এ ঘটনায় বিএনপির কারাবন্দি দণ্ডিত নেতা গিয়াস উদ্দিন মামুনের হাত রয়েছে বলে দাবি ববির। তবে মামলার বাদী বলছেন, মামুনের সঙ্গে শাহিনা ইয়াসমিনের বিচ্ছেদ হয়েছে ১৪ বছর আগে।
Published : 01 Jul 2024, 11:40 PM
মামলা ও পাল্টা মামলার মধ্যে চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
গুলশানের একটি ভবনে রেস্তোরাঁ ভাড়া নিয়ে দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে সোমবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকাই ছবির এই নায়িকা বলেন, “নিজের অর্থ খরচ করে ব্যবসা করতে নেমে এখন উল্টো আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।”
মগবাজারে একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে তার অভিযোগ, “বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিন ও পুত্র জাওয়াদ আল মামুন কর্তৃক রেস্টুরেন্ট দখল, লুটপাট, হত্যাচেষ্টা ও প্রতারণা করা হয়েছে।"
গত ২৩ জুন ববি ও তার সহযোগী আবুল বাশারের নামে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট, চুরি, ক্ষতিসাধন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের‘ অভিযোগ এনে গুলশানের ওয়াইএন সেন্টারের এজিএম মুহাম্মাদ সাকিব উদ্দোজা একটি মামলা করেন। এতে ১ নম্বর আসামি করা হয় ববির সহযোগী মির্জা আবুল বাশারকে (৩৪) এবং ববি দ্বিতীয় আসামি।
এরপর ববি ও বাশার পাল্টা মামলা করেন। এতে ওয়াইএন সেন্টারের ‘ভুবন’ নামের রোস্তোরাঁ ফ্লোরের মালিক শাহিনা ইয়াসমিন, তার ছেলে জাওয়ান আল মামুনসহ ৭ জন ও অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করেন তারা।
গুলশানের ২ নম্বরে ১১৩ নম্বর সড়কে ওয়াইএন সেন্টারের ‘ভুবন’ নামের একটি রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এই মামলা ও পাল্টা মামলা।
ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘ময়ূরাক্ষী’ সিনেমার নায়িকা ববি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার জন্য সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির কারাবন্দি নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিন ও পুত্র জাওয়াদ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। তার দাবি, ওয়াইএন সেন্টারের ওই ফ্লোরের মালিক গিয়াস উদ্দিন আল মামুন।
এ বিষয়ে ববির বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী এবং ওয়াইএন সেন্টারের এজিএম সাকিব বলেন, শাহিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিচ্ছেদ হয়েছে ১৪ বছর আগে।
কারাগারে থাকা মামুন ওই ভবনের মালিক বলে ববি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাও ঠিক নয় বলে দাবি করেন সাকিব।
ববির অভিযোগের বিষয়ে শাহানা ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে সাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শাহিনা কথা বলবেন না। তার হয়ে তিনিই (সাকিব) বক্তব্য দেবেন।
সাকিব বলেন, ”তারা যখন ভাড়া বাবদ আড়াই লাখ টাকা দিয়ে ৭ লাখ টাকার ভুয়া রশিদ দিয়েছে, তখনই বুঝতে পেরেছি তারা লোক ভালো না। দখলের বিষয়ে ববি মিথ্যা বলছে।”
সংবাদ সম্মেলনে ববির অভিযোগ
নায়িকা ববি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আর্থিক সচ্ছলতার আশায় তিনি গুলশানে আগে থেকে চালু 'ভুবন' নামের রেস্তোরাঁ ভাড়া নেন।’অপারেশন পার্টনার’ হিসেবে সঙ্গে নেন তার পূর্ব পরিচিত মির্জা বাশারকে।
ববির ভাষ্য, "ভুবন রেস্টুরেন্টের মালিক আমানের সঙ্গে তার রেস্টুরেন্টের সমুদয় আসবাবপত্র (ইন্টেরিয়র ও অন্যান্য) ৫৫ লাখ টাকা মূল্য ধরে একটি চুক্তি হয়। একই সময়ে রেস্টুরেন্ট ভবনের (বিল্ডিং) মালিকের স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিন ও ছেলে জাওয়াদ আল মামুনের সঙ্গে ভূবন রেস্টুরেন্ট মালিকসহ আলোচনা করি।
”তখন শাহিনা ইয়াসমিন ও জাওয়াদ রেস্টুরেন্টটি আমাকে ভাড়া নিতে উৎসাহিত করেন এবং চলমান রেস্টুরেন্ট হস্তান্তর করলে তারা পরবর্তী সময়ে আমাদের নামে নতুন চুক্তিপত্র করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তাদের প্রতিশ্রুতির পর আমরা আমানকে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করি এবং টাকা পাওয়ার পরদিন আমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী তাকে দুটি চেকও প্রদান করা হয়।"
ববি চেক দেওয়ার বিষয়ে রেস্তোরাঁ মালিক আমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তারা ২৫ লাখ ও ১৫ লাখ টাকার দুটি চেক দেন এবং আরও ১৫ লাখ টাকা দেবেন বলে জানান। কিন্তু তাদের কাছ থেকে পাওয়া দুটি চেকই ডিজঅনার হয়। ফলে আমরা কোনো টাকা পাইনি।”
তবে ববি দাবী করেন, "গত এপ্রিল মাসে আমান তাদের কাছে রেস্টুরেন্ট হস্তান্তর করেন এবং এপ্রিল থেকে রেস্টুরেন্টের ভাড়া প্রতি মাসে আড়াই লাখ ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ পরিশোধ করেছেন তিনি। ভবনের মালিক তাদের নামে ভাড়া জমা নিয়ে রসিদও দেন।"
ওয়াইএন সেন্টারের এজিএম মুহাম্মাদ সাকিব উদ্দোজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত মে মাসে ভাড়া হিসেবে আড়াই লাখ টাকা ববি ও বাশার পরিশোধও করেছেন। তবে তারা ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে বলে ভুয়া রশীদ দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন।"
এ বিষয়ে ববি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "আমানের কাছ থেকে রেস্টুরেন্ট বুঝে নিয়ে ডেকোরেশন পরিবর্তনের কাজ শুরু করেন, যাতে প্রায় ১ মাস সময় লাগে। ডেকোরেশনে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়।"
তার ভাষ্য, "আমরা রেস্টুরেন্ট পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করি এবং ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য আমরা ভবনের মালিক শাহিনা ইয়াসমিন ও জাওয়াদ আল মামুনকে চুক্তিপত্র, ফায়ার সেফটি ও বাণিজ্যিক অনুমতির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়ার অনুরোধ করি।
"আমরা যখন ট্রেড লাইসেন্স করতে এসব কাগজপত্র চেয়েছি তখন থেকে হঠাৎ করেই পূর্বের রেস্টুরেন্ট মালিক আমান, মালিক শাহিনা ইয়াসমিন, জাওয়াদ, ভবনের দায়িত্বে থাকা জয়, সাকিবসহ অন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাদের হয়রানি শুরু করেন। প্রথমে আমান তাকে পরিশোধ করা ১৫ লাখ টাকার বিষয়ে অস্বীকার করেন। যদিও তিনি ১৫ লাখ টাকা ক্যাশ বুঝে নিয়ে চাবি হস্তান্তর করেন।"
হয়রানির পাশাপাশি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ওয়ান গ্রুপ থেকে ‘সন্ত্রাসী ও লাঠিয়াল বাহিনী’ নিয়ে রেস্তোরাঁয় এসে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেন তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে বিপদের আশঙ্কা দেখে তিনি পরামর্শ করতে সিটি করপোরেশনেও যান বলে দাবি করেন। বলেন, "সিটি কর্পোরেশন থেকে জানতে পারি যে, উক্ত বিল্ডিংয়ের কোনো রকম বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি নেই। এ জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেইলি রোডে রেস্টুরেন্টে আগুন লাগার পর এই বিল্ডিংটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে শাহিনা বেগম তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম সরিয়ে ফেলার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিল্ডিং খোলেন।"
ববি অভিযোগ করে বলেন, "আমান, শাহিনা ও জাওয়াদ মিলে আমাদের সঙ্গে এক ভয়াবহ প্রতারণা করেছেন। তারা অবৈধ রেস্টুরেন্ট বাঁচাতে না পারার ভয়ে বিক্রি করে টাকা তুলে নেওয়ার ফাঁদ পাতেন। সেই ফাঁদে আমাদের ফেলা হয়েছে।“
ববি গত ২৩ জুন মারামারির ঘটনার প্রেক্ষিত এবং ওই দিনের ঘটনাও তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পরও গুলশানের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কীভাবে এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলে তা বোধগম্য নয়। তাদের কারা সহায়তা করে তাও অনুসন্ধান করা দরকার।
চুরি ও মারপিটের মামলার পর নায়িকা ববির পাল্টা মামলা