আমানের অভিযোগ, টাকা না দিয়েই বাশার ও ববি রেস্তোরাঁটি দখল করে মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন এবং রেস্তোরাঁর নাম পরিবর্তন করে ‘ববস্টার ডাইন’ রেখেছেন।
Published : 02 Jul 2024, 07:57 PM
যে রেস্তোরাঁর মালিকানা নিয়ে মোকদ্দমায় জড়িয়েছেন চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববি, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক আমান উল্লাহ আমান এখন বলছেন, রেস্তোরাঁটি বিক্রি করতে ববির সঙ্গে কোনো চুক্তিই হয়নি।
ঢাকার গুলশানের একটি ভবনে রেস্তোরাঁ ভাড়া নিয়ে দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগও মামলার মধ্যে মঙ্গলবার এই সংবাদ সম্মেলন করেন আমান। এর আগে সোমবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন চিত্রনায়িকা ববি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী আমান অভিযোগ করেন, চিত্রনায়িকা ববি ও তার ‘ক্যাডারবাহিনী’ অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ দখল করে রেখেছে।
গুলশানের ২ নম্বরে ১১৩ নম্বর সড়কে ওয়াইএন সেন্টারের ‘ভুবন’নামে একটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করে আসছিলেন আমান। সম্প্রতি রেস্তোরাঁটি আবুল বাশার নামে একজনের কাছে ৫৫ লাখ টাকায় বিক্রি করলেও টাকা বুঝে পাননি বলে অভিযোগ আমানের। বাশারের ব্যবসায়িক পার্টনার নায়িকা ববি।
গত ২৩ জুন ববি ও তার সহযোগী মির্জা আবুল বাশারের নামে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট, চুরি, ক্ষতিসাধন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের’ অভিযোগ এনে গুলশানের ওয়াইএন সেন্টারের এজিএম মুহাম্মাদ সাকিব উদ্দোজা একটি মামলা করেন। এতে ১ নম্বর আসামি করা হয় বাশার এবং ববি দ্বিতীয় আসামি।
এরপর ববি ও বাশার পাল্টা মামলা করেন। এতে ওয়াইএন সেন্টারের ‘ভুবন’ নামের রোস্তোরাঁ ফ্লোরের মালিক শাহিনা ইয়াসমিন, তার ছেলে জাওয়ান আল মামুনসহ ৭ জন ও অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করেন তারা।
বাশার অপর একটি প্রতারণার মামলা করেন ‘ভুবন’ রেস্তোরাঁর মালিক আমান উল্লাহ আমান ও তার পার্টনার ইনতাকাবুল আলমের বিরুদ্ধে। এই মামলায় মঙ্গলবার আমান ও ইনতাকাবুল আলমের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন আবুল বাশার।
ব্যবসায়ী আমান বলছেন, টাকা না দিয়েই বাশার ও তার পার্টনার ববি রেস্তোরাঁটি দখল করে ভেতরের মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন এবং রেস্তোরাঁর নাম পরিবর্তন করে ‘ববস্টার ডাইন’ রেখেছেন।
রেস্তোরাঁ বিক্রির চুক্তি না হলে ববির বিরুদ্ধে কেন সংবাদ সম্মেলন করেছেন- এমন প্রশ্নে আমান বলেন, নায়িকা ববি ও তার ক্যাডারবাহিনী দ্বারা তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অবৈধভাবে তার রেস্তোরাঁ দখল, লুটপাট, হত্যাচেষ্টা ও মিথ্যা মামলার মাধ্যমে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। রেস্তোরাঁর নাম পরিবর্তন করে ‘ববস্টার ডাইন’ করা হয়েছে।
আমান উল্লাহ আমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভুবন রেস্তোরাঁটি তিনি এবং তার ব্যবসায়িক পার্টনার ইনতিকাবুল আলম বিগত এক বছর ধরে পরিচালনা করে আসছেন। ব্যক্তিগত কারণে রেস্তোরাঁটি বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
আমানের ভাষ্য, “পূর্ব পরিচিত মির্জা আবুল বাশারের কাছে রেস্তোরাঁর ইনভেনটরি বিক্রির জন্য ৫৫ লাখ টাকায় মূল্য ধার্য করে একটি চুক্তিপত্র স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। মির্জা আবুল বাশার ৫৫ লাখ টাকার মধ্যে ২৫ লাখ ও ১৫ লাখ টাকার ২টি চেক প্রদান করেন এবং বাকী ১৫ লাখ টাকার আরেকটি চেক লিখতে গিয়ে চেকে ভুল করেন বিধায় ওই ১৫ লাখ টাকার চেকটি পরবর্তীতে দেবার আশ্বাস দেন।”
তাদের দেওয়া দুটি চেকই পরে ব্যাংক থেকে ডিজঅনার হয়ে ফিরে আসে জানিয়ে আমান বলেন, “ওই অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণে চেক ডিজঅনার হয়। এখন তারা বলছেন, ১৫ লাখ টাকা নাকি ক্যাশে দিয়েছেন, তার প্রমাণ দেখাক।”
তিনি বলেন, “ববিকে রেস্তোরাঁটি দেখানোর নাম করে কৌশলে চাবি নিয়ে তা দখলে নেন বাশার। পরে ভবনের মালিক নতুন তালা লাগালে সেটিও ভেঙে ফেলে বাশার ও ববির লোকজন। এ নিয়ে গত ২৩ জুন মারপিটের ঘটনার পর তা মামলায় গড়ায়। ভবনের মালিক বাশার ও ববির বিরুদ্ধে মামলা করেন।”
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে জানতে চাইলে আমান বলেন, “আজকে (মঙ্গলবার) আমার আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল, আদালতে যাইনি। আমার আইনজীবীর মাধ্যমে আমি তথ্য-উপাত্ত আদালতে পরবর্তী তারিখে তুলে ধরব।”
সংবাদ সম্মেলনে আমান বলেন, “ববির সঙ্গে তো আমাদের কোনো চুক্তিই হয়নি। তিনি কীভাবে, রেস্তোরাঁ দখল করেন? আর রেস্তোরাঁর জন্য তো ভবনের মালিকের সঙ্গেও তাদের চুক্তি করতে হবে। সেই চুক্তি না করে তারা কীভাবে রেস্তোরাঁর নাম ‘ববস্টার ডাইন’ পরিবর্তন করেছেন? ববি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ভেতরে ৮০ লাখ টাকার ইন্টোরিয়রের কাজ করিয়েছেন’। ভবন মালিকের সঙ্গে চুক্তি না করে, আমার জিনিসপত্রের দাম না দিয়ে তিনি কিভাবে রেস্তোরাঁয় ইন্টরিয়রের কাজ করেন?”
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় ববির ব্যবসায়িক পার্টনার মির্জা আবুল বাশারের সঙ্গে।
রেস্তোরাঁ ফ্লোরের মালিকের সঙ্গে কোনো চুক্তি করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমানকে টাকা দেয়ার পর তো আমান আমাদের কাছে রেস্তোরাঁ হস্তান্তর করেন। ফ্লোরের মালিক আমাদের কাছ থেকে মে মাসের ভাড়াও নেন। কিন্তু চুক্তি করার কথা বললেই তিনি গড়িমসি শুরু করেন। সেখান থেকেই তো ঝামেলার শুরু।”
বাশারের আরও বলেন, “আমরা মে মাসের ভাড়া বাবদ আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করেছি এবং ফ্লোর মালিককে ৭ লাখ টাকা অ্যাডভান্সও করেছি। আমরা রেস্তোরাঁ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করি এবং ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য ফ্লোর মালিক শাহিনা ইয়াসমিন ও জাওয়াদ আল মামুনকে চুক্তিপত্র, ফায়ার সেফটি ও বাণিজ্যিক অনুমতির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়ার অনুরোধ করি।
“এসব কাগজপত্র চাওয়ার পর থেকে আমাদেরকে চুক্তিপত্র করে দেননি বরং আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করা শুরু করেন। প্রথমে আমান ১৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। অথচ তিনি ১৫ লাখ টাকা ক্যাশ বুঝে নিয়ে চাবি হস্তান্তর করেন। ফ্লোর মালিকও আমাদের কাছ থেকে অ্যাডভান্স এবং এক মাসের ভাড়া বুঝে নিয়েছেন।”
ফ্লোর মালিক কেন আপনাদের হয়রানি করছেন বলে মনে হয়, এমন প্রশ্নে বাশার বলেন, “পরে জেনেছি, বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় আগুনের ঘটনার পর এই ভবনটি সিলগালা করা হয়েছিল, সেই তথ্য গোপন করে আমাদের কাছে এটি ভাড়া দিতে চেয়েছিলেন। আমরা বৈধ কাগজপত্র চাওয়ায় তাদের সমস্যা শুরু হয়। পরে জেনেছি, ফ্লোরের মালিক বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিন।”
তবে ওয়াইএন সেন্টারের এজিএম সাকিব উদ্দোজা এর আগে জানিয়েছিলেন শাহিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিচ্ছেদ হয়েছে ১৪ বছর আগে।
“গত মে মাসে ভাড়া হিসেবে আড়াই লাখ টাকা ববি ও বাশার পরিশোধ করেছেন। কিন্তু তারা ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন বলে ভুয়া রশিদ দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। আমরা আড়াই লাখ টাকার যে রশিদটি তাদের দিয়েছিলাম, তার নম্বর দিয়েই আরেকটি রশিদ বানিয়েছেন। সেটি ধরা পড়ার পর বুঝতে পারি যে তারা লোক ভালো না। এজন্য তাদের সঙ্গে আর আমরা চুক্তিপত্র করিনি,” বলেছিলেন সাকিব।
আরও পড়ুন
আত্মসমর্পণ করে নায়িকা ববির জামিন