেই না, আবার বক্তৃতা না দিতে পারলে মনটা খারাপ লাগে। আর আমার নেত্রী ৭ বছর যাবত মঞ্চে আসেন না, ৭টি বছর যাবত তার কণ্ঠ জনগণ শুনতে পায় না। তাই আসেন বক্তৃতা থামান, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে ঘরে ফেরেন। তাহলেই দেশ মুক্ত, গণতন্ত্র মুক্ত, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মুক্ত।”
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদের আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে আজকে আইনের শাসন বলে কিছু নাই। যেখানে আইনের শাসন নাই, যেখানে অন্যায় আইন হয়ে যায়, যেখানে মানবাধিকার নাই, যেখানে বিরোধী দলসহ ভিন্নমতকে রুদ্ধ করে রাখে, যেখানে জীবনে নিরাপত্তা নেই, যেখানে জেলখানায় মানুষের মৃত্যু হয়, সেই দেশে শুধু মাত্র প্রতিবাদ করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো যাবে না।
“যেখানে অন্যায় আইনে পরিণত হয়ে যায় সেখানে প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে পড়ে। আজকে প্রতিরোধ অনিবার্য। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হলে প্রতিরোধে নামতে হবে।”
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন।
অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জয়নুল আবদিন ফারুক, ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ্ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাইয়েদুল আলম বাবলু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শিরিন সুলতানা, সালাউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হক, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিবও।
সমাবেশের সময় নয়া পল্টন ও আশেপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন থাকতে দেখা গেছে।