“কানেক্টিভিটিতে আমাদের আপত্তি নেই। বাংলাদেশ কি পেল… সেটাই হচ্ছে প্রধান। আমরা তো এখানে কিচ্ছু পাইনি”, বলেন তিনি।
Published : 01 Jul 2024, 06:48 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যে ভারতের কাছে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার বিকালে শেরেবাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নতুন সভাপতিকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ভারতের সঙ্গে রেল করিডোরসহ বিভিন্ন সমঝোতা সম্পর্কে সরকার জনগণের কাছে ‘মিথ্যাচার’ করেছে। তারা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের কাছে কখনও সত্য কথা বলে নাই। সব সময় ‘প্রতারণার’ আশ্রয় নিয়েছে, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে তারা বোকা বানানোর চেষ্টা করেছে।”
“এই সমঝোতাগুলোর অর্থই হচ্ছে যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে নির্ভরশীল করে ফেলবে ভারতের কাছে… এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে।”
বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারত তার দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যোগাযোগ করলে সেটি বাংলাদেশের কোনো কাজে আসবে না বলেও দাবি করেন ফখরুল। বলেন, “অন্যান্য বিষয়গুলো… আকাশ-স্থল-নৌপথ সবখানে তারা (সরকার) আজকে তাদেরকে (ভারত) পার্টনারশিপে দিয়ে দিয়েছে।
“পার্টনারশিপে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কানেক্টিভিটিতে আমাদের আপত্তি নেই। বাংলাদেশ কি পেল… সেটাই হচ্ছে প্রধান। আমরা তো এখানে কিচ্ছু পাইনি।”
বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদী বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি না হওয়ার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি নেতা। বলেন, “আমাদের সীমান্তে হত্যা বন্ধ হচ্ছে না, আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি আছে তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
“আমরা সমঝোতা-চুক্তি নিয়ে যেসব কথা বলছি, সেটা সত্য কথা বলছি। আমরা কোনো ষড়যন্ত্রের কথা বলছি না। আমরা বলছি, এই ‘অবৈধ সরকার’, তারাই আজকে চক্রান্ত করছে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করে ফেলার।”
‘জঙ্গিবাদের নামে বিরোধীদের নির্যাতন’
মির্জা ফখরুলকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন রাখেন ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা নিয়ে।
এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “হোলি আর্টিজানের বিষয়টা আমরা কনডেম করেছি, যে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা, আমরা আন্তর্জাতিক, জাতীয় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে।
“ কিন্তু এই সরকার যেটা করেছে, তারা জঙ্গিবাদের নাম করে তাদের বিরোধী পক্ষকে হয়রানি করেছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদেরকে কারাগারের নিক্ষেপ করেছে।”
এর আগে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নতুন সভাপতি জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে আইনজীবীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল।
ফোরামের সহসভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং মহাসচিব কায়সার কামাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, খোরশেদ আলম, ইকবাল হোসেন, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, সগীর হোসেন লিওনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ৯ জুন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী মারা যান। এরপর সেই পদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীনকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি।
খালেদার মুক্তিতে আইনি লড়াই: জয়নাল আবেদীন
জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের নতুন সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেছেন, আদালতে আইনি লড়াই করেই তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করবেন।
তিনি বলেন, “দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আমরা আজকে শপথ নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমরা চেষ্টা করব বিচার বিভাগের মাধ্যমেই আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করার জন্য এবং সে জন্য সকল আইনজীবী প্রস্তুত হয়ে আছেন।”
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদণ্ড হলে
এর বিরুদ্ধে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। অন্যদিকে সাজা বাড়ানোর আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্ট বিএনপি নেত্রীর আপিল খারিজ করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন গ্রহণ করে সাজা ১০ বছর করে। এরপর সেই রায়ের বিরুদ্ধে আর আপিল বিভাগে যায়নি বিএনপি।
একই মাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি নেত্রীর ৭ বছরের সাজা হয়, সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টেই আপিল হয়নি।
পরে বিএনপি নেত্রীর স্বজনদের আবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতায় দুই মামলার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করলে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তাকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।
বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার তাদের নেত্রীকে মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানানো হলেও তারা আদালতে যায়নি আর।